কয়েক হাজার এক্সট্রা আর্টিস্ট আর কমলকে নিয়ে, দু’মাস শুটিং হল, ‘মরুদনায়গম’। এদিকে, তামিলনাড়ুর কিছু মানুষ অসন্তুষ্ট; দাবি, ইতিহাস বিকৃত হয়েছে। বাধ্য হয়ে, কয়েক কোটি টাকার সেট বাতিল করে, নতুন সেট তৈরি হল কেরালার চালক্কুডিতে। ওই সময়েই, পোখরানে নিউক্লিয়ার বম্ব টেস্টিংয়ের ঘটনায়, হাত গুটিয়ে নিল সহ-প্রযোজক ব্রিটিশ কোম্পানি। এখনও পর্যন্ত, কমল চেষ্টা করছেন স্বপ্নের সিনেমাটা শেষ করতে।
‘স্ক্রিন’ ম্যাগাজিনে, ১৯৯১-এ, খবর বেরল: পরিচালনায় আসছেন দিলীপ কুমার। কাস্ট? তিনি নিজে, সঙ্গে সানি দেওল, মীনাক্ষী শেষাদ্রি, রাজ বব্বর, আমজাদ খান, রাজ কিরণ। প্রোডিউসার সুধাকর বোকাডের ‘ইজ্জতদার’-এর শুটিংয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ডিরেক্টর, কে. বাপাইয়া। শিডিউলটাই মাটি হয়ে যেত, যদি-না এগিয়ে আসতেন দিলীপ কুমার। বাদবাকি অংশ পরিচালনা করলেন তিনিই। তাঁর দক্ষতা দেখে, সুধাকর বললেন পরের সিনেমা, ‘কলিঙ্গ’ ডিরেক্ট করতে। ‘সাজন’ আর ‘প্রহার’-এর পর, সুধাকরের বৃহস্পতি তখন তুঙ্গে। এহেন প্রোডিউসার-ডিরেক্টর জুটির ঘোষণা হতেই, হইচই পড়ে গেল ইন্ডাস্ট্রিতে।
শুরু হল ‘কলিঙ্গ’-র শুটিং। হা কপাল! সুধাকরের পরের সিনেমাগুলো ফ্লপ হওয়ায়, আটকে গেল ফান্ড। কাজ বন্ধ, কয়েক মাস। সেকেন্ড শিডিউল চালু, ১৯৯২-এ। সিনেমার প্রায় ৪০% শেষ করে ফেললেন দিলীপ কুমার। এমনকী, আমজাদের ডাবিংও করিয়ে নিলেন। ওদিকে, রাজ কিরণ বেপাত্তা; প্রচুর খোঁজাখুঁজি করেও, পাওয়া গেল না তাঁকে। এরপর, ’৯২-এর কুখ্যাত দাঙ্গা আর ’৯৩-এর বম্ব ব্লাস্ট। দিলীপ কুমার কিন্তু দাঁত কামড়ে লড়ছিলেন, শেষ করবেনই কাজটা। বিধি বাম! ততদিনে, প্রোডিউসার প্রায় দেউলিয়া। অধরা থেকে গেল দিলীপ কুমারের ডিরেক্টোরিয়াল ব্রিলিয়ান্স।
একটা লোকগীতি থেকে, নয়ের দশকের গোড়ায়, কমল হাসান জানতে পারলেন মরুদনায়গম পিল্লাই ওরফে মহম্মদ ইউসুফ খানের জীবন। স্ক্রিপ্ট লেখা হল, ৪ বছর ধরে। ভারতে সেই প্রথম, সফটওয়্যার ব্যবহার করে স্ক্রিপ্টিং। তিনটে ভার্সন: তামিল, ইংরেজি, ফরাসি। রাইটিং টিমে, তামিল দুনিয়ার বাঘা-বাঘা কবি, লেখক, ঔপন্যাসিক, ইতিহাসবিদ; সঙ্গে, ফরাসি স্ক্রিপ্টরাইটার জঁ ক্লদ কারিয়ের। পরিচালনায়, কমল; সংগীতে, ইলিয়ারাজা। বাজেট, ৮৫ কোটি; যা সেই সময়ের কাঁপাকাঁপি অ্যামাউন্ট। নাম-ভূমিকায়, কমল নিজেই; সঙ্গে নাসিরউদ্দিন শাহ, ওম পুরি, অমরিশ পুরি, কানাড়া সুপারস্টার বিষ্ণুবর্ধন। কেট উইন্সলেটের কাছে প্রস্তাব গেল নায়িকা চরিত্রের; তিনি নাকচ করলেন। ব্রিটিশ আর ফরাসি অ্যাক্টরদের অডিশন হল ইউরোপে। সুবিশাল সেট, তামিলনাড়ুর কারইক্কুডিতে। লঞ্চিং ইভেন্টে, ১৯৯৭-এ, মুখ্যমন্ত্রী করুণানিধি আর শিবাজী গণেশনের পাশে, প্রধান অতিথি, রানি এলিজাবেথ।
কয়েক হাজার এক্সট্রা আর্টিস্ট আর কমলকে নিয়ে, দু’মাস শুটিং হল, ‘মরুদনায়গম’। এদিকে, তামিলনাড়ুর কিছু মানুষ অসন্তুষ্ট; দাবি, ইতিহাস বিকৃত হয়েছে। বাধ্য হয়ে, কয়েক কোটি টাকার সেট বাতিল করে, নতুন সেট তৈরি হল কেরালার চালক্কুডিতে। ওইসময়েই, পোখরানে নিউক্লিয়ার বম্ব টেস্টিংয়ের ঘটনায়, হাত গুটিয়ে নিল সহ-প্রযোজক ব্রিটিশ কোম্পানি। এখনও পর্যন্ত, কমল চেষ্টা করছেন স্বপ্নের সিনেমাটা শেষ করতে। যদিও বলেছেন, ওই চরিত্রটা করার বয়স নিজের আর নেই। ফান্ড জোগাড় করতে পারলে, সন্ধান করছেন কোনও কমবয়সি নায়কের।
ইউথেনেশিয়া বা স্বেচ্ছামৃত্যু নিয়ে, ভারতবাসী নড়েচড়ে বসল ‘গুজারিশ’-এর সময়ে। বাঁচার মতো মরারও অধিকার থাকা উচিত কি না– বিতর্ক, তা নিয়ে। এর ২৬ বছর আগে শুরু, ‘খবরদার’। রোগী, কমল হাসান; ডাক্তার, অমিতাভ বচ্চন। প্রায় ১৬ রিল শুট হওয়ার পর, মতবিরোধ। নির্মাতাদের মনে হল, বিষয়টা যুগোপযোগী নয়; কন্ট্রোভার্সি হতে পারে। আর, অমিতাভ ভাবলেন, ক্লাইম্যাক্সে কমলের চরিত্র মারা গেলে, ডাক্তারের চরিত্রটা ঠাঁই পাবে না অডিয়েন্সের মনে। আটের দশকের প্রথমার্ধে, সেই রিস্ক নিতে রাজি হলেন না মেগাস্টার।
ওই দশকেরই দ্বিতীয়ার্ধে, সুভাষ ঘাই শুরু করলেন, ‘দেবা’। ডাকাতের চরিত্রে, অমিতাভ বচ্চন। সঙ্গে, মীনাক্ষী শেষাদ্রি, রাজ কুমার, শাম্মি কাপুর, ইলা অরুণ। ডাকাত-রূপী বচ্চনের ছবিতে ছেয়ে গেল ফিল্মি ম্যাগাজিন। দিন দশেক শুটিংয়ের পর, নায়ক আর প্রযোজক-পরিচালকের মধ্যে এল ক্রিয়েটিভ ডিফারেন্স। স্ক্রিপ্টে কিছু প্রশ্ন থাকায়, অমিতাভ ডেকে পাঠালেন সুভাষ ঘাইকে। আর, ঘাই চাইলেন বচ্চন আসুন তাঁর অফিসে। এই ‘তুমি বলো, তুমি বলো…’-তে বলির পাঁঠা, ‘দেবা’। চাইলে, অন্য নায়ক নিতেই পারতেন পরিচালক। কিন্তু, কসম খেলেন তিনি, ওই চরিত্রে আর কাউকে বসাবেন না।
এ দেশে, #MeToo শুরু হওয়ার অনেক বছর আগে, কমলের একটা গল্প থেকে সিনেমা, ‘মগলির মাট্টম’; যা তামিল ইন্ডাস্ট্রিতে একটা কাল্ট। ওরই হিন্দি রিমেক, ‘লেডিজ অনলি’। মুখ্য চরিত্রে, রণধীর কাপুর, সীমা বিশ্বাস, শিল্পা শিরোদকর, হীরা রাজাগোপাল। আর, একটা ডেডবডির চরিত্রে, কমল হাসান। পুরো কাজ শেষ হয়েও, রিলিজ হল না।
কাজ শেষ হয়েও, রিলিজ না হওয়ার কথা উঠলে, নিশ্চয়ই মনে পড়বে, ‘লিবাস’। বিষয়: বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক। অভিনয়ে নাসিরউদ্দিন শাহ, শাবানা আজমি, রাজ বব্বর। আটের দশকের শেষ থেকে, গত দশক পর্যন্ত, বারবার ঘোষণা হয়েও, কখনও মুক্তি পেল না। প্রোডিউসার-ডিস্ট্রিবিউটরের ইচ্ছাতে ক্লাইম্যাক্স বদলাতে রাজি হননি পরিচালক, গুলজার। যদিও, ‘খামোশ সা আফসানা পানি সে লিখা হোতা…’ আর ‘সিলি হাওয়া ছু গয়ি সিলা বদন ছিল গয়া…’-র মতো গান পেয়েছি, তাই-বা কম কী?
গান বলতেই মনে পড়ল, ‘শুনো গর সে দুনিয়াওয়ালোঁ…’। গত বছরেই, ২৬ জানুয়ারি উপলক্ষে, একটা প্লে-লিস্ট বানিয়েছে ‘ফিল্মফেয়ার’; সেখানে নয়ের দশকের এই চার্টবাস্টার। সিনেমা, ‘দশ’। শঙ্কর-এহসান-লয়ের ডেবিউ। দুই সিক্রেট এজেন্ট (সলমন খান আর সঞ্জয় দত্ত) আফগানিস্তানে যায় এক খতরনাক টেররিস্টকে ধরতে। টেররিস্টের ভূমিকায়– দিল থাম কে ব্যায়ঠিয়ে– রবিনা ট্যান্ডন। হলিউডের স্টান্ট টিম আনিয়ে, ইউটার রুক্ষ এলাকায় শুরু, শুটিং। হেলিকপ্টার থেকে ঝুলন্ত সলমন আর সঞ্জয়ের আত্মারাম খাঁচাছাড়া। পেশিবহুল দুই নায়কের ভয়জনিত খিস্তির উদ্গারে, হেসে কুপোকাত গোটা ইউনিট। সকলেই আশান্বিত, এ সিনেমা বদলে দেবে ইন্ডিয়ান অ্যাকশন ফিল্মের ধাঁচা। শিডিউলের মাঝেই, হার্ট অ্যাটাকে মারা গেলেন পরিচালক, মুকুল আনন্দ।
প্রোডিউসার নিতিন মনমোহন, সুনীল মানচান্দা, মুকুলের স্ত্রী অনিতা, আর অবশ্যই সলমন ও সঞ্জয়– প্রচুর চেষ্টা করলেন অন্য কাউকে দিয়ে কাজটা শেষ করাতে। একে-একে ভাবা হল জে. পি. দত্ত, প্রিয়দর্শন, বিধু বিনোদ চোপড়া, রমেশ সিপ্পির কথা। মুশকিল, দুটো। হয় তাঁরা ধরতে পারলেন না মুকুলের ভিশন, নইলে কাস্ট ও ক্রুয়ের ডেট মিলল না ঠিকঠাক। দু’-আড়াই দশক আগে, টেকনোলজির যে বাহাদুরি দেখাতে চেয়েছিলেন মুকুল, সে ফুল কুঁড়িতে ঝরে গেল।
ধরা যাক, ‘ইজাজত’ মিথ্যে। সুখে ঘরকন্না করছেন রেখা আর নাসিরউদ্দিন শাহ। তাঁদের সন্তান, আমির খান। আমিরের চরিত্রটা, অনাথ। নয়ের দশকে সে খুঁজছে বাবা-মাকে। এক বিজ্ঞানীর (বিজয় আনন্দ) বানানো টাইম মেশিনে চড়ে, সে পৌঁছয় ছয়ের দশকে, তাদের কাছে। প্রায় ৮০% শুট হওয়ার পর, আটকে গেল ফান্ড। শেখর কাপুরের দ্বিতীয় কল্পবিজ্ঞানের গল্প, ‘টাইম মেশিন’ বন্ধ হয়ে গেল।
‘টাইম মেশিন’-এ, টাইম ট্র্যাভেলের অনেক মজার সিকোয়েন্স ছিল। যেমন, আমিরের চরিত্রের সঙ্গে, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের প্রাক্কালে, দেখা হয় কৃষ্ণ আর অর্জুনের। আবার, ছয়ের দশকের শেষে, বম্বের (মুম্বই) বাসস্টপে, দেখা হয় স্ট্রাগলার অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে। অমিতাভকে সে বলে, ‘সেলিম-জাভেদের কাছে যাও, তুমি খুব বড় স্টার হবে।’ সংগীতে, লক্ষ্মীকান্ত-প্যারেলাল; গান বেঁধেছিলেন নাইন্টিজ আর সিক্সটিজের সোনালি সুরে।
মান্ডুর রানি, কবি ও গায়িকা, রূপমতী আর সুলতান বাজ বাহাদুরের প্রেমগাথা। নর্মদা-তীরে, সে এক জ্যান্ত রূপকথা। সাতের দশকের শেষে, কামাল আমরোহি পর্দায় আনতে চাইলেন কাহিনিটা। মুখ্য ভূমিকায়, রাজেশ খান্না আর রাখী। প্রথমবার একসঙ্গে অভিনয় করতে এলেন, রাজ কাপুর, শাম্মি কাপুর, অশোক কুমার। বিশাল মহরৎ, সান-এন-স্যান্ড হোটেলে; মহরত শটও, ওখানে। বম্বের পথঘাট ভরে গেল বড় বড় পোস্টার আর হোর্ডিংয়ে। জান নিসার আখতারের কথায় সুর দিলেন খৈয়াম। গান শুনে, এত মুগ্ধ হলেন রাজেশ খান্না, ব্র্যান্ড-নিউ গাড়ি উপহার দিলেন সুরকারকে। শুট হল ৬টা রিল। কিন্তু, ওই ফিল্মের সাংঘাতিক লার্জ স্কেলে তাল মেলাতে পারলেন না প্রোডিউসার। বন্ধ হয়ে গেল ‘মজনুঁ’।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
ভারতের প্রথম সিনেমাস্কোপ ফরম্যাটে, গীতা দত্তের অ্যাক্টিং ডেবিউ, ‘গৌরী’। এস. ডি. বর্মণের সুরে দুটো গান রেকর্ড করে, দুটো দৃশ্য শুট করে, বন্ধ করলেন গুরু। সুনীল দত্ত আর ওয়াহিদা রেহমানকে নিয়ে, ‘রাজ’; পরে, সুনীলের জায়গায় এলেন নিজেই। সুরকার আর. ডি. বর্মণের ডেবিউতে গান গাইলেন গীতা দত্ত, আশা ভোঁসলে, শমশাদ বেগম। সিমলায় ৫-৬টা রিল শুট করে, এডিট করে, বাতিল করলেন তিনি।
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
অসম্পূর্ণ বা অসমাপ্ত সিনেমা প্রসঙ্গে, দু’জনের নাম না বললে, ঘোরতর পাপ হতে পারে। হ্যাঁ, ঋত্বিক ঘটক আর গুরু দত্ত। দু’জনেই, সম্ভবত, একাধারে সৃষ্টি ও বিনাশের ঈশ্বর। ঠিকঠাক ডেটা পেলে, হয়তো দেখা যাবে, দু’জনে যতগুলো কাজ সম্পূর্ণ করেছেন, হেলায় ফেলে দিয়েছেন তার বেশি। এমনকী, দিন সাতেক শুটিংয়ের পর, গুরু দত্ত বাতিল করেছিলেন ‘পিয়াসা’-ও। পরে, নতুনভাবে স্ক্রিপ্ট ঘষামাজা করে, বেরল ওই দর্দ-এ-দিল।
ভারতের প্রথম সিনেমাস্কোপ ফরম্যাটে, গীতা দত্তের অ্যাক্টিং ডেবিউ, ‘গৌরী’। এস. ডি. বর্মণের সুরে দুটো গান রেকর্ড করে, দুটো দৃশ্য শুট করে, বন্ধ করলেন গুরু। সুনীল দত্ত আর ওয়াহিদা রেহমানকে নিয়ে, ‘রাজ’; পরে, সুনীলের জায়গায় এলেন নিজেই। সুরকার আর. ডি. বর্মণের ডেবিউতে গান গাইলেন গীতা দত্ত, আশা ভোঁসলে, শমশাদ বেগম। সিমলায় ৫-৬টা রিল শুট করে, এডিট করে, বাতিল করলেন তিনি।
বিশ্বজিৎ আর নন্দাকে নিয়ে, গুরু দত্তের প্রোডাকশনে বাংলা ফিল্ম, ‘একটুকু ছোঁয়া’। একটা দৃশ্য শুট করে, বন্ধ। সেলিম খান তখনও স্ক্রিপ্টরাইটার হননি; বম্বেতে ঘুরছেন নায়ক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। তাঁকে আর তনুজাকে নিয়ে, ‘মোতি কি মৌসি’। পরিচালনা করার কথা, গুরুর অ্যাসিস্ট্যান্ট, নিরঞ্জনের। হঠাৎ মারা গেলেন নিরঞ্জন। সাধনার বিপরীতে, নায়ক গুরু দত্ত, ‘পিকনিক’। গান-টান শুট হয়েও, বাতিল।
আরব্য রজনী অনুসরণে, সিমি গরেওয়ালকে নিয়ে, ‘কানিজ’। ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধবরাও আশ্চর্য, আলিবাবার মতো বালখিল্য চরিত্রে কাজ করবেন গুরু! তিনি বললেন, গতানুগতিক দুনিয়া থেকে আলাদা চিন্তা করলে, আলিবাবা একদম সমসাময়িক। ফিল্মটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, সিমি গেলেন সিনে আর্টিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের কাছে, বকেয়া পারিশ্রমিক পেতে।
পার্ক সার্কাসে, রূপশ্রী স্টুডিওতে, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে, শুরু হল ‘বেদেনী’; পরিচালক, নির্মল দে। আচমকা, একদিন, ভয়ংকর আগুনে ছারখার স্টুডিও। শুটিং বন্ধ, টাকার অভাবে। বছর দুয়েক পর, ফান্ড জোগাড় করতে, প্রযোজক সুনীল রায় বন্ধক রাখলেন নিজের বাড়ি। কাজকর্ম শিফট হল ইন্দ্রপুরী স্টুডিওতে। পরিচালনার ডাক পেলেন নবাগত ঋত্বিক ঘটক। নতুন করে স্ক্রিপ্ট লিখলেন তিনি; নাম রাখলেন, ‘অরূপকথা’। নায়িকা, কেতকী দত্ত; সঙ্গে বিজন ভট্টাচার্য, অভি ভট্টাচার্য, শোভা সেন।
বোলপুরে আর ঘাটশিলায়, শেষ হল ২০ দিনের আউটডোর। কলকাতায় ফিরে, ল্যাবে বসে, মালুম হল, ফিল্মের রাশ পুরো অন্ধকার; কিছুই ঠাহর হয় না। ক্যামেরার টেকনিক্যাল গন্ডগোলটা, গত ২০ দিন, বুঝতেই পারেননি কেউ। ভরাডুবি হল সুনীল রায়ের, ইতিহাস ভুলে গেল তাঁকে। আর, কেতকী দত্ত, শুটিং চলাকালীন মিসক্যারেজ হল যাঁর প্রথম গর্ভ, তাঁর ভাঁড়ারে থেকে গেল শুধু আউটডোরের ক’খানা ফোটোগ্রাফ।
জীবনের মতো, সিনেমারও, বোধহয়, নির্দিষ্ট নিয়তি থাকে। আমরা খালি চেষ্টা করতে পারি, নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।
…পড়ুন ফ্ল্যাশব্যাক-এর পুরনো পর্ব…
ফ্ল্যাশব্যাক পর্ব ১৯: ঘুটঘুটে জঙ্গলের ভেতর ১৫-২০ হাজার আদিবাসী হাঁ করে দেখছে, হ্যাঁ, ডকুমেন্টারি
ফ্ল্যাশব্যাক পর্ব ১৮: রাজ কাপুরের স্টুডিওতে ঢুকতে চান? রাধু কর্মকারের নাম বলুন
ফ্ল্যাশব্যাক পর্ব ১৭: যে ছায়ার আলোতে বড় হয়েছেন শ্রীদেবী, রজনীকান্ত, কমল হাসান
ফ্ল্যাশব্যাক পর্ব ১৬: যাদের ১৮ হয়নি, তারা এসব বুঝবে না; আর, যাদের ১৮ হয়েছে, তারা মজা পাবে
ফ্ল্যাশব্যাক পর্ব ১৫: পারিশ্রমিকের কথা না ভেবেই নপুংসকের চরিত্রে কাজ করতে চেয়েছিলেন শাহরুখ খান
ফ্ল্যাশব্যাক পর্ব ১৪: ‘আমি গানের দোকান খুলতে আসিনি’, যশ চোপড়াকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ‘দিল চিজ ক্যা হ্যায়’-এর গীতিকার
ফ্ল্যাশব্যাক পর্ব ১৩: পায়ে বেত মেরে নাচাতে হল অমিতাভ বচ্চনকে
ফ্ল্যাশব্যাক পর্ব ১২: মেনস্ট্রিম হিরোদের ঘায়েল করেছিল শাকিলার ঢেউ
ফ্ল্যাশব্যাক পর্ব ১১: লকআপে বসে স্টোরিটেলিংয়ের জোরে পুলিশকে বন্ধু বানিয়েছিলেন রাম গোপাল বর্মা
ফ্ল্যাশব্যাক পর্ব ১০: ‘টেররিস্ট’ সন্দেহে গ্রেফতার, পরে ‘ভক্ত কবির’-এ অভিনয়ের জন্য ভিড় জমেছিল প্রণামের
ফ্ল্যাশব্যাক পর্ব ৯: টিপ টিপ বরসা পানি ও বুক ঢিপ ঢিপ নাইন্টিজ
ফ্ল্যাশব্যাক পর্ব ৮: অমিতাভ বচ্চনকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি যে হোটেলে
ফ্ল্যাশব্যাক পর্ব ৭: শচীন দেব বর্মনের ‘ভাটিয়ালি’ শুনলেই, হো হো হাসতেন রাহুল আর কিশোর
ফ্ল্যাশব্যাক পর্ব ৬: বর্ষা এনেছিল দেব আনন্দের ‘গাইড’
ফ্ল্যাশব্যাক পর্ব ৫: ভারতের প্রথম অভিনেতা যিনি সেক্রেটারি রেখেছিলেন
ফ্ল্যাশব্যাক পর্ব ৪: ‘আমির খান কে? প্রশ্নটা করুন আপনার পাশের বাড়ির কিশোরীকে।’
ফ্ল্যাশব্যাক পর্ব ৩: যে কারণে নাসিরউদ্দিনের বেজায় গুসসা হয়েছিল!
ফ্ল্যাশব্যাক পর্ব ২: বাতের ব্যথাই ছিল হৃষীকেশের অস্ত্র
ফ্ল্যাশব্যাক পর্ব ১: অন্তর্বাস ছাড়াই প্রথম শুটিংয়ে ধর্মেন্দ্র, রেগে কাঁই ড্রেসার
‘মহুয়া’র প্রচ্ছদের নেপথ্যে নন্দলালের আঁকা সহজ পাঠের ছবি রবীন্দ্রনাথকে নিশ্চয়ই প্রাণিত করেছিল। সহজ পাঠের আগে আমরা দেখেছি, ১৯২২ সালের শেষে আন্দ্রে কারপেলেস প্যারিস থেকে এনেছিলেন একগুচ্ছ কাঠখোদাই। এমনকী, বিশের দশকে রবীন্দ্রনাথ যে কয়েকবার বিদেশ সফরে গিয়েছেন, সেখানে জার্মানিতে ও ফ্রান্সে তাঁর রীতিমত চেনাজানা ঘটেছিল কাঠখোদাই মাধ্যমটির সঙ্গে।