লেনিনের মরদেহ স্মৃতিসৌধ থেকে অপসারিত হবে কি না এই প্রশ্নে বর্তমান রাশিয়ার জনসমাজে মতভেদ থাকলেও স্থাপত্যকর্ম হিসেবে স্মৃতিসৌধের মূল্য সম্পর্কে মতভেদ খুব কমই আছে। এই অনবদ্য সৃষ্টির পরিকল্পনা করেছিলেন স্থপতি আলেক্সেই শুসেভ। মরচের মতো রঙের আভাসযুক্ত লাল মর্মর পাথরের এই অপরূপ স্থাপত্যকর্ম তার পশ্চাদ্ভাগে অবস্থিত ক্রেমলিনের প্রাচীর, সম্মুখ ভাগের রেড স্কোয়ার এবং পরিপার্শ্বের প্রাচীন স্থাপত্য সমাহারের সঙ্গে পূর্ণ সংগতি রক্ষা করে এমন অঙ্গাঙ্গি ভাবে মিশে গেছে, নন্দনতাত্ত্বিকরা পর্যন্ত তার সৌন্দর্য অস্বীকার করতে পারেন না। দেশের সাধারণ মানুষের চোখে একে ছাড়া আজকের রেড স্কোয়ার কল্পনাই করা যায় না। ইতিহাসের দোহাই দিয়ে যদি কেউ এর অপসারণ দাবি করেন, সে-দাবিও ধোপে টেকে না, কেননা এও তো ইতিহাসের একটি পর্ব।
৬৪.
১৯৪৬ সালের শরৎকালে লেনিন স্মৃতিসৌধের অভ্যন্তরীণ সংস্কার শুরু হয়, পুরনো সরঞ্জামগুলি বাতিল করে নতুনের আমদানি করা হয়। ২৫ বছর ধরে এই মেরামতের কাজ চলতে থাকে। স্মৃতিসৌধ তার জন্য বন্ধ রাখা হয়নি, খোলাই ছিল। ইতিমধ্যে দেহ সংরক্ষণের উন্নততর পদ্ধতিও উদ্ভাবিত হয়।
প্রাথমিকভাবে সংরক্ষণের জন্য লেনিনের মস্তিষ্ক এবং দেহের অভ্যন্তরীণ অংশ বের করে নিয়ে শরীরে ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছিল। এটি একটি বহুপ্রচলিত পদ্ধতি। কিন্তু সেই পদ্ধতিতে দেহ সমাধিস্থ করার আগে কিছুদিন পর্যন্ত রাখা যায়, অনন্তকাল তো নয়ই, এমনকী, সোভিয়েত রাষ্ট্রের পতন এবং তার দুই দশক পরে পর্যন্ত নয়।
প্রথম প্রথম দেহে নিয়মিতভাবে বিশেষ ধরনের নির্যাস লেপনও করা হত। কিন্তু মাস দেড়েকের মধ্যে দেহে কিছু পরিবর্তন দেখা দেয়। তখন আরও দীর্ঘস্থায়ী সংরক্ষণের উপায় উদ্ভাবনের জন্য বেশ কয়েক মাস ধরে গবেষণা চলে। দেহের অভ্যন্তরে বিশেষ ধরনের তরল পদার্থের ইঞ্জেকশন দিয়েও তার ওপর ভরসা না করে, বৈজ্ঞানিকগণ একটা বড় কাচের বাক্সে, রাসায়নিক দ্রবের মধ্যে কিছু সময়ের জন্য ডুবিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন, যাতে রাসায়নিক দ্রব লোমকূপ ভেদ করে ভেতরে ঢুকতে পারে। প্রতি দেড় বছর অন্তর এটা করা হয়। রাসায়নিকগুলি কী, তা গোপনীয়। দেহ মমিতে পরিণত করে রাখার সম্পূর্ণ ভিন্ন এই পদ্ধতি। সাধারণভাবে মমিতে পরিণত করলে দেহের ৭০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পায়, মুখের চেহারা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। অথচ লেনিনের চেহারা ও আয়তনের এতটুকু বিকৃতি বা পরিবর্তন ঘটেনি। এখানে কড়া নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয় তিনটি জিনিস: তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং স্মৃতিসৌধের অভ্যন্তরের আলোর মাত্রা যেটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় তা হল সঠিক তাপ তাপমাত্রায় দেহ সংরক্ষণ করা, যাতে দেহ বায়ু থেকে জলীয় বাষ্প শোষণ করতে না পারে, আবার দেহের অভ্যন্তর ভাগের আর্দ্রতাও বেরিয়ে না যেতে পারে।
…………………………………….
একসময় ১৯৫৩ সালে স্তালিনকেও লেনিনের পাশেই রাখা হয়েছিল অনুরূপ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে। কিন্তু স্তালিনের পক্ষে এখানে বেশি দিন টিকে থাকা সম্ভব হয়নি। নিঃস্তালিনীকরণের ধাক্কায় ১৯৬১ সালে এক রাতের অন্ধকারে স্তালিনের মৃতদেহ স্মৃতিসৌধের প্রকোষ্ঠ থেকে সুড়ঙ্গপথে ক্রেমলিনের প্রাকারের কাছে সমাধিস্থ করা হয়। রাতারাতি স্মৃতিসৌধের গা থেকে স্তালিন নামটিও লুপ্ত করে দেওয়া হয়।
………………………………………
সংরক্ষণের কাজটা অত্যন্ত ঝুঁকির– এককালে তা-ই ছিল। ১৯২৪ সালে প্রফেসর বরিস জ্বার্স্কিকে লেনিনের দেহ সংরক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ১৯৩৪ সাল থেকে তাঁর পুত্র প্রফেসর ইলিয়া জ্বার্স্কির ওপর সেই দায়িত্ব ন্যস্ত হয়। তাঁর কথায়: ‘পাছে দেহের কিছু হয়ে যায় এই ভয়ে আমাদের সব সময় তটস্থ থাকতে হত। কোনও ভুল চুক হয়ে গেলে আর রক্ষা নেই।’ ইলিয়া জ্বাব্স্কি নিজেই স্তালিনের রোষের শিকার হয়েছিলেন– তবে তাঁর কাজের ত্রুটির জন্য নয়। ১৯৫২ সালে তাঁর বাবা গ্রেফতার হওয়ার পর তিনি কর্মচ্যুত হন। তারপর থেকে দীর্ঘকাল একটি জীববিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের গবেষণাগারে তিনি কাজ করেছেন, কিন্তু তিনি লেনিনের দেহ সংরক্ষণ পদ্ধতির গোপন রহস্য কখনও প্রকাশ করেননি।
একসময় ১৯৫৩ সালে স্তালিনকেও লেনিনের পাশেই রাখা হয়েছিল অনুরূপ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে। কিন্তু স্তালিনের পক্ষে এখানে বেশি দিন টিকে থাকা সম্ভব হয়নি। নিঃস্তালিনীকরণের ধাক্কায় ১৯৬১ সালে এক রাতের অন্ধকারে স্তালিনের মৃতদেহ স্মৃতিসৌধের প্রকোষ্ঠ থেকে সুড়ঙ্গপথে ক্রেমলিনের প্রাকারের কাছে সমাধিস্থ করা হয়। রাতারাতি স্মৃতিসৌধের গা থেকে স্তালিন নামটিও লুপ্ত করে দেওয়া হয়। আট বছরের বেশি তিনি এই ঠিকানায় স্থায়ী হতে পারলেন না। লেনিন কিন্তু সেই তুলনায় যথেষ্ট সৌভাগ্যবান; পেরেস্ত্রৈকার ধাক্কা সামলেও আজ অবধি টিকে আছেন। আট বছর আর আট দশক– সে তো বিশাল ফারাক– দু’টি প্রজন্ম।
সেই সময়ের পর থেকে স্মৃতিসৌধের অভ্যন্তরে এবং সমাধির নীচেও অনেকটাই আধুনিকীকরণ হয়েছে, যদিও মূল পদ্ধতি মোটামুটি একই আছে। তবে গত সাত দশকে নিরন্তর গবেষণাকর্মের ফলে পদ্ধতির যেরকম উন্নতি ঘটেছে তার ফলে অঘটন না ঘটলে লেনিন হাজার বছরেও অন্য আর এক অর্থে মানবসভ্যতার বিস্ময় হয়ে টিকে থাকতে পারেন।
লেনিন স্মৃতিসৌধের অভ্যন্তরের প্রধান কক্ষটি ১০ বর্গমিটারের, এটাই সেই গর্ভগৃহ যেখানে লেনিন কাচের শবাধারে শায়িত। মাটি থেকে ৩ মিটার নীচে গর্ভগৃহে দর্শকদের ঢুকতে হয় বেশ কিছু সিঁড়ির ধাপ বেয়ে। শবাধার রাখার জায়গাটা একটা গ্র্যানিটের দেওয়াল দিয়ে দর্শকদের থেকে তফাত করা। লেনিন দর্শকদের দৃষ্টিগোচর হন মাত্র মিনিট খানেকের জন্য। শবাধারের দু’-পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে বিপুলসংখ্যক চলমান মানুষের ঢল। থামার নিয়ম নেই, চলতে চলতে দেখা। কক্ষে ঈষৎ গোলাপি আভার স্তিমিত আলো। ভালোমতো নিরীক্ষণ করার উপায় নেই। মুহূর্তখানেক পরেই সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে পড়তে হয়।
প্রথম যে দু’টি অস্থায়ী প্রকোষ্ঠ তৈরি হয়েছিল তাতে স্বাভাবিক আলোর ব্যবস্থা ছিল। দ্বিতীয়টিতে ছিল বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা। তৃতীয় অর্থাৎ স্থায়ী স্মৃতিসৌধের প্রকোষ্ঠে উষ্ণ বেগুনি আলোর রশ্মি প্রয়োগ করা হত; কেবল চতুর্থ বারের চেষ্টায় এমন আলোর ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় যাতে ত্বকের স্বাভাবিক অবস্থা অক্ষুণ্ণ থাকে। বিশেষজ্ঞরা ত্বকের আনুবীক্ষণিক পরীক্ষা করে সদ্যোমৃত মানুষের ত্বকের সঙ্গে তার কোনও তফাত খুঁজে পাননি।
রেড স্কোয়ারে ক্রেমলিনের প্রাকার বরাবর দুশো মিটার দীর্ঘ একটি সুরঙ্গপথ লেনিন স্মৃতিসৌধের কাছাকাছি সামান্য বাঁক নিয়ে স্মৃতিসৌধের পার্শ্ববর্তী ভূগর্ভে প্রবেশপথের দ্বারপ্রান্তে এসে মিশেছে। অভ্যন্তরবর্তী এই অংশে কুড়ি থেকে একশো বর্গমিটারের অন্তত দু’-ডজন অক্ষ ও হলঘর আছে। এগুলি বেশ কয়েকটি মানবদেহের ত্বক, কোষ, কলা আর মস্তিষ্ক সংক্রান্ত গবেষণার গোপন বীক্ষণাগার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তাই স্মৃতিসৌধ নিছক লেনিনের মৃতদেহ সংরক্ষণাগার হিসেবে দেখাটা ভুল হবে।
লেনিনের মরদেহ স্মৃতিসৌধ থেকে অপসারিত হবে কি না এই প্রশ্নে বর্তমান রাশিয়ার জনসমাজে মতভেদ থাকলেও স্থাপত্যকর্ম হিসেবে স্মৃতিসৌধের মূল্য সম্পর্কে মতভেদ খুব কমই আছে। এই অনবদ্য সৃষ্টির পরিকল্পনা করেছিলেন স্থপতি আলেক্সেই শুসেভ। মরচের মতো রঙের আভাসযুক্ত লাল মর্মর পাথরের এই অপরূপ স্থাপত্যকর্ম তার পশ্চাদ্ভাগে অবস্থিত ক্রেমলিনের প্রাচীর, সম্মুখ ভাগের রেড স্কোয়ার এবং পরিপার্শ্বের প্রাচীন স্থাপত্য সমাহারের সঙ্গে পূর্ণ সংগতি রক্ষা করে এমন অঙ্গাঙ্গি ভাবে মিশে গেছে, নন্দনতাত্ত্বিকরা পর্যন্ত তার সৌন্দর্য অস্বীকার করতে পারেন না। দেশের সাধারণ মানুষের চোখে একে ছাড়া আজকের রেড স্কোয়ার কল্পনাই করা যায় না। ইতিহাসের দোহাই দিয়ে যদি কেউ এর অপসারণ দাবি করেন, সে-দাবিও ধোপে টেকে না, কেননা এও তো ইতিহাসের একটি পর্ব।
পরবর্তীকালে, ১৯৮৪ সালে স্মৃতিসৌধের মাথার ওপর প্ল্যাটফর্মে ওঠার সুবিধার জন্য পিছনে, লোকচক্ষুর অন্তরালে একটি যন্ত্রচালিত সিঁড়ির স্থায়ী ব্যবস্থা করা হয়েছিল। দেশের অধিকাংশ নেতারই বয়স বেশি, সাধারণ সিঁড়ি দিয়ে ওঠা তাঁদের পক্ষে কষ্টসাধ্য। তাছাড়া একজন রাষ্ট্রনেতা ব্রেজনেভ্ তো সেই ধকলে মারাই গেলেন। কিন্তু বেশি দিন ব্যবহার করতে হয়নি ওই চলন্ত সিঁড়ি। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর থেকে অকেজো হয়েই পড়ে আছে, যেহেতু জাতীয় উৎসব পালনের ওই রীতিটি এখন বাতিল হয়ে গেছে। তাও আবার ইদানীং রেড স্কোয়ারে সামরিক কুচকাওয়াজ থেকে শুরু করে অন্য যে কোনও উৎসব অনুষ্ঠানের সময় ‘অপকীর্তি’র নিদর্শন পুরো স্মৃতিসৌধটিকেই ঢেকে দেওয়া হয়। রেড স্কোয়ারের অর্ধেক গৌরব বা সৌন্দর্যের যে হানি হল– একথা কে বোঝায়?
১৯৯১ সালের ৩১ ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের অব্যবহিত পর থেকে না হলেও রাশিয়ার ইতিহাসের নতুন পর্বের চার বছরের মাথায় এই প্রশ্নটি প্রবল হয়ে দেখা দিয়েছিল। এই প্রশ্নে সেদিন নতুন রাশিয়ার জনসমাজ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গিয়েছিল।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে প্রায়ই বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল থেকে এরকম একটা ধ্বনি উঠেছিল যে, লেনিনকে তাঁর বর্তমান স্মৃতিসৌধ থেকে তুলে এনে যথারীতি সমাধিস্থ করা উচিত এবং খ্রিস্টীয় বিধিমতেই যে তা করা উচিত এই মর্মে আবেদনও করেছিল রাশিয়ার অর্থোডক্স চার্চ।
কিন্তু রাশিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিন, যিনি নাকি ১৯৯১ সালের আগস্ট মাসে ব্যর্থ কমিউনিস্ট অভ্যুত্থানের সময় অকুতোভয়ে ট্যাঙ্কের ওপর দাঁড়িয়ে কমিউনিস্ট বিরোধিতাকে সোচ্চার করেছিলেন, তিনি পর্যন্ত লেনিনের মৃতদেহ তার বর্তমান বাসস্থান থেকে অপসারণের জন্য জনসাধারণকে তেমন পীড়াপীড়ি করতে পারলেন না। যদিও সেটা করাই তাঁর মনোগত অভিপ্রায় ছিল। নাকি দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন একসময়ের কট্টর কমিউনিস্ট এবং পরবর্তীকালে সংস্কারপন্থীদের শীর্ষনেতা বরিস ইয়েল্ৎসিন, যিনি ১৯৮৫ সালে স্ভের্দ্লোভ্স্কে (বর্তমান য়েকাতেরিনবুর্গ) পার্টি সেক্রেটারি থাকাকালে নিজের কমিউনিস্ট ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে তুলে ধরার জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগে সেখানকার ইপাতেভ ভবন নামে একটি প্রাচীন ভবনকেই পুড়িয়ে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন, যেহেতু ওই ভবনটিকে কেন্দ্র করে এমন জনশ্রুতি প্রচারিত হয়েছিল যে, ১৯১৮ সালে বলশেভিকরা নাকি ওখানেই জারের পরিবারকে হত্যা করে সমাধিস্থ করেছিল। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার কিছুদিন আগেও তিনি প্রকাশ্যে স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন: ‘আমি স্মৃতিসৌধ থেকে লেনিনের অপসারণের বিরোধী।’ কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাঁর মত পাল্টে ফেললেন। ১৯৯৫ সালে একবার এই বিষয়ে গণভোটের পক্ষে মতপ্রকাশ করলেন। আবার নিজে যে এমন একটা বিষয়ের ওপর ডিক্রি জারি করবেন সেটাও ভরসা করতে পারলেন না, যেহেতু সামনে ১৯৯৬ সালে জুন মাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, এই সময় এরকম একটা স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে উসকানি দেওয়া ঠিক হবে না।
এদিকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উত্তাপ স্তিমিত হয়ে আসতে লাগল। এরপর প্রেসিডেন্ট নিজেই তাঁর ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়ে হিমশিম খেতে লাগলেন। সমাজেরও আর তেমন মাথাব্যথা নেই ওই প্রশ্ন নিয়ে, দেশও এখন প্রেসিডেন্টের মতোই নানা সমস্যায় জর্জরিত। দেখতে দেখেত ইয়েলৎসিনের জামানাও ফুরিয়ে এল– ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি ভ্লাদিমির পুতিনের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা দিলেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েই ২০০৫ সালের অক্টোবরেও পুতিন বলেছিলেন: ‘লেনিনকে উপযুক্তভাবে সমাধিস্থ করার সময় এসেছে।’ কিন্তু তারপর? ২০০০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত থেকে পরে চার বছর প্রধানমন্ত্রী থাকার পর আবারও ২০১২ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন। এত বছরের মধ্যে এই নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্যই করলেন না– এখনও করছেন না। সাধারণভাবে রুশিরাও সম্ভবত তাদের অতীত ইতিহাসের সঙ্গে আপস করে নিয়েছে।
পরন্তু, সাম্প্রতিক সংবাদে প্রকাশ, ২০১২ সাল থেকে ভিত মেরামতির জন্য লেনিন স্মৃতিসৌধ বন্ধ থাকার পর আবার খুলে দেওয়া হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য। বর্তমান রাষ্ট্রপতি পুতিন এমন কথাও বলেছেন যে লেনিন থাকবেন কি থাকবেন না– তা জনসাধারণই ঠিক করবে। কিন্তু জনসাধারণ লেনিন স্মৃতিসৌধ ছাড়া রেড স্কোয়ার ভাবতেই পারে না।
আবার ২০১৬ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, শতকরা ৪০ জন রুশি ইতিহাসে তাঁর ভূমিকাকে ইতিবাচক হিসেবে গণ্য করেন, মাত্র শতকরা ২০ জন নেতিবাচক বলে মনে করেন।
…পড়ুন রুশকথা-র অন্যান্য পর্ব…
পর্ব ৬৩। উত্তরের আশায় লেনিনকে সমাধির ঠিকানায় চিঠি পাঠাত সাধারণ মানুষ
পর্ব ৬২। মিখাইল নিল ভোদকা কেড়ে, বরিস দিল ভাত মেরে
পর্ব ৬১। প্রকাশের স্বাধীনতার আমলে সোভিয়েত থেকে হারিয়ে গেল চুটকি বা হাস্যরস
পর্ব ৬০। রুশ দেশের হাস্যরস যেন লোকসাহিত্যের এক অফুরান ভাণ্ডার
পর্ব ৫৭। গুরুগম্ভীর থেকে হাস্যকরের তফাত মাত্র একটি পদক্ষেপের
পর্ব ৫৬। রুশ দেশের অনেক খবরই আজকাল গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে ঠাঁই পাওয়া শুরু করেছে
পর্ব ৫৫। মার্কিন দেশে ব্যাঙ্ক ডাকাতি করতে এসেছিল একজন গর্বাচ্যোভের মুখোশ পরে, অন্যজন মাইকেল জ্যাকসনের
পর্ব ৫৪। হাজার হাজার কৌতূহলী জনতার সঙ্গে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম সেই মহাদৃশ্য
পর্ব ৫৩। নাম বদলের গোলকধাঁধায় অসঙ্গতি বেড়েছে, ঐতিহ্যকে রক্ষা করা যায়নি
পর্ব ৫২। মস্কোর আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের মিছিলে ভারতের পতাকা থাকবে না-ই বা কেন?
পর্ব ৫১। পত্র-পত্রিকায় ঘোষণা করা হল কাস্ত্রো আসছেন, তবে ইনি মেক্সিকোর সোপ অপেরা স্টার
পর্ব ৫০। খোলা হাওয়ায় মানুষের আর কোনও কিছু নিয়েই চিন্তা নেই, অন্ন চিন্তা ছাড়া
পর্ব ৪৯। সোভিয়েত-মুক্ত রাশিয়াকে কে রক্ষা করবে?
পর্ব ৪৮। বর্ষশেষে মানুষ পেল দারিদ্র, এখন লোকে ধার-দেনা করে চা-কফি খাওয়া শুরু করেছে
পর্ব ৪৭। মুক্ত দিনে ব্যালের দেশ রাশিয়ায় ‘আধুনিক ব্যালে’ শেখাতে আসছে ক্যালিফোর্নিয়ার ট্রুপ
পর্ব ৪৬। অক্টোবর বিপ্লবের উচ্ছ্বাস কোনও দেশে কমলে, অন্য দেশে বাড়তে থাকে
পর্ব ৪৫। ‘অক্টোবর বিপ্লব দিবস’ আর পালিত হবে না, পালিত হবে বড়দিন– চোখের সামনে বদলে যাচ্ছিল সোভিয়েত
পর্ব ৪৪। রাজনীতিতে অদূরদর্শিতার ফল যে কত সুদূরপ্রসারী, তার প্রমাণ আফগানিস্তান
পর্ব ৪৩। জানলা দিয়ে পূর্ব জার্মানি দেখতে দেখতে গর্বাচ্যোভ বলেছিলেন, তাহলে এখানেই শেষ!
পর্ব ৪২। পেরেস্ত্রৈকা শুরু হলে বুঝেছিলাম ‘প্রগতি’ ‘রাদুগা’– এসব কিছুই থাকবে না
পর্ব ৪১। কল্পনা যোশীর তুলনায় ইলা মিত্রকে অনেক বেশি মাটির কাছাকাছি বলে মনে হয়েছে
পর্ব ৪০। বেসরকারিকরণের শুরু দিকে রাস্তাঘাটে ছিনতাই বেড়ে গেছিল, কারণ সব লেনদেন নগদে হত
পর্ব ৩৯। হাওয়া বদলের আঁচ অনেকেই আগে টের পেয়েছিল, বদলে ফেলেছিল জীবনযাত্রা
পর্ব ৩৮। শুধু বিদেশে থাকার জন্য উচ্চশিক্ষা লাভ করেও ছোটখাটো কাজ করে কাটিয়ে দিয়েছেন বহু ভারতীয়
পর্ব ৩৭। একটা বিদেশি সাবানের বিনিময়েও নাকি মস্কোয় নারীসঙ্গ উপভোগ করা যায়– এমনটা প্রচার করেছে ভারতীয়রা
পর্ব ৩৬। মস্কোর ঠান্ডায় লঙ্কা গাছ দেখে পি.সি. সরকার বলেছিলেন, ‘এর চেয়ে বড় ম্যাজিক হয় নাকি?’
পর্ব ৩৫। রুশদের কাছে ভারত ছিল রবীন্দ্রনাথের দেশ, হিমালয়ের দেশ
পর্ব ৩৪। সোভিয়েত শিক্ষায় নতুন মানুষ গড়ে তোলার ব্যাপারে একটা খামতি থেকে গিয়েছিল
পর্ব ৩৩। দিব্যি ছিলাম হাসপাতালে
পর্ব ৩২। মস্কোর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে সাধারণ ডাক্তাররা অধিকাংশই মহিলা ছিলেন
পর্ব ৩১। আমার স্ত্রী ও দুই কন্যা নিজভূমে পরবাসী হয়ে গিয়েছিল শুধু আমার জন্য
পর্ব ৩০। শান্তিদা কান্ত রায়ের প্রিয় কাজ ছিল মস্কোয় ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের কমিউনিজম পড়ানো
পর্ব ২৯। পেরেস্ত্রৈকার শুরু থেকেই নিরাপত্তার অভাব বোধ করছিলেন গোপেনদা
পর্ব ২৮। দেশে ফেরার সময় সুরার ছবি সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি পাননি গোপেনদা
পর্ব ২৭। বিপ্লবের ভাঙা হাট ও একজন ভগ্নহৃদয় বিপ্লবী
পর্ব ২৬। ননী ভৌমিকের মস্কোর জীবনযাত্রা যেন দস্তইয়েভস্কির কোনও উপন্যাস
পর্ব ২৫। ননীদা বলেছিলেন, ডাল চচ্চড়ি না খেলে ‘ধুলোমাটি’র মতো উপন্যাস লেখা যায় না
পর্ব ২৪। মস্কোয় শেষের বছর দশেক ননীদা ছিলেন একেবারে নিঃসঙ্গ
পর্ব ২৩। শেষমেশ মস্কো রওনা দিলাম একটি মাত্র সুটকেস সম্বল করে
পর্ব ২২। ‘প্রগতি’-তে বইপুথি নির্বাচনের ব্যাপারে আমার সঙ্গে প্রায়ই খিটিমিটি বেধে যেত
পর্ব ২১। সোভিয়েতে অনুবাদকরা যে পরিমাণ অর্থ উপার্জন করত, সে দেশের কম মানুষই তা পারত
পর্ব ২০। প্রগতি-র বাংলা বিভাগে নিয়োগের ক্ষেত্রে ননীদাই শেষ কথা ছিলেন
পর্ব ১৯। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় নাকি খুব ভালো রুশভাষা জানতেন, প্রমথনাথ বিশী সাক্ষী
পর্ব ১৮। লেডি রাণু মুখার্জিকে বাড়ি গিয়ে রুশ ভাষা শেখানোর দায়িত্ব পড়েছিল আমার ওপর
পর্ব ১৭। একদিন হঠাৎ সুভাষদা আমাদের বাড়ি এসে উপস্থিত ফয়েজ আহমেদ ফয়েজকে নিয়ে
পর্ব ১৬। মুখের সেই পরিচিত হাসিটা না থাকলে কীসের সুভাষ মুখোপাধ্যায়!
পর্ব ১৫। রুশ ভাষা থেকেই সকলে অনুবাদ করতেন, এটা মিথ
পর্ব ১৪। মস্কোয় ননীদাকে দেখে মনে হয়েছিল কোনও বিদেশি, ভারতীয় নয়
পর্ব ১৩। যিনি কিংবদন্তি লেখক হতে পারতেন, তিনি হয়ে গেলেন কিংবদন্তি অনুবাদক
পর্ব ১২। ‘প্রগতি’ ও ‘রাদুগা’র অধঃপতনের বীজ কি গঠনপ্রকৃতির মধ্যেই নিহিত ছিল?
পর্ব ১১। সমর সেনকে দিয়ে কি রুশ কাব্যসংকলন অনুবাদ করানো যেত না?
পর্ব ১০। সমর সেনের মহুয়ার দেশ থেকে সোভিয়েত দেশে যাত্রা
পর্ব ৯। মস্কোয় অনুবাদচর্চার যখন রমরমা, ঠিক তখনই ঘটে গেল আকস্মিক অঘটন
পর্ব ৮: একজন কথা রেখেছিলেন, কিন্তু অনেকেই রাখেননি
পর্ব ৭: লেনিনকে তাঁর নিজের দেশের অনেকে ‘জার্মান চর’ বলেও অভিহিত করত
পর্ব ৬: যে-পতাকা বিজয়গর্বে রাইখস্টাগের মাথায় উড়েছিল, তা আজ ক্রেমলিনের মাথা থেকে নামানো হবে
পর্ব ৫: কোনটা বিপ্লব, কোনটা অভ্যুত্থান– দেশের মানুষ আজও তা স্থির করতে পারছে না
পর্ব ৪: আমার সাদা-কালোর স্বপ্নের মধ্যে ছিল সোভিয়েত দেশ
পর্ব ৩: ক্রেমলিনে যে বছর লেনিনের মূর্তি স্থাপিত হয়, সে বছরই ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার সূচনাকাল
পর্ব ২: যে দেশে সূর্য অস্ত যায় না– আজও যায় না
পর্ব ১: এক প্রত্যক্ষদর্শীর চোখে রাশিয়ার খণ্ডচিত্র ও অতীতে উঁকিঝুঁকি