‘আধুনিকতা ও রবীন্দ্রনাথ’ বইটির সময় আমি স্বপনদার সঙ্গেই পার্ক সার্কাসে আইয়ুবের বাড়িতে, ৫ নম্বর পার্ল রোডে গিয়েছি। বুদ্ধদেব বসুর বাড়িতে যেমন একটা পরিশীলিত সৌন্দর্যের ছাপ ছিল, আইয়ুবের বাড়িতেও ঠিক তেমনই ছিমছাম সৌন্দর্য দেখেছিলাম। ঘরে বড়-বড় আলমারিতে সুন্দরভাবে সাজানো বই। অতিথি আপ্যায়নও চমৎকার ছিল। তবে প্রথমদিন গিয়েই বুঝেছিলাম এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব গৌরীদির– গৌরী আইয়ুবের। আমি যখন আবু সয়ীদ আইয়ুবের কাছে যাওয়া শুরু করলাম তখন আইয়ুব বেশ অসুস্থ।
১২.
প্রকাশনা শুরুর বছরে বেদুইন, শ্রীঅভিজিৎ-এর নন-ফিকশন বই ছাপলেও, প্রথম থেকেই ভেবে রেখেছিলাম, প্রবন্ধের ভালো বই পেলে তা-ও ছাপব। শুরুর দিন থেকে আমাদের প্রকাশনার অন্যতম স্তম্ভ স্বপনদাকে (স্বপন মজুমদার) সে-কথা বলেও রেখেছিলাম। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই স্বপনদা একদিন দোকানে এসে জানালেন উচ্চমানের একখানা প্রবন্ধের বই আমরা পেতে পারি। যদিও বইটা একেবারে আনকোরা নতুন নয়। অন্য একটি প্রকাশনী থেকে বেরনোর পর ততদিনে পুরস্কৃতও হয়েছে। কিন্তু আমরা চাইলে বইটি নতুনভাবে প্রকাশ করতে পারি। স্বাভাবিকভাবেই আমি লেখকের নাম জিগ্যেস করলাম। উত্তরে তিনি যা বললেন, তাতে আমি যথেষ্ট উল্লসিতই হয়েছিলাম। আবু সয়ীদ আইয়ুব-এর লেখা কোনও প্রবন্ধের বই ছাপা যে-কোনও প্রকাশনার পক্ষেই গর্বের। তাই আমি আর বেশি কিছু না ভেবেই জানতে চাইলাম, কবে হাতে কপি পাব? স্বপনদা বললেন ‘আধুনিকতা ও রবীন্দ্রনাথ’ বইটির ভারবি সংস্করণের তুলনায় দে’জ সংস্করণে কিছু বদল হবে। তবে পাণ্ডুলিপি পেতে বেশি দেরি হবে না। ‘ভারবি’ থেকে ‘আধুনিকতা ও রবীন্দ্রনাথ’ বইটি ১৯৬৮ সালে প্রথম বেরয়।
পরের বছরই বইটি রবীন্দ্র পুরস্কার পায়, আর আমরা যখন সে-বইয়ের নতুন সংস্করণের কাজ করছি তখন ‘আধুনিকতা ও রবীন্দ্রনাথ’ ১৯৭০ সালের সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পায়। বইটির ‘দ্বিতীয় পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত’ আমরা প্রকাশ করলাম মার্চ ১৯৭১ সালে। প্রচ্ছদ এঁকে দিলেন পূর্ণেন্দু পত্রী। তখনও দে’জ পাবলিশিং-এর ঠিকানা আমাদের শিয়ালদার বাড়ির ঠিকানাটাই– ৩১/বি মহাত্মা গান্ধী রোড। বই ছেপেছিলাম বিধান সরণিতে সত্যনারায়ণ প্রিন্টিং ওয়ার্কস্ থেকে। মলাট ছাপা হয়েছিল রবিধন দত্তের ইম্প্রেসন্ হাউস থেকে। সেসময় দে’জের বেশিরভাগ মলাট রবিদাই ছাপতেন। দে’জ সংস্করণে বইটির শেষে ‘কলকাতা’ পত্রিকায় ১৯৬৮-র জুলাই মাসে লেখা কবি অরুণকুমার সরকারের একটি ‘সমালোচনা’ ছাপা হয় এবং লেখকের উত্তর সংযোজিত হয়। আইয়ুব বইটি উৎসর্গ করেছিলেন তাঁর বন্ধু বুদ্ধদেব বসু-কে। এই বইটাই শুধু নয়, এর পরেও আবু সয়ীদ আইয়ুবের যে ক’-টি বই আমি ছেপেছি তার সমস্ত কাজে স্বপনদা সক্রিয়ভাবে আমার পাশে ছিলেন। স্বপনদার কাছেই শুনেছি তাঁর সঙ্গে আইয়ুবের দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কথা। তিনি যখন ছাত্র তখন তাঁর মাস্টারমশাই নরেশ গুহ প্রথম তাঁকে আইয়ুবের কাছে নিয়ে যান। তখনও আইয়ুব ‘কোয়েস্ট’ পত্রিকা সম্পাদনা করছেন।
স্বপনদা সেই পত্রিকা সহ সম্পাদনার দায়িত্বও সামলেছেন এক সময়। সম্ভবত ১৯৬৮ সালে আইয়ুব ‘কোয়েস্ট’ পত্রিকার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর থেকে স্বপনদাকেই আইয়ুবের সাহিত্য-সচিব বলা চলে। আর স্বপনদার কাজ মানে প্রেস ঠিক করা থেকে শুরু করে টাইপ নির্বাচন, কাগজ বাছাই, বাঁধাইকর ঠিক করা– সবটাই। আর এর মাঝখানে আছে প্রুফের চুলচেরা বিশ্লেষণ। ‘বিশ্লেষণ’ কথাটা ইচ্ছে করেই বলছি কেননা স্বপনদার হাতে প্রুফ মানে তা প্রায় নির্ভুল হয়ে ছাপা হবে। ‘আধুনিকতা ও রবীন্দ্রনাথ’ বইটির সময় আমি স্বপনদার সঙ্গেই পার্ক সার্কাসে আইয়ুবের বাড়িতে, ৫ নম্বর পার্ল রোডে গিয়েছি। বুদ্ধদেব বসুর বাড়িতে যেমন একটা পরিশীলিত সৌন্দর্যের ছাপ ছিল, আইয়ুবের বাড়িতেও ঠিক তেমনই ছিমছাম সৌন্দর্য দেখেছিলাম। ঘরে বড়-বড় আলমারিতে সুন্দরভাবে সাজানো বই। অতিথি আপ্যায়নও চমৎকার ছিল। তবে প্রথমদিন গিয়েই বুঝেছিলাম এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব গৌরীদির– গৌরী আইয়ুবের। আমি যখন আবু সয়ীদ আইয়ুবের কাছে যাওয়া শুরু করলাম তখন আইয়ুব বেশ অসুস্থ। একেবারেই ভগ্নস্বাস্থ্য যাকে বলে, এমনও হয়েছে তিনি শুয়ে-শুয়েই আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। আবার যেদিন একটু ভালো থাকতেন সেদিন চেয়ারে বসে কথাবার্তা চলত। সেই সময় তাঁদের পুত্র পূষনকেও ওই বাড়িতে দেখেছি। আইয়ুব বই সংক্রান্ত যাবতীয় নির্দেশ স্বপনদাকেই দিতেন। আমি সেইমতো কাজ করাতাম।
আমরা আবু সয়ীদ আইয়ুবের দ্বিতীয় যে-বইটি করেছিলাম সেটি হল ‘পান্থজনের সখা’। এই বইয়ের ব্লার্বে বইটির পরিচিতি লিখতে গিয়ে স্বপনদা যা লিখেছিলেন সেটা উদ্ধৃত না করলে অন্যায় হবে। বইয়ের পরিচিতি, বিশেষ করে প্রবন্ধ-বইয়ের পরিচিতি কীভাবে লিখতে হয় তা এই ছোট্ট অংশ থেকে শেখা যায়,
‘‘আধুনিকতা ও রবীন্দ্রনাথ’ গ্রন্থে আধুনিকতার দু’টি দুর্মর সমস্যার দৃষ্টিকোণ থেকে লেখক রবীন্দ্রকাব্যে আধুনিকতার বিচার করেছিলেন। সেই বইয়ের ভূমিকায় লেখক নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন ‘দুই বিদ্যাক্ষেত্রের মাঝখানকার আল ধ’রে যে-কৃষ্টিজীবী হাঁটতে চায়’ ব’লে। প্রবন্ধকারের এই চরিত্র আরও দীপ্যমান হ’য়ে প্রকাশ পেয়েছে ‘পান্থজনের সখা’র পাতায়-পাতায়। এই বইয়ের বিষয় জীবনের দুই মৌল মূল্যবোধ : প্রেম ও ধর্ম; এবং পটভূমি রবীন্দ্রনাথের কবিতা গান ও নাটকের বিস্তৃততর পরিসর। এ-বয়সেও তাঁর লেখায় আমরা অনেক অভূত চিন্তার সূত্র পাবো, কারণ রবীন্দ্রনাথের পান্থের মতো তাঁরও ‘নতুন-কিছু শিখবার বুঝবার ভাববার ও অনুভব করবার’ অবকাশ ও স্পৃহা আজও হারায়নি।’’
কোনও বইকে ভালো করে আত্মস্থ না করলে এমন পরিচিতি লেখা যায় না। বইয়ের ব্লার্ব লেখাটাও যে একটা শিল্প সেটা অধিকাংশ মানুষই বোঝে না। তাই বাংলা প্রকাশনায় ‘পরিচিতি’র নামে অসংলগ্ন কিছু তথ্য জড়ো করে দেওয়ার রেওয়াজ এখনও আছে। ‘পান্থজনের সখা’ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭৩ সালে গান্ধী-জয়ন্তীর দিন। বইটি তিনি উৎসর্গও করেছিলেন তাঁর বন্ধু, পান্নালাল দাশগুপ্তকে, যিনি প্রথমজীবনে সশস্ত্র বিপ্লবে বিশ্বাসী হলেও পরবর্তীকালে মহাত্মা গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে পল্লী-উন্নয়নের কাজে শামিল হয়েছিলেন। ‘পান্থজনের সখা’রও মলাট পূর্ণেন্দুদার করা। এই বইটিও ছেপেছিলাম সত্যনারায়ণ প্রিন্টিং ওয়ার্কস্ থেকে। এখন বইগুলোর প্রথম সংস্করণ হাতে নিয়ে দেখছি ‘আধুনিকতা ও রবীন্দ্রনাথ’-এর প্রিন্টার্স লাইনে মুদ্রক হিসেবে নিশীথকুমার ঘোষের নাম ছাপা আছে আর ‘পান্থজনের সখা’য় রতিকান্ত ঘোষের। আমি কিন্তু ওই ছাপাখানায় বইয়ের ব্যাপারে চিরকাল রতিকান্তবাবুর সঙ্গেই কথা বলেছি।
আবু সয়ীদ আইয়ুবের দুটো প্রবন্ধের বই প্রকাশ করার পর আমি পেলাম তাঁর করা একটা অনুবাদ কবিতার বই– ‘গালিবের গজল থেকে’। ১৯৭৬ সালে ছাপা এই বইটির প্রচ্ছদও পূর্ণেন্দু পত্রীর। বইটি ছেপেছিলাম ২ গণেন্দ্র মিত্র লেনের ‘প্রিণ্টেক’ প্রেস থেকে। এই প্রেসটি চালাতেন শিবনাথ পাল, তিনি আবার সম্পর্কে স্বপনদার ভায়রা-ভাই। ছোট্ট ক্রাউন সাইজের বইটিতে আইয়ুবের করা অনুবাদের সঙ্গে ছিল গৌরীদির লেখা সংক্ষিপ্ত ‘কবিজীবনী’ও। আইয়ুব বইটি উৎসর্গ করেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক নরেন্দ্রনাথ মিত্রের স্মরণে তাঁর স্ত্রী শোভনা মিত্র-কে।
এরপর আবার আইয়ুবের লেখা একটা প্রবন্ধের বই পেলাম– ‘পথের শেষ কোথায়’। ১৯৭৭ সালের মে মাসে প্রকাশিত এ-বইয়েরও প্রচ্ছদশিল্পী পূর্ণেন্দু পত্রী এবং এটিও সত্যনারায়ণ প্রিন্টিং ওয়ার্কস্ থেকে ছাপা। বইটির মুখবন্ধ হিসেবে ‘ভাষা শেখার তিন পর্ব এবং প্রসঙ্গত’ নামে একটি ছোট্ট আত্মজীবন-নির্ভর লেখা ছাপা হয়। বইয়ের ‘সংযোজন’ অংশে আবার ইংরেজিতে লেখা দুটি প্রবন্ধ ছাপা হয়েছিল। এই বইটির নাম ‘পথের শেষ কোথায়’ হলেও টাইটেল পেজে লেখা হয়েছিল, ‘পথের শেষ কোথায়/ এবং/ পূর্ব প্রকাশিত কয়েকটি প্রবন্ধ (১৯৩৪-৬৫)’। আইয়ুবের জীবদ্দশায় আমরা তাঁর এই ক’-টি বই-ই প্রকাশ করতে পেরেছিলাম। যেহেতু তাঁর বইয়ের খুঁটিনাটি সবই স্বপনদা দেখতেন, সম্ভবত সেজন্যই পুরোনো চিঠির বান্ডিলে দেখছি তাঁর লেখা কোনও চিঠিই নেই। তবে ১৯৮২ সালের ২১ ডিসেম্বর আবু সয়ীদ আইয়ুবের মৃত্যুর পর গৌরীদি আমাকে বিভিন্ন সময়ে অনেকগুলো চিঠি লিখেছেন। সবচেয়ে পুরনো যে চিঠিটা পাচ্ছি সেটি ১৯৮৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর লেখা। ইনল্যান্ড লেটারে। সুন্দর হাতের লেখায় ৫ নম্বর পার্ল রোডের বাড়ি থেকে তিনি লিখেছেন–
‘স্নেহভাজনেষু,
‘আধুনিকতা ও রবীন্দ্রনাথ’ সম্ভবত বাঁধাই হতে চলে গেছে। নতুন মুদ্রণের কপি যখন পাঠাবেন, তখন দয়া করে ৫ কপি ‘পান্থজনের সখা’-ও পাঠাবেন। ‘গালিবের গজল থেকে’ নতুন মুদ্রণের পাঁচ কপি পেয়েছি। ধন্যবাদ। শেষের দিকের প্রুফটা আমি পাইনি, বিশেষ করে উর্দূ মূল অংশটা আমি দেখতে চেয়েছিলাম। সে আর দেখা হোলো না। ছোটখাট ভুল বেশ কিছু থেকে গেছে– স্বপনকে তার একটি তালিকা পাঠিয়েছি। পরবর্তী মুদ্রণে যাতে এগুলি না থাকে তার জন্য এখনই একটা কপি সংশোধন করে রাখা দরকার। অবশ্য পরবর্তী মুদ্রণের তো অনেক দেরী আছে। কারণ এবার নাকি আপনারা ২২০০ কপি ছাপিয়েছেন শুনলাম। আইয়ুব ‘মীর’ নামে আর একজন কবির– একমাত্র যাঁকে গালিবও তাঁর চেয়ে বড় বলে স্বীকার করেছেন– বেশ কিছু শের অনুবাদ করেছিলেন। প্রায় ৬০টা ‘দেশ’ শারদীয়া সংখ্যায় একবার প্রকাশিত হয়েছিল। আরো কিছু অপ্রকাশিত ও অসমাপ্তও কিছু আছে। এবার কি সেগুলি নিয়ে আর একটি বই করবেন ? আমি গত ৩/৪ মাস ধরে উর্দূটা আর একবার ঝালাই করে নিচ্ছি যাতে মীরের অনুবাদগুলি সম্পূর্ণ করে নিতে পারি। এই ব্যাপারে ব্র্যাবোর্ণ কলেজের যে অধ্যাপিকা আমাকে পড়াচ্ছেন তিনিও সাহায্য করবেন। আমরা হয়তো ১ লা বৈশাখ নাগাদ মীরের অনুবাদ প্রকাশ করতে পারবো। আপনি রাজি আছেন তো ? জানাবেন।…’
এই রকম প্রস্তাব পেয়ে রাজি না হওয়ার তো কোনও প্রশ্নই ওঠে না। তবে মীর তকী মীরের অনুবাদ ‘মীরের গজল থেকে’ বইটি বেরুতে-বেরুতে ১৯৮৭-র জানুয়ারি হয়ে গেল। ‘গালিবের গজল থেকে’ বইটির মলাটের ছবি অবিকৃত রেখে শুধুই টাইপ ফেসে রং পালটে মলাট করলেন পূর্ণেন্দুদা।
অবশ্য এর মধ্যে গৌরী আইয়ুবের প্রথম গল্পের বই– ‘তুচ্ছ কিছু সুখ-দুঃখ’ প্রকাশ করি ১৯৮৬-র বইমেলায়। উৎসর্গের পাতায় গৌরীদি লিখেছিলেন– ‘আমার প্রথম সহৃদয় পাঠককে/স্মরণ করি–’। স্পষ্ট করে না লিখলেও আমার তো মনে হয় এই উৎসর্গ আবু সয়ীদ আইয়ুবকেই করা। বইটির সাড়ে ছ-লাইনের ভূমিকায় তিনি লিখেছেন– ‘…তেরো বছরে পনেরোটি গল্প সসংকোচে পাঠকের দরবারে হাজির করছি। গল্পগুলি আর একবার পড়তে গিয়ে প্রায় সেকেল লাগল– আর কোনো কারণে নয় যতটা inflation-এর কল্যাণে। আট আনা জোড়া কমলালেবু কেনা যখন বিলাসিতা ছিল সেটা কোন্ কাল ? মাত্র ছাব্বিশ বছর আগে। বিশ্বাস হয় না।’ ১৭ বছর পর বইটির দ্বিতীয় সংস্করণের সময় আরও পাঁচটি নতুন গল্প সংযোজিত হয়েছিল।
গৌরীদির সঙ্গে এরপর থেকে সম্পর্কটাও অনেক সহজ হয়ে গেল। এমনকী, তিনি যে আমাদের ‘জাগরণ সংঘ’-এর পুজোর চাঁদাও দিতেন তা অন্তত দুটো চিঠিতে দেখছি। ১৯ এপ্রিল, ১৯৮৫-র একটি চিঠিতে তিনি লিখছেন,
‘সুধাংশু স্নেহভাজনেষু,
গতকাল কার্তিক এসে চেক দিয়ে গেছে। সেজন্য ধন্যবাদ জানাই। আমার আরো আগেই চিঠি লেখা উচিত ছিল, ইচ্ছাও ছিল। পূজোর [য.] নিমন্ত্রণ পত্র পেয়েছিলাম, টাকা পেয়েছিলাম, চাঁদা পাঠিয়েছিলাম– সবই নূতন একজন লোকের হাতে। নূতন বলে তাকে একটা কথা বলবো কিনা ঠিক করতে না পেরে বলিনি। সেজন্য এখন লিখছি। ‘পান্থজনের সখা’র শেষতম সংস্করণের কোনো কপি আমি পাই নি। আমি ৪/৫ কপি চাই। সুবিধামতন পাঠাবেন। গতকাল কার্তিক বলল ইতিমধ্যে আপনি jaundice-এ ভুগে উঠেছেন। আশাকরি এখন সুস্থ আছেন। কলকাতায় এখন যা hepatitis-এর প্রকোপ– অবশ্যই সাবধানে থাকবেন। আপনাদের কাজকর্ম এখন খুব বেড়ে গেছে, সুনামও হয়েছে। তার চাপ সামলাতে নিশ্চয়ই খুব পরিশ্রম হয় এবং ব্যস্ত থাকেন। পয়লা বৈশাখে তো আমি যেতে পারি না– তাই দেখা হয় না। সম্ভব হলে একবার আসবেন। সপরিবারে ভালো থাকুন এই কামনা করি।’
চিঠিতে ‘কার্তিক’ মানে নিশ্চয়ই কার্তিকদা, কার্তিক জানা। আর নতুন লোকটি কে তা আজ আর নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। বঙ্কিমও হতে পারে, বা অন্য কেউ। সে-সময় আমি যে খুবই ভুগেছিলাম সেকথা মনে আছে। আজকে এই চিঠিটা পেয়ে তখন প্রকাশনা নিয়ে আমার তুমুল ব্যস্ততার দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেল। প্রকাশনা দাঁড় করাতে গেলে পরিশ্রমের যে বিকল্প নেই, তা তো আমি শুরুতেই বুঝে গিয়েছিলাম। কিন্তু শরীর মাঝে-মাঝে বেঁকে বসে। এই জন্ডিসের ব্যাপারটাও সেরকমই ছিল।
গৌরীদির চিঠিগুলোর মধ্যে ১৩ অগাস্ট ১৯৮৮ সালে আমার লেখা একটা চিঠির খসড়া খুঁজে পেলাম। তাতে লিখেছিলাম–
‘শ্রদ্ধেয়া গৌরীদি,
পত্রে আমার প্রণাম নেবেন।… ইতোমধ্যে শ্রদ্ধেয় স্বপনদার কাছে শুনলাম আপনি একটি অনুবাদ কাজে ব্যস্ত আছেন। বইটি আমি প্রকাশে আগ্রহী। স্বপনদাকেও তা জানিয়েছি। অনুবাদ শেষ হলে যদি অনুগ্রহ করে আমাকে জানান, তাহলে পাণ্ডুলিপি আনবার ব্যবস্থা করব।’
এই পাণ্ডুলিপি তৈরি হতে বেশ খানিকটা সময় লেগেছিল। ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৮৯ তিনি একটি চিঠিতে আমাকে লিখেছিলেন–
‘সুধাংশু স্নেহভাজনেষু,
কি হল ? আমি manuscript তৈরী করে বসে আছি। কবে আসবেন অরিজিৎকে নিয়ে ? গত সপ্তাহটা এত বৃষ্টি বাদলা গেল বলে আর চিঠি লিখি নি।
কাল থেকে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত রোজই বিকেলে আমি বাড়ি আছি। তাই আমাকে জানাবার দরকার নেই– যেদিন সুবিধা হবে ওকে নিয়ে চলে আসবেন।আপনারা এসে বুঝে নিলে নিশ্চিন্ত হই।–
পূজোর [য.] আগে কি কাজ শুরু করা সম্ভব হবে ? নয়ত এই বছরের মধ্যে তো বই তৈরী হবার আশা কম ? যাই হোক অরিজিতের সঙ্গে please যোগাযোগ করুন। শুভেচ্ছা জানাই–
গৌরীদি’
সেই পাণ্ডুলিপি থেকে বই হয় ‘দূর প্রদেশের সংকীর্ণ পথ’ নামে। এখানে অরিজিৎ মানে প্যাপিরাস প্রকাশনীর কর্ণধার অরিজিৎ কুমার। অরিজিৎদা আবার স্বপনদার শ্যালক। এই বইটি আমাদের অন্য অনেক বইয়ের মতো তাঁর ৭ নম্বর সৃষ্টিধর দত্ত লেনের টেক্নোপ্রিন্ট থেকে ছাপা হয়েছিল। ‘দূর প্রদেশের সংকীর্ণ পথ’ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৯০-এর বইমেলায়। মাৎসুও বাশোউ-এর লেখা জাপানি ভাষা থেকে ক্যোউকা নিওয়া-র সঙ্গে যৌথভাবে অনুবাদ করেছিলেন গৌরীদি। বইটির মলাটও দু’-জনের যৌথশিল্প– দেবব্রত ঘোষ আর য়োসিকো ওকাযাকি। ক্রাউন সাইজের বইটির ব্যাক-কভারে লেখা হয়েছিল– ‘১৯১৬ সালে রবীন্দ্রনাথ জাপানী কাব্যের নমুনা দিতে গিয়ে ‘জাপানযাত্রী’ গ্রন্থে দুটি হাইকুর অনুবাদ পেশ করেছিলেন। কিন্তু ‘কবিতিকা’-দুটির স্বাদ পেলেও কবির সঙ্গে তখন পরিচয় হয়নি বাঙালী পাঠকের। এতকাল পরে সেই কবি মাৎসুও বাশোউ স্বনামে প্রকাশিত হলেন বাংলা ভাষায়। তাঁর ‘ওকু নো হোসোমিচি’ তিন শত বৎসর ধরে জাপানের প্রতিটি সাক্ষর মানুষকে অভিভূত করে চলেছে। যে ‘দূর প্রদেশের সংকীর্ণ পথ’-এর কাহিনী এটি, সেই পথে ভ্রমণ করতে গিয়েছিলেন বাশোউ ১৬৮৯ সালে। শোনা যায় ঐ একই বৎসরে কলকাতার পত্তন করেছিলেন জব চার্ণক।’ সম্ভবত এই লেখাটিও স্বপনদার তৈরি করে দেওয়া। আজকাল অবশ্য শুনি কলকাতার জন্ম ১৬৯০ সালে।
স্বপনদার সঙ্গে গৌরীদির স্নেহের সম্পর্ক আজীবন অটুট ছিল। ১৩ জুলাই, ১৯৯০-এ লেখা একটা চিঠিতে তিনি আমাকে লিখেছেন–
‘…আমি পয়লা জুলাই ফিরে এসে শুনলাম স্বপনরা একদিন আমার সঙ্গে দেখা করতে এসে জেনেছিল যে আমি পয়লা ফিরব। ফিরে আসার পর রোজই আশা করছি ওরা আসবে। ফোন-ও কাজ করছে না যে অরিজিৎকে জিজ্ঞেস করবো। আপনি একটু পুনদেওর হাতে লিখে জানাবেন যে স্বপন তার নিজের flat-এই আছে কিনা এবং কবে ফিজি ফিরে যাচ্ছে। এটা খুবই জরুরী।…’
প্রসঙ্গত জানাই স্বপনদা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লিয়েন নিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র ফিজি-র রাজধানী সুভা-তে ইন্ডিয়ান কালচারাল সেন্টার-এর ডিরেক্টর হয়ে ১৯৮৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সপরিবার পাড়ি দেন। ফিজি-র রাজনৈতিক পরিস্থিতি তার আগে থেকেই ভালো ছিল না। ১৯৮৭ সালে সেদেশে ছোটখাটো মিলিটারি অভ্যুত্থান হয়েছিল বলে শুনেছিলাম। কিন্তু স্বপনদারা ওখানে থাকাকালীনই ১৯৯০ সালে পুরোদস্তুর মিলিটারি শাসন চালু হয়ে যাওয়ায় তাঁরা সেখান থেকে ফিরে আসেন। সেদেশে ইন্ডিয়ান কালচারাল সেন্টার-সহ ভারতীয় দূতাবাস বন্ধ করে দেওয়া হয়। গৌরীদির চিঠিতে সেই রাজনৈতিক ডামাডোলের সময় নিকটজনের উদ্বেগ ধরা পড়েছে। এরপরও স্বপনদাকে ভারত সরকার সুরিনাম-এ পাঠাতে চেয়েছিল, কিন্তু ততদিনে মিলিন্দ বড় হয়ে যাওয়ায় তার পড়াশোনার ক্ষতি হবে বুঝে স্বপনদা আর সে-দায়িত্ব নেননি।
১৩৯৮-এর (১৯৯১) ২৫ বৈশাখ প্রকাশ করলাম আবু সয়ীদ আইয়ুবের ‘ব্যক্তিগত ও নৈর্ব্যক্তিক’। পূর্ণেন্দুদার প্রচ্ছদে বইটি ছাপা হল শিবনাথবাবুর প্রিণ্টেক থেকে। এই বইয়ের ‘প্রকাশকের নিবেদন’ অংশে চোখ বোলালে বইটির প্রকাশ-ইতিহাসের সবটাই জানা যায়– ‘পুরনো লেখা পরিমার্জনা না-ক’রে ছাপানোয় অধ্যাপক আবু সয়ীদ আইয়ুবের আপত্তি ছিল। আবার অভাবও ছিল অতটা অবকাশের। কোনো-কোনো অনুরাগীর উপরোধে ‘পথের শেষ কোথায়’ বইতে কয়েকটি পুরনো রচনা পুনর্মুদ্রণে সম্মতি দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও আরও অনেক লেখা র’য়ে গিয়েছিল, ক্রমেই যেগুলোর গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা বেড়ে যাচ্ছে ব’লে আমাদের বিশ্বাস। এমনই কিছু রচনা আর তিনটি নতুন প্রবন্ধ নিয়ে সংগ্রথিত হ’ল এই বই।’ এই বইয়ের পরিশিষ্টে অধ্যাপক বিকাশ চক্রবর্তীর একটি লেখা সংযোজিত হয়, ‘আবু সয়ীদ আইয়ুব ও ট্র্যাজিক চেতনা’। বলাই বাহুল্য, গ্রন্থনার যাবতীয় কাজ গৌরীদি আর স্বপনদাই করেছিলেন।
গৌরীদির কথা লিখতে বসে আরেকটা প্রসঙ্গ না বললে অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। তাঁর সঙ্গে ‘মংপুতে রবীন্দ্রনাথ’ ও ‘ন হন্যতে’র লেখক মৈত্রেয়ী দেবীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তাঁরা একসঙ্গে সামাজিক কাজও করেছেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ওপার বাংলা থেকে এপারে চলে আসা অনাথ ছিন্নমূল শিশুদের জন্য কল্যাণীতে মৈত্রেয়ী দেবী ‘খেলাঘর’ নামে একটি আশ্রম গড়ে তোলেন। সরকারি সহায়তাও পাওয়া গিয়েছিল ‘খেলাঘর’-এর জন্য।
কিন্তু যুদ্ধশেষে ওই বাচ্চাদের দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ আসে। তাই পরে মধ্যমগ্রামের বাদু-তে নতুন করে ‘খেলাঘর’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৯০-এ মৈত্রেয়ী দেবীর মৃত্যুর পর গৌরীদি ‘খেলাঘর’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠানটিকে টিকিয়ে রাখতে অনেক লড়াই করেছেন। শুনেছি ‘খেলাঘর’ আজও স্বমহিমায় বর্তমান। গৌরীদির সেসময়ের চিঠির অনেক ক-টি ‘খেলাঘর’-এর প্যাডেই লেখা। তাতে দেখছি ‘খেলাঘর’-এর পৃষ্ঠপোষক ছিলেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর। এই ‘খেলাঘর’-এর বৃক্ষরোপণ উৎসব থেকে শুরু করে বসন্তোৎসব– যেকোনও অনুষ্ঠানেই তিনি আমাকে দুই পুত্র-সহ যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাতেন। ‘খেলাঘর’-এ শিশুদের জন্য একটি লাইব্রেরিও তৈরি করা হয়েছিল। গৌরীদি আমাকে সেকথা জানাতে আমি দে’জ পাবলিশিং-এর বেশ কিছু ছোটদের উপযোগী বই সেই লাইব্রেরির জন্য পাঠিয়েছিলাম। পরে আবার একটি চিঠিতে দেখছি তিনি সেই বইগুলির একটি তালিকা করে একটা চিঠিও দিয়েছেন এবং অনুরোধ করেছেন আরও কিছু বই পাঠানোর।
গৌরীদি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন ১৯৯৮ সালে। তারপর থেকে তাঁদের ছেলে পূষন আইয়ুব এবং পুত্রবধূ চম্পাকলি আইয়ুব সুচারুভাবে আবু সয়ীদ আইয়ুব এবং গৌরী আইয়ুবের লেখালিখি নিয়ে কাজ করে চলেছেন। ১৯৯৯ সালের বইমেলায় একসঙ্গে প্রকাশিত হয় ‘আধুনিক বাংলা কবিতা’ আর ‘পঁচিশ বছরের প্রেমের কবিতা’। দে’জ সংস্করণে প্রথমটির মলাট করেন অজয় গুপ্ত এবং দ্বিতীয়টির দেবনাথ নন্দী। ‘আধুনিক বাংলা কবিতা’ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৪০ সালে, আবু সয়ীদ আইয়ুব আর হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায়। এই বইটির দে’জ সংস্করণে কোনও পরিমার্জনা করা হয়নি। কিন্তু ‘পঁচিশ বছরের প্রেমের কবিতা’ ছাপার সময় নির্বাচিত কবিদের জন্মসাল অনুযায়ী কবিতাগুলি সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই বইটি তৈরির সময় শঙ্খদা [শঙ্খ ঘোষ] অনেক মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছিলেন। প্রসঙ্গত বলে রাখি, ‘পঁচিশ বছরের প্রেমের কবিতা’ ১৩৬৩ বঙ্গাব্দে সিগনেট প্রেস থেকে ডি কে, অর্থাৎ দিলীপকুমার গুপ্তের তত্ত্বাবধানে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।
২০১৪ সালে রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে আমরা প্রকাশ করেছি গৌরী আইয়ুবের রচনাসংগ্রহ– ‘আমাদের দুজনের কথা এবং অন্যান্য’ এবং ২০২২ সালে প্রকাশিত হয়েছে পূষন আইয়ুব ও চম্পাকলি আইয়ুবের সম্পাদনায় আবু সয়ীদ আইয়ুবের ‘রচনাসংগ্রহ’।
আজ ভাবতে বসে হঠাৎ খেয়াল করলাম আইয়ুব-পরিবারের সঙ্গে আমার সম্পর্ক অর্ধ শতাব্দীরও বেশি। আজ আমাদের মধ্যে আবু সয়ীদ আইয়ুব নেই, গৌরীদি নেই, স্বপনদাও নেই– কিন্তু তাঁদের হাতে গড়া বইগুলি বাংলা সাহিত্যে পঞ্চাশ বছর ধরে পাঠকের কাছে সমাদৃত হচ্ছে।
লিখন শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়
……………………… ইতি কলেজ স্ট্রিট-এর অন্যান্য পর্ব ……………………
পর্ব ১১: প্রেমের নয়, অপ্রেমের গল্প সংকলনের সম্পাদনা করেছিলেন সুনীল জানা
পর্ব ১০: ছোট্ট অপুকে দেখেই রঙিন ছবিতে ভরা টানটান গল্পের বই করার ইচ্ছে জেগেছিল
পর্ব ৯: চানঘরে গান-এ সত্যজিৎ রায়ের চিঠি থাকায় ব্যাপারটা গড়িয়েছিল কোর্ট কেস পর্যন্ত
পর্ব ৮: প্রকাশক-লেখকের কেজো সম্পর্কে বুদ্ধদেব গুহর বিশ্বাস ছিল না
পর্ব ৭: পুজো সংখ্যায় না-বেরনো উপন্যাস বই আকারে সুপারহিট
পর্ব ৬: মানবদার বিপুল অনুবাদের কাজ দেখেই শিশির দাশ তাঁর নাম দিয়েছিলেন– ‘অনুবাদেন্দ্র’
পর্ব ৫: সাতবার প্রুফ দেখার পর বুদ্ধদেব বসু রাজি হয়েছিলেন বই ছাপানোয়!
পর্ব ৪: লেখকদের বেঁচে থাকার জন্য অনেক কিছুই লিখতে হয়, প্রফুল্ল রায়কে বলেছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র
পর্ব ৩: পয়লা বৈশাখের খাতায় শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় মজাচ্ছলে লিখেছিলেন, ‘সুধাংশুরা রাজা হোক’
পর্ব ২: বাংলা মাসের সাত তারিখকে বলা হত ‘গ্রন্থতিথি’, বিজ্ঞাপনেও বিখ্যাত ছিল ‘৭-ই’
পর্ব ১: সত্তরের উথাল-পাথাল রাজনৈতিক আবহাওয়ায় আমি প্রকাশনার স্বপ্ন দেখছিলাম