সুপারস্টার হিসেবে তাঁর জনপ্রিয়তা এতই তুঙ্গে যে মিখাইল গর্বাচ্যোভের জীবন ও কার্যকলাপের উপর আগামী বছরে চার সিরিজের একটি দলিলচিত্র গ্রেট ব্রিটেন এবং পশ্চিমের অন্যান্য দেশে মুক্তি পেতে চলেছে। স্তাভ্রপলে গর্বাচ্যোভের শৈশব ও যৌবন এবং তাঁর কর্মজীবন এতে স্থান পাবে। মনে আছে গর্বাচ্যোভ্ যখন প্রথম সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির কর্ণধার হলেন তখন থেকে শুরু করে যতদিন তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ততদিন পর্যন্ত তাঁর টাক মাথার সামনের দিকে লাল রঙের যে বড়সড় জড়ুলটা আছে, পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর প্রতিটি আলোকচিত্রে সেটা চোখে না-পড়ার মতো ফিকে করে দেখানো হত, এমনকী দূরদর্শনে কায়দা করে সেই দিকটা এড়িয়ে তাঁর ছবি তোলা হত।
৫৫.
অগাস্ট মামলার চাঞ্চল্যকর রায়
মস্কো, ২৩ অক্টোবর ১৯৯৪
১৯৯১ সালের আগস্ট মাসে প্রাক্তন সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচ্যোভকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টার অভিযোগে তৎকালীন উচ্চপদস্থ সরকারি ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুনিয়া-কাঁপানো ষড়যন্ত্রের যে-মামলা দায়ের করা হয়েছিল, দীর্ঘ আঠারো মাস পরে, অগাস্ট ঘটনার তৃতীয় বার্ষিকীর মাত্র কয়েকদিন আগে গত ১১ আগস্ট তার নিষ্পত্তি ঘটল স্টেট প্রসিকিউটরের তরফ থেকে অভিযুক্তদের নির্দোষ ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে।
শেষ পর্যন্ত মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনকারী ছিলেন মাত্র একজন– তৎকালীন সোভিয়েত স্থলবাহিনীর অধিনায়ক জেনারেল ভালেন্তিন ভারেনিকভ্।
ভারেনকিভ্ ছিলেন রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের দায়ে অভিযুক্ত ৬২জন নেতার একজন। এ-বছরের ফেব্রুয়ারিতে নতুন পার্লামেন্টের উদ্যোগে ঘোষিত অ্যামনেস্টির দরুন অভিযুক্তরা মুক্তি পেয়ে যান। ভারেনিকভ্ই একমাত্র ব্যক্তি যিনি অপমানজনক অ্যামনেস্টি মাথা পেতে না নিয়ে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য আদালতের দ্বারস্থ হন। ঝুঁকি ছিল। অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
মামলার শুনানির সুযোগ নিয়ে আসামির কাঠগড়াকে তিনি গর্বাচ্যোভের বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার অভিযোগের মঞ্চে পরিণত করেন। গর্বাচ্যোভ এই মামলার সাক্ষ্য দিতে এসে নিজেকে আসামির ভূমিকায় আবিষ্কার করে অস্বস্তিতে পড়ে যান।
……………………………….
প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচ্যোভ পূর্ণ ক্ষমতাসীন থাকা সত্ত্বেও ক্রিমিয়ার গ্রীষ্মাবাস থেকে মস্কোর সঙ্গে যোগাযোগের বা গ্রীষ্মাবাস ছাড়ার কোনও চেষ্টাই করেননি– যদিও যোগাযোগের সমস্ত পথ তাঁর খোলা ছিল। এই রহস্যেরও কোনও জবাব নেই। জবাব এড়িয়ে গেছেন গর্বাচ্যোভ্। আদালতের রায়ের পর থেকে সাক্ষাৎকারে ক্ষুব্ধ গর্বাচ্যোভের মন্তব্য: অদ্ভুত বিচার! কার বিচার হল স্পষ্ট বোঝা গেল না।
………………………………
স্টেট প্রসিকিউটর আর্কাদি দানিলভ্ বলেন, ১৯৯৩ সালের গোড়ায় তিনি এবং আরও কয়েকজন প্রসিকিউটর তৎকালীন পাবলিক প্রসিকিউটর স্তেপান্কভনকে এই বলে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, তথাকথিত যড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে মামলার ভিত্তি খুবই দুর্বল। মামলার তদন্তের জন্য স্তোপন্কভ সময় নিয়েছিলেন এক বছরেরও বেশি। পরে মামলা আদালতে ওঠার আগেই ষড়যন্ত্রের ওপর বই প্রকাশ করার অভিযোগে তাঁকে ওই পদ থেকে বিদায় নিতে হয়। পরিণতি জেনেশুনেই কি ওই কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি? জবাব নেই এই রহস্যের।
গত ফেব্রুয়ারিতে নতুন পার্লামেন্টের উদ্যোগে তড়িঘড়ি অ্যামনেস্টি ঘোষণা করে অভিযুক্তদের ছেড়ে দেওয়া? মামলা খাড়া করা যাবে না, জেনে সরকারের মুখরক্ষার খাতিরে ধামা-চাপা দেওয়ার জন্যই কি? শেষ পর্যন্ত মুখরক্ষা হল কোথায়? আদালতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়ে গেছে যে ১৯৯১ সালের আগস্টে রাষ্ট্রবিরোধী কোনও অভ্যুত্থান ঘটেনি।
বিশদ বিশ্লেষণের পর প্রসিকিউটর আর্কাদি দানিলভের রায়: ১৯৯১ সালের ১৬ আগস্ট জরুরি কমিশনের গোপন সভায় দেশের উদ্ভূত জটিল পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের উদ্দেশ্য আলোচিত হয়েছিল মাত্র। উক্ত কমিশন গঠন সরকার বা রাষ্ট্রবিরোধী চক্রান্তের পর্যায়ে পড়ে না। অভিযুক্তরা নিজেরাই সরকারি ক্ষমতাসীন ছিলেন। প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচ্যোভ পূর্ণ ক্ষমতাসীন থাকা সত্ত্বেও ক্রিমিয়ার গ্রীষ্মাবাস থেকে মস্কোর সঙ্গে যোগাযোগের বা গ্রীষ্মাবাস ছাড়ার কোনও চেষ্টাই করেননি– যদিও যোগাযোগের সমস্ত পথ তাঁর খোলা ছিল। এই রহস্যেরও কোনও জবাব নেই। জবাব এড়িয়ে গেছেন গর্বাচ্যোভ্। আদালতের রায়ের পর থেকে সাক্ষাৎকারে ক্ষুব্ধ গর্বাচ্যোভের মন্তব্য: অদ্ভুত বিচার! কার বিচার হল স্পষ্ট বোঝা গেল না।
জেনারেলের উকিলের অভিযোগ, সরকারি প্রচারমাধ্যমে এই মামলাকে কেন্দ্র করে ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও কুৎসা রটনা করে চলেছে।
অভিযোগ মিথ্যা নয়। তবে সম্প্রতি মামলার পরিণতি আগে থাকতে অনুমান করে প্রচারমাধ্যমগুলি মামলা সংক্রান্ত সংবাদ যতদূর সম্ভব পরিহার করে যাচ্ছিল। যে-সংবাদ চাঞ্চল্যকর হতে পারত তার কণ্ঠরোধ করার ক্ষমতা বর্তমান সরকারের আছে।
২৩ অক্টোবর ১৯৯৪
সম্প্রতি আদালতের রায়ে ১৯৯১ সালের আগস্টের ঘটনায় অভিযোগ ‘রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র’-র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অভিযোগ থেকে মুক্তি পেল, এবারে তারা ‘চক্রী’ আখ্যা থেকে অব্যাহতি লাভের পর আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনকারী তৎকালীন স্থলবাহিনীর জেনারেল ভালেন্তিন ভারেন্নিকভ্কে ঐতিহাসিক বিজয়ের জন্য অভিনন্দন জানাল বর্তমান সরকারের বিরাগভাজন আর একজন জেনারেল– প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দ্র রুৎস্কাই।
বড় দেরিতে ভুল বুঝলেন আলেক্সান্দ্র রুৎস্কোই। ১৯৯১ সালের আগস্টে রাশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনিই কিন্তু পার্লামেন্ট ভবন রক্ষার জন্য রুখে দাঁড়িয়েছিলেন স্থলবাহিনীর জেনারেলের ট্যাঙ্কের বিরুদ্ধে। তিনি তখন ছিলেন ‘গণতন্ত্রী’ ইয়েলৎসিনের পক্ষে।
ভাগ্যের পরিহাস। ১৯৯৩ সালের অক্টোবরে জেনারেল রুৎস্কাইকে আবার দাঁড়াতে হয় পার্লামেন্ট ভবন রক্ষার জন্য। কিন্তু এবারে ইয়েলৎসিনের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, যে-আদালতে তথাকথিত আগস্ট ষড়যন্ত্রের মামলার রায় ঘোষিত হল, সেখানেই রুৎস্কাই সম্প্রতি মামলা দায়ের করেছেন বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও ইয়েল্ৎসিনের বিরুদ্ধে ইয়েল্ৎসিন-বিরোধী অক্টোবর অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণের অভিযোগে অন্যায়ভাবে তাঁর সামরিক খেতাব কেড়ে নেওয়ার জন্য। সামরিক আদালতে ওই মামলায় তিনি জিতেছেন। একের পর এক প্রমাণিত হচ্ছে বর্তমান সরকারের আইনবিরোধী কার্যকলাপ।
১৯৯৩ সালের অক্টোবরের নৃশংস ঘটনার পর, পার্লামেন্ট ভবনের ওপর সরকারি বাহিনীর কামান দাগার পর ১৯৯২ সালের আগস্টের ঘটনা একটি সূক্ষ্ম রাজনৈতিক বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। লোকের মনে প্রশ্ন জাগে তিনজন লোকের মৃত্যুর জন্য আগস্টের ঘটনার অংশগ্রহণকারীদের যদি কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়, তাহলে ১৯৯৩ সালের ঘটনার কয়েকশো লোকের প্রাণহানির জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা উচিত।
দ্বিতীয়ত ১৯৯১ সালের নতুন প্রভাতের যে-প্রতিশ্রুতি গণতন্ত্রীরা দিয়েছিলেন, আজ অধিকাংশ জনসাধারণের কাছে তা আর তেমন গোলাপি ঠেকছে না। অনেক মানুষেরই এখন ধারণা, তথাকথিত ষড়যন্ত্রীরা হয়তো তাদের ভালোর জন্যই চেষ্টা করেছিলেন। পাতালরেলের ভাড়া তখনও ছিল মাত্র কয়েক কোপেক, তখনও মানুষ নিরাপদে ছুটে কাটাতে যেতে পারত কৃষ্ণসাগরের সৈকতে।
রুশিরা ১৯৯১-র আগস্টের ও কয়েক দিনের অনিশ্চিত অবস্থার ধাক্কা ও ভীতি এতদূর কাটিয়ে উঠতে পেরেছে যে গত বছর ডিসেম্বরে আগস্ট ষড়যন্ত্র মামলার দু’জন আসামিকে পর্যন্ত তাঁরা সংসদে নির্বাচিত করে।
মামলা সবচেয়ে অস্বস্তিকর হয়ে দাঁড়ায় এই কারণে যে তথাকথিত ষড়যন্ত্রীরা যা ধরে রাখতে চেয়েছিলেন, সেই পুরনো সোভিয়েত ইউনিয়ন পুনরুদ্ধারের প্রশ্ন, তা যে কোনও আকারেই হোক– আবার নতুন করে তীব্র হয়ে উঠেছে।
পুরনো সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলির পুনরায় একত্রীকরণ সম্প্রতি ইয়েল্ৎসিন বিরোধীদের জনপ্রিয় ডাক হয়ে দাঁড়িয়েছে। উত্তরোত্তর তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইয়েল্ৎসিনের দলবলকেও এখন তার নাগাল পাওয়ার চেষ্টা করতে হচ্ছে। নইলে টিকে থাকা ভার।
এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মনে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগছে, কী অপরাধ তাহলে করেছিলেন আগস্ট ঘটনার নেতারা?
নিত্য নব রূপে গর্বাচ্যোভ্
২৬.০৩.১৯৯২
অতি সম্প্রতি তাঁকে আবার দেখা যাচ্ছে দেশ-বিদেশের দূরদর্শনের পর্দায়– অবশ্য রাষ্ট্রপ্রধানের ভূমিকায় নয়। কখনও তিনি দেশের অগণিত দীন-দুঃখীদের সহযাত্রী, কখনও ভবিষ্যদ্বক্তা, কখনও ও স্থিতপ্রাজ্ঞ মনীষী, কখনও লেখক, কখনও বা স্রেফ একজন দক্ষ অভিনেতা।
গত ফেব্রুয়ারির ২৪ তারিখে ইতালির পত্র-পত্রিকায় বিশেষ স্থান পেয়েছিলেন তিনি। দৈনন্দিন জীবনের হাজার হাজার সমস্যা জর্জরিত পেনশনভোগী গর্বাচ্যোভ, মিস্টার গর্বাচ্যোভের অভিযোগ– এই পেনশনে চলা মুশকিল– এই ছিল শিরোনাম। সাক্ষাৎকার গ্রহণের বিশেষ অধিকার পেয়েছিল ব্রিটিশ টেলিকোম্পানি BBC।
এই প্রসঙ্গে ইতালির রিপাবলিক পত্রিকার মন্তব্য– স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের কমনওয়েলথের (সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর জোড়াতালি দেওয়া রাষ্ট্রটার তখন ওই নামই হয়েছিল, এখনও তাই আছে) নাগরিকরা যদি কখনও এই সাক্ষাৎকারটি পুরোপুরি দেখার সুযোগ পান, তাহলে তাঁদের কাছে সম্পূর্ণ চমকপ্রদ, এমনকী রীতিমতো চিত্তকর্ষক মনে হতে পারে, কেননা এই যে মানুষটি মহামূল্যবান ভেড়ার লোমের কোটপরা ছোটখাটো মহিলাটির (সহধর্মিণী রাইসা) পাশে বসে দূরদর্শনের পর্দা থেকে জনসাধারণের কাছে দৈনন্দিন জীবনের দুঃখ-দুর্দশার কথা বলেছেন, মাত্র কয়েক মাস আগেও তিনি যে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহৎ শক্তির প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তা ধারণাই আনা যায় না।
ইয়েলৎসিন সরকার প্রাক্তন সোভিয়েত প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তার জন্য দেহরক্ষী বাহিনীর ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু তাতে দৈনন্দিন জীবনের বাস্তবতার হাত থেকে তিনি রেহাই পাচ্ছেন না। একবার বাজারে গেলেই ৫০০ রুবল বেরিয়ে যাচ্ছে। এক অসাধারণ পেনশনভোগীর সাধারণ জীবনযাত্রা। কিন্তু এত সাধারণ জীবনযাত্রার জন্য তিনি প্রস্তুত নন। তাই সাক্ষাৎকারের শেষে তিনি আর না বলে পারলেন না– আর নয়, এবারে ডলার রোজগার করা দরকার, নিজের জন্য কিছু করা দরকার। পশ্চিমে, বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন ও জার্মানিতে সে-সুযোগ তাঁর অবাধ। একাধিক স্মৃতিকথার লেখক, পত্রিকার কলামনিস্ট এবং আমন্ত্রিত বক্তার ভূমিকায় ওই সমস্ত দেশে তিনি একজন সুপারস্টার। সুপারস্টারের দক্ষিণা বলাই বাহুল্য, সামান্য নয়। ফ্রান্সের অন্যতম সেরা বিজ্ঞান গবেষণা ও শিক্ষাকেন্দ্র College De France জাতীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে ৫৩তম অধ্যাপন বিভাগ প্রতিষ্ঠার আবেদন জানিয়েছে, তার চেয়ারে বসাতে চায় গর্বাচ্যোভ্কে। কলেজ শ্রোতাদের কোনও ডিপ্লোমা দেয় না, তাই প্রফেসরদেরও আবশ্যকতা নেই ডিগ্রিধারী হওয়ার। বছরে ১৮ থেকে ২৬ ঘণ্টা ভাষণ দিতে হবে– বেতন ঘণ্টায় ২৫০০ ডলার।
সর্বশেষ সংবাদটি আরও চমকপ্রদ– এখানে তিনি ছবিতে নামছেন না, বলা যেতে পারে তাঁকে নিয়ে ছবি হচ্ছে। মিখাইল গর্বাচ্যোভের জীবন ও কার্যকলাপের উপর আগামী বছরে চার সিরিজের একটি দলিলচিত্র গ্রেট ব্রিটেন এবং পশ্চিমের অন্যান্য দেশে মুক্তি পেতে চলেছে। স্তাভ্রপলে গর্বাচ্যোভের শৈশব ও যৌবন এবং তাঁর কর্মজীবন এতে স্থান পাবে।
মনে আছে গর্বাচ্যোভ্ যখন প্রথম সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির কর্ণধার হলেন তখন থেকে শুরু করে যতদিন তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ততদিন পর্যন্ত তাঁর টাক মাথার সামনের দিকে লাল রঙের যে বড়সড় জড়ুলটা আছে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর প্রতিটি আলোকচিত্রে সেটা চোখে না পড়ার মতো ফিকে করে দেখানো হত, এমনকী দূরদর্শনে কায়দা করে সেই দিকটা এড়িয়ে তাঁর ছবি তোলা হত। এক্ষেত্রে কী হয় কে জানে!
বিদেশে সুপারস্টার হিসেবে তাঁর জনপ্রিয়তা একসময় এমনই তুঙ্গে উঠেছিল যে, ১৯৯৬-এর ১২ জানুয়ারির একটি খবরে প্রকাশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনও এক মফস্সল শহরে ব্যাঙ্ক ডাকাতি করতে এসেছিল দুই মুখোশধারী ডাকাত– একজন এসেছিল গর্বাচ্যোভের মুখোশ পরে, অন্যজন– মাইকেল জ্যাকসনের। ডাকাতি সফল হয়নি, তবে তারা ধরাও পড়েনি।
কিন্তু যে-দেশে গর্বাচ্যোভের এত খাতির, সেই জার্মানিতে একটু বাড়াবাড়ি দেখা গিয়েছিল।
গর্বাচ্যোভ তো আর ইয়েলৎসিন নন– শুধু তা-ই নয়, তিনি বলতে গেলে মদ্যপানবিরোধী। বড়জোর অল্প-স্বল্প জার্মান বিয়ার বা ফরাসি শ্যাম্পেন চলতে পারে। অথচ তাঁর নামেই কিনা জার্মানিতে চলছে গর্বাচ্যোভ্ ভোদকা! জার্মানরা অবশ্য এখন সাফাই গেয়ে বলছে ইনি সেই গর্বাচ্যোভ্ নন–বিপ্লবের আগেকার জনৈক রুশ জেনারেল। হবেও-বা।
…পড়ুন রুশকথা-র অন্যান্য পর্ব…
পর্ব ৫৩। নাম বদলের গোলকধাঁধায় অসঙ্গতি বেড়েছে, ঐতিহ্যকে রক্ষা করা যায়নি
পর্ব ৫২। মস্কোর আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের মিছিলে ভারতের পতাকা থাকবে না-ই বা কেন?
পর্ব ৫১। পত্র-পত্রিকায় ঘোষণা করা হল কাস্ত্রো আসছেন, তবে ইনি মেক্সিকোর সোপ অপেরা স্টার
পর্ব ৫০। খোলা হাওয়ায় মানুষের আর কোনও কিছু নিয়েই চিন্তা নেই, অন্ন চিন্তা ছাড়া
পর্ব ৪৯। সোভিয়েত-মুক্ত রাশিয়াকে কে রক্ষা করবে?
পর্ব ৪৮। বর্ষশেষে মানুষ পেল দারিদ্র, এখন লোকে ধার-দেনা করে চা-কফি খাওয়া শুরু করেছে
পর্ব ৪৭। মুক্ত দিনে ব্যালের দেশ রাশিয়ায় ‘আধুনিক ব্যালে’ শেখাতে আসছে ক্যালিফোর্নিয়ার ট্রুপ
পর্ব ৪৬। অক্টোবর বিপ্লবের উচ্ছ্বাস কোনও দেশে কমলে, অন্য দেশে বাড়তে থাকে
পর্ব ৪৫। ‘অক্টোবর বিপ্লব দিবস’ আর পালিত হবে না, পালিত হবে বড়দিন– চোখের সামনে বদলে যাচ্ছিল সোভিয়েত
পর্ব ৪৪। রাজনীতিতে অদূরদর্শিতার ফল যে কত সুদূরপ্রসারী, তার প্রমাণ আফগানিস্তান
পর্ব ৪৩। জানলা দিয়ে পূর্ব জার্মানি দেখতে দেখতে গর্বাচ্যোভ বলেছিলেন, তাহলে এখানেই শেষ!
পর্ব ৪২। পেরেস্ত্রৈকা শুরু হলে বুঝেছিলাম ‘প্রগতি’ ‘রাদুগা’– এসব কিছুই থাকবে না
পর্ব ৪১। কল্পনা যোশীর তুলনায় ইলা মিত্রকে অনেক বেশি মাটির কাছাকাছি বলে মনে হয়েছে
পর্ব ৪০। বেসরকারিকরণের শুরু দিকে রাস্তাঘাটে ছিনতাই বেড়ে গেছিল, কারণ সব লেনদেন নগদে হত
পর্ব ৩৯। হাওয়া বদলের আঁচ অনেকেই আগে টের পেয়েছিল, বদলে ফেলেছিল জীবনযাত্রা
পর্ব ৩৮। শুধু বিদেশে থাকার জন্য উচ্চশিক্ষা লাভ করেও ছোটখাটো কাজ করে কাটিয়ে দিয়েছেন বহু ভারতীয়
পর্ব ৩৭। একটা বিদেশি সাবানের বিনিময়েও নাকি মস্কোয় নারীসঙ্গ উপভোগ করা যায়– এমনটা প্রচার করেছে ভারতীয়রা
পর্ব ৩৬। মস্কোর ঠান্ডায় লঙ্কা গাছ দেখে পি.সি. সরকার বলেছিলেন, ‘এর চেয়ে বড় ম্যাজিক হয় নাকি?’
পর্ব ৩৫। রুশদের কাছে ভারত ছিল রবীন্দ্রনাথের দেশ, হিমালয়ের দেশ
পর্ব ৩৪। সোভিয়েত শিক্ষায় নতুন মানুষ গড়ে তোলার ব্যাপারে একটা খামতি থেকে গিয়েছিল
পর্ব ৩৩। দিব্যি ছিলাম হাসপাতালে
পর্ব ৩২। মস্কোর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে সাধারণ ডাক্তাররা অধিকাংশই মহিলা ছিলেন
পর্ব ৩১। আমার স্ত্রী ও দুই কন্যা নিজভূমে পরবাসী হয়ে গিয়েছিল শুধু আমার জন্য
পর্ব ৩০। শান্তিদা কান্ত রায়ের প্রিয় কাজ ছিল মস্কোয় ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের কমিউনিজম পড়ানো
পর্ব ২৯। পেরেস্ত্রৈকার শুরু থেকেই নিরাপত্তার অভাব বোধ করছিলেন গোপেনদা
পর্ব ২৮। দেশে ফেরার সময় সুরার ছবি সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি পাননি গোপেনদা
পর্ব ২৭। বিপ্লবের ভাঙা হাট ও একজন ভগ্নহৃদয় বিপ্লবী
পর্ব ২৬। ননী ভৌমিকের মস্কোর জীবনযাত্রা যেন দস্তইয়েভস্কির কোনও উপন্যাস
পর্ব ২৫। ননীদা বলেছিলেন, ডাল চচ্চড়ি না খেলে ‘ধুলোমাটি’র মতো উপন্যাস লেখা যায় না
পর্ব ২৪। মস্কোয় শেষের বছর দশেক ননীদা ছিলেন একেবারে নিঃসঙ্গ
পর্ব ২৩। শেষমেশ মস্কো রওনা দিলাম একটি মাত্র সুটকেস সম্বল করে
পর্ব ২২। ‘প্রগতি’-তে বইপুথি নির্বাচনের ব্যাপারে আমার সঙ্গে প্রায়ই খিটিমিটি বেধে যেত
পর্ব ২১। সোভিয়েতে অনুবাদকরা যে পরিমাণ অর্থ উপার্জন করত, সে দেশের কম মানুষই তা পারত
পর্ব ২০। প্রগতি-র বাংলা বিভাগে নিয়োগের ক্ষেত্রে ননীদাই শেষ কথা ছিলেন
পর্ব ১৯। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় নাকি খুব ভালো রুশভাষা জানতেন, প্রমথনাথ বিশী সাক্ষী
পর্ব ১৮। লেডি রাণু মুখার্জিকে বাড়ি গিয়ে রুশ ভাষা শেখানোর দায়িত্ব পড়েছিল আমার ওপর
পর্ব ১৭। একদিন হঠাৎ সুভাষদা আমাদের বাড়ি এসে উপস্থিত ফয়েজ আহমেদ ফয়েজকে নিয়ে
পর্ব ১৬। মুখের সেই পরিচিত হাসিটা না থাকলে কীসের সুভাষ মুখোপাধ্যায়!
পর্ব ১৫। রুশ ভাষা থেকেই সকলে অনুবাদ করতেন, এটা মিথ
পর্ব ১৪। মস্কোয় ননীদাকে দেখে মনে হয়েছিল কোনও বিদেশি, ভারতীয় নয়
পর্ব ১৩। যিনি কিংবদন্তি লেখক হতে পারতেন, তিনি হয়ে গেলেন কিংবদন্তি অনুবাদক
পর্ব ১২। ‘প্রগতি’ ও ‘রাদুগা’র অধঃপতনের বীজ কি গঠনপ্রকৃতির মধ্যেই নিহিত ছিল?
পর্ব ১১। সমর সেনকে দিয়ে কি রুশ কাব্যসংকলন অনুবাদ করানো যেত না?
পর্ব ১০। সমর সেনের মহুয়ার দেশ থেকে সোভিয়েত দেশে যাত্রা
পর্ব ৯। মস্কোয় অনুবাদচর্চার যখন রমরমা, ঠিক তখনই ঘটে গেল আকস্মিক অঘটন
পর্ব ৮: একজন কথা রেখেছিলেন, কিন্তু অনেকেই রাখেননি
পর্ব ৭: লেনিনকে তাঁর নিজের দেশের অনেকে ‘জার্মান চর’ বলেও অভিহিত করত
পর্ব ৬: যে-পতাকা বিজয়গর্বে রাইখস্টাগের মাথায় উড়েছিল, তা আজ ক্রেমলিনের মাথা থেকে নামানো হবে
পর্ব ৫: কোনটা বিপ্লব, কোনটা অভ্যুত্থান– দেশের মানুষ আজও তা স্থির করতে পারছে না
পর্ব ৪: আমার সাদা-কালোর স্বপ্নের মধ্যে ছিল সোভিয়েত দেশ
পর্ব ৩: ক্রেমলিনে যে বছর লেনিনের মূর্তি স্থাপিত হয়, সে বছরই ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার সূচনাকাল
পর্ব ২: যে দেশে সূর্য অস্ত যায় না– আজও যায় না
পর্ব ১: এক প্রত্যক্ষদর্শীর চোখে রাশিয়ার খণ্ডচিত্র ও অতীতে উঁকিঝুঁকি