আমি যে ওয়ার্ডের রোগী সেখানে স্বাভাবিকভাবেই শয্যাশায়ী রোগী কেউ ছিল না। সকলেই বেশ সচল। গ্রীষ্মকালে তাদের কর্মতৎপরতা লক্ষ করার মতো। চত্বরে ঘোরাঘুরি, গল্পগুজব, দাবাখেলা ইত্যাদি চলত। খাবারের ঘণ্টা পড়লে সকলেই থালাবাটি হাতে বেরিয়ে পড়ত, অনেকে ক্যান্টিনে না গিয়ে খাবার ঘরে এনেই খেত। হাসপাতালের খাবারের সঙ্গে বাড়ি থেকে পাওয়া খাবারও যোগ হত, তারপর অনেকে আবার বাড়ি থেকে পাঠানো আনাজ কেটে দিব্যি স্যালাডও বানাত।
৩৩.
সোভিয়েত স্বাস্থ্যপরিষেবা সর্বস্তরে সহজলভ্যতা এবং তার ভালো-মন্দ সমস্ত কিছু মিলিয়ে আমার কাছে অনবদ্য বলে মনে হয়েছে।
দেশে থাকতে, আমাদের ছাত্রাবস্থায় দুর্গোৎসব উপলক্ষে কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় ন্যাশনাল বুক এজেন্সির যে সমস্ত স্টল বসত, পাড়ার সেরকম একটাতে স্বেচ্ছাকর্মী হিসেবে আমরা সোভিয়েত ইউনিয়নে মুদ্রিত বাংলা, ইংরেজি ভাষায় অনূদিত বই সোৎসাহে বিক্রি করতাম। সেই সময় ‘Painless Childbirth’ নামে একটি পুস্তিকা চোখে পড়েছিল। সেটা আমরা বিক্রি করতাম কিন্তু বিষয়বস্তু শুনে, দেখার কৌতূহল কখনও হয়নি।
কার্যোপলক্ষে সোভিয়েত ইউনিয়নে আসার বেশ কিছুকাল পরে আমার সেই কৌতূহল জাগ্রত হয়েছিল। তখনই পুস্তিকাটির অভাব বিশেষ করে অনুভব করলাম আমার স্ত্রীকে প্রসূতিসদনে ভর্তি করার সময়। আমরা যখন বাইরের হলঘরে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জমা দিচ্ছিলাম সেই সময় ভেতর থেকে প্রসূতিদের প্রসবযন্ত্রণার যে রকম আর্তনাদ শোনা যাচ্ছিল, তা পিলে চমকানোর মতো! প্রসূতির মনের অবস্থা যে কী হতে পারে, সে আর বলার নয়। পরে শুনেছি, বেশিরভাগ প্রসবই স্বাভাবিক উপায়ে করানোর চেষ্টা করা হয়। সিজেরিয়ন পারতপক্ষে কাম্য নয়। তাহলে Painless Childbirth-টা কি নেহাতই প্রচার? এর কোনও সদুত্তর পাইনি। জিজ্ঞাসাবাদ করেও ওই পুস্তিকাটির কোনও হদিশ পাইনি।
চিকিৎসার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক পদ্ধতির ওপরই এদেশের ডাক্তারদের বরাবর ঝোঁক দেখে এসেছি। দাঁত তোলার ব্যাপারে তেমন কোনও জটিলতা না থাকলে আগে বা পরে কোনও অ্যান্টিবায়োটিকের বালাই নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দাঁত তোলার পর খোলা জায়গাটা সেলাইও করা হয় না– যথারীতি রোগীকে প্রয়োজনীয় কতকগুলি নির্দেশ দিয়ে খোলা জায়গায় তুলো গুঁজে দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। সর্দি-কাশির ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ডাক্তাররা পর্যন্ত অনেক সময় পিঠে সরষের পলেস্তরা লাগানোর নির্দেশ দেন। আবার স্পিরিট জ্বালিয়ে তার গ্যাসভর্তি বেশ কয়েকটা কাপিং গ্লাস পিঠে আটকে দিয়ে টোটকা চিকিৎসা– তাও এখানকার চিকিৎসাশাস্ত্রে স্বীকৃত। সেসব সরঞ্জাম সরকারি ওষুধের দোকানেও কিনতে পাওয়া যায়। এছাড়া যেমন ভোদ্কা দিয়ে মালিশ, তেমনই গোলমরিচের গুঁড়ো দিয়ে কিঞ্চিৎ ভোদ্কা সেবন– যে কোনওটাই চিকিৎসার একটা অঙ্গ হতে পারে। অর্থাৎ, এক্ষেত্রে লাগানোর এবং সেবনের ওষুধ একই হতে কোনও আপত্তি নেই।
স্বাস্থ্য পরিষেবা সম্পর্কে এত কিছু বলার পর হাসপাতালের ওয়ার্ডের ভেতরের অবস্থা সম্পর্কেও দু’-একটি কথা না বললে নয়। শীতকালে ভেতরে দমচাপা অবস্থা। মাঝে মাঝে তাজা হাওয়া চালানোর জন্য বড় জানলার ওপরের অংশে বিশেষভাবে তৈরি বায়ু চলাচলের ফোকরটা খোলা হয় বটে, কিন্তু বাইরের ঠান্ডার দাপটে সে আর কতক্ষণ খুলে রাখা যায়? ভালো আবহাওয়া থাকলে দিনের বেলায় ভারী পোশাক-পরিচ্ছদ পরে চত্বরে ঘোরা যায় ঠিকই, কিন্তু সেও বেশিক্ষণের জন্য নয়। পুরুষ-বিভাগের টয়লেটে রাতের বেলায় ধূমপায়ীদের একচ্ছত্র আধিপত্য। অবশ্য ওয়ার্ডের ভেতরে ধূমপানের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সেখানে গোপনে মদ্যপান যে একেবারে চলত না, তা নয়।
প্রথমবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় সময় বেশ কিছু পুরনো খবরের কাগজ বাড়ি থেকে সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল। খুবই কাজে লেগেছিল। টয়লেট এত নোংরা যে ওগুলো না পেতে সিটে বসাই যায় না। এই অভিজ্ঞতার পরে আমি শীতের দিনেও ভোর হতে না হতে টয়লেটের কাজ সেরে নিতাম। সেই সময় টয়লেট ফাঁকা তো থাকতই, মাঝরাতে সাফাই করার ফলে দিব্যি ঝকঝকে তকতকে থাকত। অবশ্য স্নানঘরে বেশিরভাগ সময় গরমজল না থাকার ফলে স্নান কদাচিৎ করা যেত।
……………………………………………..
শনি-রবিবার ডাক্তার, নার্সের কমতি থাকত, ফলে রোগীদের ওপর নজরদারিও অনেকটা শিথিল হয়ে পড়ত। এই সুযোগে অনেক রোগী বাইরে ঝোপের আড়ালে গিয়ে হাসপাতালের পোশাক পালটে ভালো জামাকাপড় পরে গোপনে বাড়ি ঘুরে আসত– এমনকী, বাড়িতে রাতও কাটিয়ে আসত। সে অপরাধ অবশ্য আমিও একবার সাহস করে করে ফেলেছিলাম। ধরা পড়িনি।
……………………………………………..
আমি যে ওয়ার্ডের রোগী সেখানে স্বাভাবিকভাবেই শয্যাশায়ী রোগী কেউ ছিল না। সকলেই বেশ সচল। গ্রীষ্মকালে তাদের কর্মতৎপরতা লক্ষ করার মতো। চত্বরে ঘোরাঘুরি, গল্পগুজব, দাবাখেলা ইত্যাদি চলত। খাবারের ঘণ্টা পড়লে সকলেই থালাবাটি হাতে বেরিয়ে পড়ত, অনেকে ক্যান্টিনে না গিয়ে খাবার ঘরে এনেই খেত। হাসপাতালের খাবারের সঙ্গে বাড়ি থেকে পাওয়া খাবারও যোগ হত, তারপর অনেকে আবার বাড়ি থেকে পাঠানো আনাজ কেটে দিব্যি স্যালাডও বানাত। অনেক সময় খাবার টেবিল ভোজসভার টেবিলের মতো আকার ধারণ করত। গ্রীষ্মকালে সেসব বাড়তি খাবার অবশ্য খোলা জানলা দিয়ে বাইরে থেকে পাচার হয়ে চলে আসত। শীতকালে সে উপায় ছিল না।
শনি-রবিবার ডাক্তার, নার্সের কমতি থাকত, ফলে রোগীদের ওপর নজরদারিও অনেকটা শিথিল হয়ে পড়ত। এই সুযোগে অনেক রোগী বাইরে ঝোপের আড়ালে গিয়ে হাসপাতালের পোশাক পালটে ভালো জামাকাপড় পরে গোপনে বাড়ি ঘুরে আসত– এমনকী, বাড়িতে রাতও কাটিয়ে আসত। সে অপরাধ অবশ্য আমিও একবার সাহস করে করে ফেলেছিলাম। ধরা পড়িনি। আমার পাশের বেডের একজন বয়োবৃদ্ধ মিলিটারি অফিসার, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফ্রন্টে লড়াই করে কৃতিত্বের জন্য একাধিক সামরিক পদকের অধিকারী হয়েছিলেন, তিনিও আমার দেখাদেখি পরের সপ্তাহে বাড়ি যাওয়ার উদ্যোগ করলেন। কিন্তু উনি ওয়ার্ডের ভেতরেই জামাকাপড় পালটে সামরিক ধরাচুড়ো পরে বুকে দিব্যি সামরিক পদক ঝুলিয়ে বাইরে পা বাড়াতেই সিস্টারের নজরে পড়ে গেলেন। সিস্টারের এক ধমকে কাঁচুমাচু হয়ে বেডে ফিরে ধরচুড়ো ছেড়ে গুম হয়ে বসে রইলেন।
একবার এক অল্পবয়সি রোগীর সঙ্গে আমার বেশ খাতির হয়ে গিয়েছিল। আমার অনেক আগেই সে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পায়, কিন্তু সে তারপরও হাসপাতালে এসে আমার সঙ্গে দেখা করে যেত, কখনও-সখনও এটা ওটা খাবার এবং সিগারেটও দিয়ে যেত– এমনকী ফুলও। পেশায় সে দূরপাল্লার ট্রাকের ড্রাইভার, হাসপাতালের প্রাচীরের ঠিক ওপাশেই তাদের গাড়ির ডিপো। একবার সে দুপুর নাগাদ একজন মাঝবয়সি সঙ্গীকে নিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে এল। ইয়া লম্বা-চওড়া দশাসই তার চেহারা, বগলে একটা ঢাউস প্যাকেট। আলাপ করিয়ে দিয়ে বলল, ‘আমাদের ব্রিগেডিয়ার।’ বুঝলাম ওদের কর্মীবাহিনীর প্রধান। এদেশে কোনও কর্মীদলকে যদি ‘অত্রিয়াদ্’ বা রেজিমেন্ট, অর্থাৎ বাহিনী বলা হয়, বাহিনীর যিনি প্রধান তিনি ব্রিগেডিয়ার। ওদের সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে এলাম। গল্পগুজব করতে করতে ওদের ট্রাকের ডিপো লাগোয়া প্রাচীরের কাছে চলে এসেছি, এমন সময় ওরা আমাকে নিয়ে পাশের একটা ঝোপের ভেতরে ঢুকে পড়ল। সেখানে ঝোপের মাঝখানে একটা পরিষ্কার ফাঁকা জায়গায় দিব্যি বসার উপযোগী করে পিঁড়ির মতো কয়েকটা পাথরের টুকরো পাতা। আমাকে নিয়ে ওরা সেখানে বসল। ব্রিগেডিয়ার তার প্যাকেটের ভেতর থেকে এক এক পাঁইটের তিনটে বোতল আর বেশ কিছু খাবার-দাবার বের করে একটা খবরের কাগজের ওপর বিছিয়ে রাখল। পকেট থেকে চটপট তিনটে গ্লাসও বেরিয়ে এল। এর কোনওটাই এদেশের শ্রমিক শ্রেণির মানুষের কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত কিছু নয়। এক পাঁইটের একটা বোতলে ঠিক তিন গ্লাসই ভোদ্কা ধরে। একেক জনের ভাগে তিন গ্লাস। সঙ্গে সঙ্গে আমার মনে পড়ে গেল, মার্কিন লেখক গ্রাহাম গ্রিন সম্পর্কে একটা খোশগল্প।
একবার তিনি নাকি এদেশে ঘুরতে এসেছিলেন। মস্কোর পাঁচতারা হোটেলে ছিলেন। একদিন হোটেলের ঘরে বসে থেকে থেকে বিরক্ত হয়ে বাইরে বেড়িয়ে পড়লেন– কোনও দোভাষী ছাড়াই। তখন সন্ধ্যা। রাস্তা থেকে একটা ট্যাক্সিও ধরলেন। কিন্তু যাবেন কোথায়? তিনি শুধু মস্কোর শেষ প্রান্তের ‘মারিনো রোশ্শা’ নামে একটি জায়গার কথাই জানেন। তিনি সেই জায়গার নাম করতে ট্যাক্সি ড্রাইভার তাঁকে সেখানে নিয়ে গেল। তিনি একটা ঝলমলে দোকানের সামনে নেমে ট্যাক্সি ছেড়ে দিলেন। দূর থেকে দেখতে পেলেন দোকানের বাইরে কাচের দরজার দু’ধারে দুই স্যাঙাত দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে ঢুকবেন কি ঢুকবেন না ভাবছেন, এমন সময় দেখতে পেলেন– ওদের মধ্যে একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে তর্জনী তুলল। তার দেখাদেখি দ্বিতীয়জনও তর্জনী তুলল। এবার দু’জনেই লেখকের কাছে এগিয়ে এসে আকারে-ইঙ্গিতে তাকে একটা রুবল খসাতে বলল। একটা রুবল পেয়ে ওরা দু’জনেই দোকানের ভেতরে ঢুকে গেল। কিছুক্ষণ বাদে একটা ভোদ্কার বোতল কিনে এনে পকেট থেকে গ্লাস বের করে সমান ভাগ করে একটা গ্লাস লেখকের দিকে বাড়িয়ে দিল। ওদের দেখাদেখি লেখকও এক চুমুকে সেটা খেয়ে ফেললেন। এক বোতল ভোদ্কার দাম তখন ওই তিন রুবলই ছিল। এইরকম আকার-ইঙ্গিত এবং ভোদ্কা কেনা ও তার সদ্বব্যবহার নাকি তিনবার হয়েছিল। তারপর লেখকের আর কোনও জ্ঞান ছিল না– পরদিন সকালে কোনও এক পার্কের বেঞ্চিতে তাঁকে ঘুমন্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। এটা নিছক একটা চুটকি হওয়াই স্বাভাবিক। আমার দুই সঙ্গীকে সে গল্প করতে তারা আমাকে অভয় দিয়ে বলল, এরকম কিছু হওয়ার সম্ভাবনা এক্ষেত্রে নেই। যেহেতু অঢেল সময় আছে আর সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণে খাবারও আছে।
…………………………………………..
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল
…………………………………………..
ব্রিগেডিয়ার এক সময় সোভিয়েত সেনাবাহিনীতে ছিলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রন্টে লড়াই করেছিলেন। যুদ্ধে আহতও হয়েছিলেন। এমনকী পেটের কাছাকাছি জামা তুলে একটা আঘাতের চিহ্ন দেখিয়ে বললেন, ভেতরে এখনও একটা গুলি বিঁধে আছে– অপারেশন করে সেটা বের করা সম্ভব হয়নি। যুদ্ধের সময় কোথায় কখন ‘কমরেড স্তালিন’ কাকে কী বলেছিলেন, কোন সেনাপতিকে কর্তব্যে অবহেলার জন্য কীভাবে গালাগাল দিয়েছিলেন, রণাঙ্গন থেকে পালিয়ে এসেই খ্রুশ্শ্যেভ স্তালিনের সামনে বিবরণ দিতে গেলে স্তালিন তাঁকে কলার ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে কীরকম তুলোধোনা করেছিলেন– সেসব মাঝে মাঝে খিস্তিখেউড়ের পাঁচফোড়ন দিয়ে সংলাপের আকারে সাজিয়ে এমনওভাবে বিবৃতি দিয়ে যেতে লাগলেন ব্রিগেডিয়ার, যেন প্রত্যক্ষদর্শীর ধারাবিবরণী।
সে যাই হোক, ওরা সেদিন কথা রেখেছিল। আমার অবস্থা গ্রাহাম গ্রিনের মতো হয়নি।
…পড়ুন রুশকথা-র অন্যান্য পর্ব…
পর্ব ৩২। মস্কোর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে সাধারণ ডাক্তাররা অধিকাংশই মহিলা ছিলেন
পর্ব ৩১। আমার স্ত্রী ও দুই কন্যা নিজভূমে পরবাসী হয়ে গিয়েছিল শুধু আমার জন্য
পর্ব ৩০। শান্তিদা কান্ত রায়ের প্রিয় কাজ ছিল মস্কোয় ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের কমিউনিজম পড়ানো
পর্ব ২৯। পেরেস্ত্রৈকার শুরু থেকেই নিরাপত্তার অভাব বোধ করছিলেন গোপেনদা
পর্ব ২৮। দেশে ফেরার সময় সুরার ছবি সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি পাননি গোপেনদা
পর্ব ২৭। বিপ্লবের ভাঙা হাট ও একজন ভগ্নহৃদয় বিপ্লবী
পর্ব ২৬। ননী ভৌমিকের মস্কোর জীবনযাত্রা যেন দস্তইয়েভস্কির কোনও উপন্যাস
পর্ব ২৫। ননীদা বলেছিলেন, ডাল চচ্চড়ি না খেলে ‘ধুলোমাটি’র মতো উপন্যাস লেখা যায় না
পর্ব ২৪। মস্কোয় শেষের বছর দশেক ননীদা ছিলেন একেবারে নিঃসঙ্গ
পর্ব ২৩। শেষমেশ মস্কো রওনা দিলাম একটি মাত্র সুটকেস সম্বল করে
পর্ব ২২। ‘প্রগতি’-তে বইপুথি নির্বাচনের ব্যাপারে আমার সঙ্গে প্রায়ই খিটিমিটি বেধে যেত
পর্ব ২১। সোভিয়েতে অনুবাদকরা যে পরিমাণ অর্থ উপার্জন করত, সে দেশের কম মানুষই তা পারত
পর্ব ২০। প্রগতি-র বাংলা বিভাগে নিয়োগের ক্ষেত্রে ননীদাই শেষ কথা ছিলেন
পর্ব ১৯। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় নাকি খুব ভালো রুশভাষা জানতেন, প্রমথনাথ বিশী সাক্ষী
পর্ব ১৮। লেডি রাণু মুখার্জিকে বাড়ি গিয়ে রুশ ভাষা শেখানোর দায়িত্ব পড়েছিল আমার ওপর
পর্ব ১৭। একদিন হঠাৎ সুভাষদা আমাদের বাড়ি এসে উপস্থিত ফয়েজ আহমেদ ফয়েজকে নিয়ে
পর্ব ১৬। মুখের সেই পরিচিত হাসিটা না থাকলে কীসের সুভাষ মুখোপাধ্যায়!
পর্ব ১৫। রুশ ভাষা থেকেই সকলে অনুবাদ করতেন, এটা মিথ
পর্ব ১৪। মস্কোয় ননীদাকে দেখে মনে হয়েছিল কোনও বিদেশি, ভারতীয় নয়
পর্ব ১৩। যিনি কিংবদন্তি লেখক হতে পারতেন, তিনি হয়ে গেলেন কিংবদন্তি অনুবাদক
পর্ব ১২। ‘প্রগতি’ ও ‘রাদুগা’র অধঃপতনের বীজ কি গঠনপ্রকৃতির মধ্যেই নিহিত ছিল?
পর্ব ১১। সমর সেনকে দিয়ে কি রুশ কাব্যসংকলন অনুবাদ করানো যেত না?
পর্ব ১০। সমর সেনের মহুয়ার দেশ থেকে সোভিয়েত দেশে যাত্রা
পর্ব ৯। মস্কোয় অনুবাদচর্চার যখন রমরমা, ঠিক তখনই ঘটে গেল আকস্মিক অঘটন
পর্ব ৮: একজন কথা রেখেছিলেন, কিন্তু অনেকেই রাখেননি
পর্ব ৭: লেনিনকে তাঁর নিজের দেশের অনেকে ‘জার্মান চর’ বলেও অভিহিত করত
পর্ব ৬: যে-পতাকা বিজয়গর্বে রাইখস্টাগের মাথায় উড়েছিল, তা আজ ক্রেমলিনের মাথা থেকে নামানো হবে
পর্ব ৫: কোনটা বিপ্লব, কোনটা অভ্যুত্থান– দেশের মানুষ আজও তা স্থির করতে পারছে না
পর্ব ৪: আমার সাদা-কালোর স্বপ্নের মধ্যে ছিল সোভিয়েত দেশ
পর্ব ৩: ক্রেমলিনে যে বছর লেনিনের মূর্তি স্থাপিত হয়, সে বছরই ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার সূচনাকাল
পর্ব ২: যে দেশে সূর্য অস্ত যায় না– আজও যায় না
পর্ব ১: এক প্রত্যক্ষদর্শীর চোখে রাশিয়ার খণ্ডচিত্র ও অতীতে উঁকিঝুঁকি
কাগজ বেরনোর পর দেখা গেল উপন্যাসের নাম হয়ে গেছে ‘শালিকার ঠোঁট’! পূর্ণেন্দুদা রেগে আগুন। পিঠে হাত দিয়ে সন্দীপন তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন, ‘কী করবে ভাই বল! ছাপাখানার ভূত কাউকেই রেহাই দেয় না রে।’ পরে জানা গিয়েছিল এটা সন্দীপনদারই সূক্ষ্ম হাতের কাজ।
তুলনাহীন স্পিভাকের অনর্গল যুক্তিবাদী বাগ্মিতা। তাঁর সন্ধান ও প্রকাশের, তাঁর যুক্তির এবং ভাষার কত যে মুহূর্ত জ্বলজ্বল করছে স্মৃতিতে কী বলব! তখন তিনি তাঁর বিতর্ক উজ্জ্বল, বোধ শাণিত, ভাষায় অব্যর্থ যৌবনে। গোল টেবিলের আর সবাই বিদেশি পুরুষ। একমাত্র নারী তিনি। এবং বাঙালি। হাতে জ্বলছে সিগারেট। সিগারেট মুখে তীব্র আগুনবিন্দু যেন তাঁরই দার্শনিক চেতনা, তাঁরই ধ্যানবিন্দু !