রক্ষণশীল মুসলিম সমাজের ওপর জোর করে সমাজতন্ত্র চাপাতে গিয়ে হাফিজুল্লা আমিন যখন দেশবাসীর বিরাগভাজন হলেন এবং পরিণামে যে জনসাধারণ জাহির শাহের রাজতন্ত্রে অথবা দাউদ শাহের সুবিধাভোগী শ্রেণির রাজ্যশাসনেও সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন ছিল, তাদের থেকে তিনি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন। তখন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বরে আফগানিস্তানে সামরিক হস্তক্ষেপ করতে হল সোভিয়েত ইউনিয়নকে। তারপর থেকে দীর্ঘ দশ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের গলার কাঁটা হয়ে রইল আফগানিস্তান। সৈন্য অপসারণের পর, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর তার উত্তরাধিকারী রাশিয়ার কাছে এখন সে হয়ে আছে গোদের ওপর বিষফোড়া।
আফগান ট্র্যাজেডি
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান লেওনিদ ইলিচ ব্রেজ্নেভের নিজস্ব ক্ষৌরকার ছিল– থাকাই স্বাভাবিক। খোদ লেওনিদ ইলিচ ব্রেজ্নেভের ঘরে এসে সে তাঁর চুল ছাঁটত– সেটাও অবশ্য স্বাভাবিক। যতবার চুল ছাঁটতে আসত, ততবার তার একই প্রশ্ন ব্রেজ্নেভের কাছে: ‘আচ্ছা কমরেড লেওনিদ ইলিচ, আফগান যুদ্ধের খবর কী?’ প্রতিবারই ব্রেজ্নেভের উত্তর হত সংক্ষিপ্ত, দায়সারা গোছের। বারবার লোকটা একই প্রশ্ন করছে দেখে শেষটা ব্রেজ্নেভ চটেমটে গিয়ে লোকটাকে বললেন: ‘তবে রে হতভাগা পরামানিকের পো, বারবার সেই আফগানিস্তানের কথা, একই প্রশ্ন– ভেবেছিস কী ব্যাটাচ্ছেলে, অ্যাঁ?’ নাপিত সবিনয়ে বললে, ‘অপরাধ নেবেন না, কমরেড লেওনিদ ইলিচ, আমি দেখেছি যতবার আফগানিস্থানের কথা জিজ্ঞেস করি আপনাকে ততবারই আপনার মাথার চুল খাড়া হয়ে ওঠে, তাতে আপনার চুল ছাঁটতে বড় সুবিধে হয় আমার।’ এটা কোনও ঘটনা নয়, আটের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নে বহুল প্রচলিত একটি রসিকতা– চুটকি। তবে এর মধ্যে সত্য যা আছে, তা ওই বিভীষিকার অংশটিতে।
১৯৮৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত সেনাবাহিনীর অপসারণের ফলে সে-দেশে একদশকব্যাপী তার উপস্থিতির অবসান ঘটল। ঠান্ডা লড়াইয়ের শেষ পর্যায়ে ১৯৮৮ সালের ২৫ মে জেনেভা চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়া সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত শান্তির কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না আফগানিস্তানে।
রক্ষণশীল মুসলিম সমাজের ওপর জোর করে সমাজতন্ত্র চাপাতে গিয়ে হাফিজুল্লা আমিন যখন দেশবাসীর বিরাগভাজন হলেন এবং পরিণামে যে জনসাধারণ জাহির শাহের রাজতন্ত্রে অথবা দাউদ শাহের সুবিধাভোগী শ্রেণির রাজ্যশাসনেও সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন ছিল, তাদের থেকে তিনি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন। তখন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বরে আফগানিস্তানে সামরিক হস্তক্ষেপ করতে হল সোভিয়েত ইউনিয়নকে। তারপর থেকে দীর্ঘ ১০ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের গলার কাঁটা হয়ে রইল আফগানিস্তান। সৈন্য অপসারণের পর, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর তার উত্তরাধিকারী রাশিয়ার কাছে এখন সে হয়ে আছে গোদের ওপর বিষফোঁড়া। রাজনীতিতে অদূরদর্শিতার ফল কত সুদূরপ্রসারী হতে পারে, তার আরও একটি প্রমাণ।
১৯৭৩ সালে আফগানিস্তানে প্রাসাদ-ষড়যন্ত্রের ফলে জাহির শাহের রাজতন্ত্র উৎখাতের পর দাউদ শাহ সুবিধাভোগী শ্রেণির শাসন প্রবর্তন করলেন। পরবর্তীকালে সেই দাউদ শাহের পতন প্রতিবেশী আফগানিস্তানে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার সূচনা করলে সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজনৈতিক মহলে দুশ্চিন্তার তেমন কোনও কারণ দেখা দেয়নি, যেহেতু কাবুলে কমিউনিস্টরা এবং তাদের আফগান জনগণতান্ত্রিক পার্টি তখন নতুন সরকারের অংশীদার। তারও অনেক পরে আফগান পরিস্থিতি সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষে সত্যি সত্যি উদ্বেগজনক হয়ে ওঠা সত্ত্বেও ১৯৭৯ সালের ১৭ মার্চ সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরোর এক সভায় কেজিবি-র তৎকালীন অধিকর্তা ইউরি আন্দ্রোপভ্ আফগানিস্তানে সোভিয়েত হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করেন। বিদেশমন্ত্রী আন্দ্রেই গ্রোমিকো এই প্রসঙ্গে বলেন: ‘আফগানিস্তানে সোনাবাহিনী পাঠানোর চিন্তা আমাদের বর্জন করা উচিত বলে কমরেড আন্দ্রোপভ্ যে অভিমত প্রকাশ করেছেন আমি তার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। আফগান সেনাবাহিনী ঠিক নির্ভরযোগ্য নয়, এর ফলে আমরা আগ্রাসীরূপে চিহ্নিত হব। কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে সেনাবাহিনী? আফগান জনগণের বিরুদ্ধে! আমাদের সেনাবাহিনীকে তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করতে হবে! স্থূলভাবে বলতে গেলে, আফগান নেতাদের ভুলত্রুটির কোনও শেষ নেই, তাঁরা তাঁদের নিজেদের দেশের জনসাধারণের কোনও সমর্থন পাননি।… আমাদের বাহিনী পাঠানোর অর্থ হবে আমাদের আফগানিস্তান অধিকার করা। এর ফলে আমরা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এক জটিল পরিস্থিতিতে পড়ে যাব। এত কষ্ট করে আমরা যা গড়ে তুলেছি, এর ফলে আমরা সেসব নষ্ট করে ফেলব।’ প্রধানমন্ত্রী আলেক্সেই কোসিগিন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বোচ্চ সোভিয়েতের প্রেসিডিয়ামের সভাপতি লেওনিদ ইলিচ ব্রেজ্নেভ্ও এতে একমত হন।
সেপ্টেম্বরে নুর মহম্মদ তারাকি নিহত হওয়ার পর সোভিয়েত ইউনিয়নের কোনও কোনও রাজনৈতিক মহলে একটা আশঙ্কা ঢুকে গেল যে, তাঁর উত্তরসূরি হাফিজুল্লা আমিন এক ধরনের টিটো হতে চলেছেন। পার্টির নিয়ন্ত্রণ তাঁর ওপর থাকবে না। এই ধারণার ফলে সোভিয়েত রাজনৈতিক মহলে আগেকার মূল্যায়নের পুনর্বিবেচনার সূত্রপাত। হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ওই ১৯৭৯ সালেরই ১২ ডিসেম্বর। এবারে কিন্তু কট্টরপন্থী প্রতিরক্ষামন্ত্রী দ্মিত্রি উস্তিনভের প্ররোচনায় আন্দ্রোপভ্ তাঁর মত পালটে ফেললেন। গ্রোমিকোও শামিল হলেন তাঁদের সঙ্গে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আলেক্সেই কোসিগিন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক আন্দ্রেই কিরিলেঙ্কো আগের মতোই বাধা দেন। এরপর থেকে অসুস্থতার অজুহাত কোসিগিন ধীরে ধীরে রাজনৈতিক কর্মক্ষেত্র থেকে আড়ালে সরে যান, আর কিরিলেঙ্কো পরবর্তীকালে কোনও অজ্ঞাত কারণে আত্মহত্যা করেন।
১৯৮৯ সালে সুপ্রিম সোভিয়েতের অনুসন্ধান কমিটির পেশ করা বিবরণীতে দেখা যাচ্ছে বিষয়টি আলোচনার জন্য পলিটব্যুরোর অনেক সদস্যই সেদিন উপস্থিত ছিলেন না। ব্রেজ্নেভ্, উস্তিনভ্, আন্দ্রোপভ্ ও গ্রোমিকো গোপনে মিলিত হওয়ার পর সিদ্ধান্ত নিয়ে ‘যে কাজ করা হয়ে গেছে তার আর চারা নেই’– এই মর্মে নোটিশ জারি করে পলিটব্যুরোর বাদবাকির সদস্যদের ওপর, কেন্দ্রীয় কমিটি ও সুপ্রিম সোভিয়েতের ওপর তা চাপিয়ে দেন। পরবর্তীকালে আরও জানা যায় যে, ১৪ জন পলিটব্যুরোর সদস্যের ন’জন সে-সভায় উপস্থিত ছিলেন।
অথচ এই আন্দ্রোপভ্ই ১৯৮২ সালে সোভিয়েত নেতৃত্বে ব্রেজ্নেভের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার পর আফগানিস্তান থেকে অপসারণের ব্যাপারটিকে বড় রকমের গুরুত্ব দেন। কিন্তু ইতিমধ্যে জল অনেক ঘোলা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগান সাড়া দিলেন না। দিলেন না এই কারণে যে, ততদিন তিনি আফগান মুজাহিদিন ও পাকিস্তানকে সামরিক সাহায্য দানের জন্য পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে বসেছেন। পাকিস্তান সরাসরি জড়িত হয়ে পড়েছে আফগান যুদ্ধে। তার আশা, জয় তাদের হবেই। তবে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে চুক্তি কেন? এদিকে মস্কো যখন ভুল সংশোধনের জন্য শান্তির প্রয়াস চালিয়ে যেতে উৎসুক, তখন কাবুলে তারই দাক্ষিণ্যে ক্ষমতাসীন বারবাক কারমাল তেমন সহযোগিতা তো করছেনই না, বরং বেঁকে বসছেন। অবশ্য ক্রেমলিনও এ-ব্যাপারে দ্বিধাবিভক্ত। বারবাক কারমাল সে সুযোগ গ্রহণ করছেন।
আলাপ-আলোচনায় গতি সঞ্চারিত হল আরও অনেক পরে, ১৯৮৫ সালে, গর্বাচ্যোভ্ ক্ষমতায় আসার পর। তাঁকে বারবাক কারমালের সঙ্গে বোঝাপড়ায় আসতে হয়। ১৯৮৬ সালে কোনওরকম শিষ্টাচারের বালাই না রেখে বারবাক কারমালকে বিদায় দিলেন গর্বাচ্যোভ্। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হলেন আফগানিস্তানের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান নাজিবুল্লা। বুদ্ধিমানের কাজ হয়নি এই নিয়োগ। সোভিয়েত ইউনিয়নের মার্শাল আখরোমেইয়েভ ও সহকারী বিদেশমন্ত্রী গেওর্গি করনিয়েন্কোর প্রতিবাদ সত্ত্বেও কেজিবি-র নবনিযুক্ত প্রধান ভ্লাদিমির ক্র্যুচ্কোভ্ ও বিদেশ মন্ত্রী এদুয়ার্দ শেভার্দ্নাদ্জের সমর্থনে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত হলেন নাজিবুল্লা। উল্লেখযোগ্য এই যে, পরবর্তীকালে আখ্রোমেইয়েভ্ও আত্মহত্যা করেন রহস্যজনক পরিস্থিতিতে।
১৯৮৬ সালে নাজিবুল্লাকে নিয়োগ করার সময় তাঁর সঙ্গে গর্বাচ্যোভের প্রাথমিক শর্ত ছিল এই যে, নাজিবুল্লার সরকার হবে জোট সরকার, যেখানে সামগ্রিকভাবে দেশের রক্ষণশীল শক্তিগুলিও স্থান পাবে এবং তার উদ্দেশ্য হবে মুখ্যত, প্রতিরোধকারী সামরিক গোষ্ঠীগুলিকে আকর্ষণ করা। কিন্তু কর্তা বলেন এক, তাঁর পারিষদ বলেন আর এক। নাজিবুল্লার সঙ্গে কথাবার্তায় সোভিয়েত বিদেশ মন্ত্রী সেভার্দ্নাদ্জে সে-আইডিয়ার বিরোধিতাই করেন।
অবশ্য তখন আর কোনও উপায়ও ছিল না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ততদিনে ভালোমতো জড়িয়ে পড়েছে এই প্রক্সি যুদ্ধে। সোভিয়েতের লেজে-গোবরে অবস্থা দেখে ভিয়েতনামে তার নিজের যা হাল হয়েছিল সে-কথা স্মরণ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উল্লসিত। বর্তমান শাসন ব্যবস্থা থেকে সম্প্রসারিত কোনও সরকারই তার কাছে গ্রাহ্য নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ়বিশ্বাস, সোভিয়েত সেনাবাহিনী অপসারণের সঙ্গে সঙ্গে নাজিব-সরকারের পতন ঘটবে, তাই একমাত্র অপসারণের ওপরই সে বারবার জোর দিয়ে আসছিল। স্মরণ করা যেতে পারে, সোভিয়েত ইউনিয়নের সেনাবাহিনীর অপসারণ এবং অতঃপর কাবুল সরকারের গঠনবিন্যাস– এই সূত্রটি ১৯৮৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নই দিয়েছিল।
আফগান চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল জেনেভায়, ১৯৮৮ সালের ১৫ মে। কিন্তু সেখানে একটি ফাঁক থেকেই যায়। দুই বৃহৎ শক্তির কেউই যে তাদের পোষ্যদের মদত দেবে না, এমন কোনও শর্ত সেখানে ছিল না। ফলে প্রক্সি যুদ্ধ যথারীতি চলতে লাগল– সোভিয়েত সেনাবাহিনী অপসারণের পরও। তবে ইতিমধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের পূর্বাভাস দেখা দেওয়ায় তার তরফ থেকে তৎপরতা অনেকটা ক্ষীণ হয়ে আসছিল। পরন্তু আফগানিস্তানে তাদের দায়দায়িত্ব সম্পর্কে বর্তমান সোভিয়েত সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিরও আমূল পরিবর্তন দেখা দিয়েছিল।
সোভিয়েত পৃষ্ঠপোষিত আফগান সরকারের বিরোধিতা করায় সোভিয়েত ইউনিয়নের পত্র-পত্রিকায় ও বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে এককালে যারা ‘দুশমন’ নামে পরিচিত ছিল তখন থেকে তারা মর্যাদা পেল মুজাহেদের। ১৯৯১ সালের নভেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার মাস খানেক আগে তাদেরই কয়েকটি উপদলের এক প্রতিনিধিদল মস্কোয় এসেছিল আফগান সমস্যা নিয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে। তারা যে তখন সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচ্যোভের সঙ্গে আলোচনার থেকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিনের সঙ্গে আলোচনায় বসার ওপর বেশি জোর দিচ্ছিল, এতে তাদের দূরদর্শিতার পরিচয় মেলে। কিন্তু রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট তাঁর রসবোধের পরিচয় দিলেন নিজে অনুপস্থিত থেকে তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দ্র রৎস্কোইকে আলোচনায় ভিড়িয়ে দিয়ে।
রুৎস্কোইয়ের কাছে এই সাক্ষাৎকার ছিল এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা। আফগান যুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন আফগানিস্তানে সোভিয়েত বোমারু বিমানবাহিনীর রেজিমেন্ট কম্যান্ডার– কর্নেল। যুদ্ধে দু’বার আহত হয়ে বন্দি হয়েছিলেন শত্রুবাহিনীর হাতে। প্রথমবার পালাতে সক্ষম হন। দ্বিতীয়বার ভারতে মধ্যস্থতায় বন্দিবিনিময়ের ফলে মুক্তি লাভ করেন। যুদ্ধে কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি তাঁর নিজের দেশের ‘সোভিয়েত ইউনিয়নের বীর’– এই সরকারি খেতাব লাভ করেন। আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। গর্বাচ্যোভ্ থেকে ইয়েল্ৎসিন, ইয়েল্ৎসিন থেকে রুৎস্কোই– গড়াতে গড়াতে বিপজ্জনক স্নোবলের আকার ধারণ করে আফগান-সমস্যা।
আজকের দিনে আফগানিস্তানে যে পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে, তার কারণ আপস-আলোচনার সময় দুই বৃহৎ শক্তিরই দেশটির ভবিষ্যৎ গঠনবিন্যাস সম্পর্কে সমঝোতায় আসতে না পারা, অন্যদিকে আফগান গোষ্ঠীগুলিরও নিজেদের মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে নিতে অসম্মতি।
মুজাহেদির নামে পরিচিত মুসলিম মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে কাবুলের কমিউনিস্ট সরকারের পতনের পাঁচ বছর পরে আজও আফগানিস্তানে ইসলামের নামে যুদ্ধ অব্যাহত। কিন্তু এখন যুদ্ধ চলছে প্রতিন্দ্বন্দ্বী মুসলিম গোষ্ঠীগুলির মধ্যেও।
১৯৯২ সালের ২৮ এপ্রিল বিজয়ী মুজাহিদরা কাবুলে তাদের ইসলামি সরকারের প্রতিষ্ঠা ঘটিয়ে আফগান কমিউনিস্টদের ১৪ বছরব্যাপী শাসনের অবসান সূচনা করল।
……………………………………………..
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল
……………………………………………..
অতঃপর রাষ্ট্রসংঘ নাজিবুল্লাকে পদত্যাগ করতে বললে নাজিবুল্লা তাতে সম্মত হলেন। তিনি কাবুলে রাষ্ট্রসংঘের চত্বরে আশ্রয় গ্রহণ করলেন। ততদিনে সোভিয়েত ইউনিয়ন আর নেই। সেই একই নীতির পুনরাবৃত্তি যা দেখেছি হোনেকারের বেলায়। নতুন রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানের এ-ব্যাপারে কোনও দায়দায়িত্ব নেই। সকলেই হাত ধুয়ে ফেলল। প্রায় চার বছর অবরুদ্ধ অবস্থায় কাটানোর পর ১৯৯৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ভোররাতে ‘সুরক্ষিত স্থানে’ তালিবানের হাতে নৃশংসভাবে নিহত হলেন নাজিবুল্লা।
এইভাবেই ১৯৬১ সালে জাতি সংঘের হেফাজতে থাকাকালে জাতি সংঘের বিশেষ প্রতিনিধির চোখের সামনে আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছিলেন প্যাট্রিস লুমুম্বা। ঘটনাচক্রে সেই সময় কঙ্গোতে রাষ্ট্রসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি ছিলেন ভারতের নাগরিক রাজেশ্বর দয়াল।
…পড়ুন রুশকথা-র অন্যান্য পর্ব…
পর্ব ৪৩। জানলা দিয়ে পূর্ব জার্মানি দেখতে দেখতে গর্বাচ্যোভ বলেছিলেন, তাহলে এখানেই শেষ!
পর্ব ৪২। পেরেস্ত্রৈকা শুরু হলে বুঝেছিলাম ‘প্রগতি’ ‘রাদুগা’– এসব কিছুই থাকবে না
পর্ব ৪১। কল্পনা যোশীর তুলনায় ইলা মিত্রকে অনেক বেশি মাটির কাছাকাছি বলে মনে হয়েছে
পর্ব ৪০। বেসরকারিকরণের শুরু দিকে রাস্তাঘাটে ছিনতাই বেড়ে গেছিল, কারণ সব লেনদেন নগদে হত
পর্ব ৩৯। হাওয়া বদলের আঁচ অনেকেই আগে টের পেয়েছিল, বদলে ফেলেছিল জীবনযাত্রা
পর্ব ৩৮। শুধু বিদেশে থাকার জন্য উচ্চশিক্ষা লাভ করেও ছোটখাটো কাজ করে কাটিয়ে দিয়েছেন বহু ভারতীয়
পর্ব ৩৭। একটা বিদেশি সাবানের বিনিময়েও নাকি মস্কোয় নারীসঙ্গ উপভোগ করা যায়– এমনটা প্রচার করেছে ভারতীয়রা
পর্ব ৩৬। মস্কোর ঠান্ডায় লঙ্কা গাছ দেখে পি.সি. সরকার বলেছিলেন, ‘এর চেয়ে বড় ম্যাজিক হয় নাকি?’
পর্ব ৩৫। রুশদের কাছে ভারত ছিল রবীন্দ্রনাথের দেশ, হিমালয়ের দেশ
পর্ব ৩৪। সোভিয়েত শিক্ষায় নতুন মানুষ গড়ে তোলার ব্যাপারে একটা খামতি থেকে গিয়েছিল
পর্ব ৩৩। দিব্যি ছিলাম হাসপাতালে
পর্ব ৩২। মস্কোর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে সাধারণ ডাক্তাররা অধিকাংশই মহিলা ছিলেন
পর্ব ৩১। আমার স্ত্রী ও দুই কন্যা নিজভূমে পরবাসী হয়ে গিয়েছিল শুধু আমার জন্য
পর্ব ৩০। শান্তিদা কান্ত রায়ের প্রিয় কাজ ছিল মস্কোয় ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের কমিউনিজম পড়ানো
পর্ব ২৯। পেরেস্ত্রৈকার শুরু থেকেই নিরাপত্তার অভাব বোধ করছিলেন গোপেনদা
পর্ব ২৮। দেশে ফেরার সময় সুরার ছবি সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি পাননি গোপেনদা
পর্ব ২৭। বিপ্লবের ভাঙা হাট ও একজন ভগ্নহৃদয় বিপ্লবী
পর্ব ২৬। ননী ভৌমিকের মস্কোর জীবনযাত্রা যেন দস্তইয়েভস্কির কোনও উপন্যাস
পর্ব ২৫। ননীদা বলেছিলেন, ডাল চচ্চড়ি না খেলে ‘ধুলোমাটি’র মতো উপন্যাস লেখা যায় না
পর্ব ২৪। মস্কোয় শেষের বছর দশেক ননীদা ছিলেন একেবারে নিঃসঙ্গ
পর্ব ২৩। শেষমেশ মস্কো রওনা দিলাম একটি মাত্র সুটকেস সম্বল করে
পর্ব ২২। ‘প্রগতি’-তে বইপুথি নির্বাচনের ব্যাপারে আমার সঙ্গে প্রায়ই খিটিমিটি বেধে যেত
পর্ব ২১। সোভিয়েতে অনুবাদকরা যে পরিমাণ অর্থ উপার্জন করত, সে দেশের কম মানুষই তা পারত
পর্ব ২০। প্রগতি-র বাংলা বিভাগে নিয়োগের ক্ষেত্রে ননীদাই শেষ কথা ছিলেন
পর্ব ১৯। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় নাকি খুব ভালো রুশভাষা জানতেন, প্রমথনাথ বিশী সাক্ষী
পর্ব ১৮। লেডি রাণু মুখার্জিকে বাড়ি গিয়ে রুশ ভাষা শেখানোর দায়িত্ব পড়েছিল আমার ওপর
পর্ব ১৭। একদিন হঠাৎ সুভাষদা আমাদের বাড়ি এসে উপস্থিত ফয়েজ আহমেদ ফয়েজকে নিয়ে
পর্ব ১৬। মুখের সেই পরিচিত হাসিটা না থাকলে কীসের সুভাষ মুখোপাধ্যায়!
পর্ব ১৫। রুশ ভাষা থেকেই সকলে অনুবাদ করতেন, এটা মিথ
পর্ব ১৪। মস্কোয় ননীদাকে দেখে মনে হয়েছিল কোনও বিদেশি, ভারতীয় নয়
পর্ব ১৩। যিনি কিংবদন্তি লেখক হতে পারতেন, তিনি হয়ে গেলেন কিংবদন্তি অনুবাদক
পর্ব ১২। ‘প্রগতি’ ও ‘রাদুগা’র অধঃপতনের বীজ কি গঠনপ্রকৃতির মধ্যেই নিহিত ছিল?
পর্ব ১১। সমর সেনকে দিয়ে কি রুশ কাব্যসংকলন অনুবাদ করানো যেত না?
পর্ব ১০। সমর সেনের মহুয়ার দেশ থেকে সোভিয়েত দেশে যাত্রা
পর্ব ৯। মস্কোয় অনুবাদচর্চার যখন রমরমা, ঠিক তখনই ঘটে গেল আকস্মিক অঘটন
পর্ব ৮: একজন কথা রেখেছিলেন, কিন্তু অনেকেই রাখেননি
পর্ব ৭: লেনিনকে তাঁর নিজের দেশের অনেকে ‘জার্মান চর’ বলেও অভিহিত করত
পর্ব ৬: যে-পতাকা বিজয়গর্বে রাইখস্টাগের মাথায় উড়েছিল, তা আজ ক্রেমলিনের মাথা থেকে নামানো হবে
পর্ব ৫: কোনটা বিপ্লব, কোনটা অভ্যুত্থান– দেশের মানুষ আজও তা স্থির করতে পারছে না
পর্ব ৪: আমার সাদা-কালোর স্বপ্নের মধ্যে ছিল সোভিয়েত দেশ
পর্ব ৩: ক্রেমলিনে যে বছর লেনিনের মূর্তি স্থাপিত হয়, সে বছরই ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার সূচনাকাল
পর্ব ২: যে দেশে সূর্য অস্ত যায় না– আজও যায় না
পর্ব ১: এক প্রত্যক্ষদর্শীর চোখে রাশিয়ার খণ্ডচিত্র ও অতীতে উঁকিঝুঁকি