আজকের দিনে হয়তো আশ্চর্যই লাগবে এই সব কথা শুনে। কিন্তু তখনও সব লেখকই কাগজ-কলমে পাণ্ডুলিপি তৈরি করতেন, আমাদের এখানে কম্পিউটার আর ইন্টারনেটও তখন ভবিষ্যতের গর্ভে। এমনকী, ক্যুরিয়র সার্ভিসও সব জায়গায় ছিল না, থাকলেও নির্ভরযোগ্য ছিল না। একমাত্র উপায় ছিল ডাকে পাঠানো। তাতে সময় নষ্ট হওয়ার এবং মাঝপথে খোয়া যাওয়ার বিপদ ছিল। তাই লেখক নিজে এসে পাণ্ডুলিপি, প্রুফ দেওয়া-নেওয়া করতে না পারলে জেলার পুস্তক ব্যবসায়ীরাই আমার সহায় হতেন।
৩৯.
শান্তিনিকেতন যাওয়ার প্রসঙ্গে মনে পড়ল– সব সময়ে যে সেখানে যাওয়াটা অবিমিশ্র আনন্দের ছিল, তা নয়। ২০০৩-এর ১৮ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক ভূদেব চৌধুরীর প্রয়াণের পর যেমন, সম্ভবত তাঁর শ্রাদ্ধের দিন সকালে আমি কলকাতা থেকে অত্যন্ত ব্যথিত মনে শান্তিনিকেতনে পৌঁছেছিলাম। সেদিন আমার সঙ্গে একই গাড়িতে শিশিরদা (শিশিরকুমার দাশ) আর স্বপনদাও (স্বপন মজুমদার) ছিলেন।
ভূদেবদার সঙ্গে আমার সম্পর্ক তো কম দিনের নয়। সেই ১৯৭৮ সাল থেকে আমি তাঁর বই প্রকাশ করে এসেছি। কিংবদন্তি-তুল্য অধ্যাপক হিসেবে ৪২ বছরের কর্মজীবনে তাঁর কৃতী ছাত্রের সংখ্যাও কম নয়। তাঁর ছাত্র শিশিরদা যেমন মাস্টারমশাইয়ের প্রয়াণের খবরে আমার সঙ্গে সেদিন গিয়েছিলেন শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লীতে ভূদেবদাদের ‘অপুরুবা’ বাড়িতে। স্বপনদা বোধহয় ভূদেবদার প্রত্যক্ষ ছাত্র ছিলেন না। কিন্তু বিশ্বভারতীর সঙ্গে তাঁর যোগ ছিল অনেক গভীরে। তিনি বিভিন্ন সময়ে বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ ও রবীন্দ্রভবনের অধ্যক্ষের দায়িত্ব সামলেছেন। আবার ‘বিশ্বভারতী কোয়ার্টারলি’ এবং ‘রবীন্দ্রবীক্ষা’ সম্পাদনাও করেছেন। আর আমার সঙ্গে শান্তিনিকেতনের সেতু যে তিনিই ছিলেন সেকথাও আগে বলেছি। আমি পড়েছি, রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ প্রশান্তকুমার পাল থেকে শুরু করে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষের প্রিয় মাস্টারমশাই ছিলেন ভূদেবদা।
ভূদেব চৌধুরী কলকাতার সিটি কলেজ, বঙ্গবাসী কলেজ, দার্জিলিং সরকারি কলেজ, প্রেসিডেন্সি কলেজ হয়ে ১৯৬৮ সালে বিশ্বভারতীর বাংলা বিভাগে যোগ দেন। তাঁর মৃত্যুর পরে শান্তিনিকেতনে যাওয়ার দিন আমরা তিনজনই খুব ভেঙে পড়েছিলাম। আসা-যাওয়ার রাস্তায় নিজেদের মধ্যে খুব একটা কথাও বলতে পারিনি– এমনই ভারাক্রান্ত ছিল মন।
এর ঠিক আগের বছরেই ভূদেব চৌধুরীর ৮০ বছরের জন্মদিনে দে’জ পাবলিশিং থেকে ‘অধ্যাপক শ্রীভূদেব চৌধুরী/ অশীতিবর্ষপূর্তি জন্মদিন’ নামে একটি স্মারক পুস্তিকা (৩০ জুলাই ২০০২) প্রকাশ করা হয়েছিল। প্রকাশনার কাজটা মূলত অপুই করেছিল। এই পুস্তিকাতেই প্রথমবার প্রকাশক হিসেবে অপুর নাম ছাপা হয়। ভূদেবদার ৮০ বছরের সেই স্মারক পুস্তিকায় শিশিরদা লিখেছিলেন–
“…আমাদের কলেজে বাংলা বিভাগটি ছিল এক ছোট সুখী পরিবার। যখন ছাত্র হিসেবে ঢুকেছিলাম তখন বিখ্যাত বিদ্বান মনোমোহন ঘোষ বিভাগের প্রধান। তিনি চলে গেলেন কয়েক মাস পরে। প্রধান হলেন অধ্যাপক জনার্দন চক্রবর্তী। আমরা তাঁকে সম্ভ্রমে দূরে-দূরে রাখতাম। এই বিভাগে সবাই গুণী বিদ্বান শিক্ষক। সকলকেই আমরা শ্রদ্ধা করতাম। এই বিভাগে সবচেয়ে তরুণ অধ্যাপক ভূদেব চৌধুরী। কাজে-অকাজে তিনি ছিলেন আমাদের সবচেয়ে আপনজন।
তাঁর পঞ্চাশ বছর আগেকার ছবিটি আমি বেশ মনে করতে পারি। আড়াইটে কি তিনটের সময় এক মেঘলা বিকেলবেলায় প্রেসিডেন্সি কলেজের তিনতলায় কোণের ঘরে রেজিস্টার হাতে এক সৌম্য সুদর্শন যুবক এসে দাঁড়ালেন আমাদের সামনে। ইন্টারমিডিয়েট বিজ্ঞানের ছাত্র আমরা। মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনলাম প্রায় এক ঘণ্টা ধরে এক বক্তৃতা। বিষয়টা সম্ভবত ছিল অবনীন্দ্রনাথের ‘সুন্দর’। আমার স্মৃতিতে জড়িয়ে আছে এই দিনটি। বয়সের স্বাভাবিকতাকে তিনি কঠিন সংযমে বাঁধতে চাইতেন এক ছদ্মবেশী প্রৌঢ়ত্বে। কিন্তু তাঁর কণ্ঠস্বরের আবেগে ফেটে বেরিয়ে আসত অবাধ তারুণ্য। তারপর নানা মুহূর্তে তাঁকে দেখেছি। কিন্তু মনের মধ্যে সেই বিকেলের আবেগটি এখনও জেগে আছে। পরে কতবার দেখেছি হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে উঠেছেন আমাদের দুর্বিনীত চাপল্যে। আবার কয়েকদিন পরে স্নেহে বিগলিত হয়ে পড়েছেন তিনি। তাই যদিও তিনি ছিলেন আপনজন, তাঁকে ভয়ও পেতাম। সেই ভয় আজও কাটেনি। তবে এখন যে মধ্যে-মধ্যে তাঁর সঙ্গে তর্ক করার সাহস পাই সে শুধু বৌদির প্রশ্রয়ে।
বাংলা অনার্স পড়তে এসে তাঁর আরও কাছে এলাম। কলকাতা শহরে কত বাড়ি যে তিনি বদলেছেন, কে জানে। আমি বোধহয় তাঁর প্রত্যেকটি বাড়িতেই গিয়েছি। শুধু আমার জন্যই নয়, ছাত্রদের জন্য তাঁর দরজা ছিল সবসময় খোলা। এইরকম কোনও বাড়িতেই আমি তাঁকে দেখেছি ছোট্ট মেয়ে মিষ্টুকে কোলে নিয়ে ‘বাংলা সাহিত্যের ইতিকথা’ লিখছেন।…”
ভূদেবদার ৮০ বছরের জন্মদিনে সকালের দিকে আমি তাঁকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলাম। তখনও তিনি জানতেন না স্মারক পুস্তিকা বেরচ্ছে। পুস্তিকা হাতে পেয়ে অশীতিতম জন্মবার্ষিকীর পরের দিনই শান্তিনিকেতন থেকে তিনি আমাকে একটি চিঠিতে লেখেন–
‘প্রিয়বরেষু,
কাল আপনার টেলিফোন যখন এল, ঘর তখন ভরা। তারই মাঝে আপনার ডাক পেয়ে, দেরি করে ফেলা প্রুফ-এর তাড়াটাই মনে এসেছিল। তখনো আপনাদের প্রকাশিত স্মারক পুস্তিকাটি আমার হাতে আসে নি। এঁরা সব কিছুই আমার কাছে গোপন করেছিলেন– বাধা পাবেন বলে। বাধা দিয়েও হেরেছি। আমায় নিয়ে আতিশয্য কোনো রকমেই সহ্য করা কঠিন। তবু এ-ও ছিল ভালোবাসার অত্যাচার। স্মরণিকা হাতে পেয়ে আপনাদের, আপনারও, ভালোবাসার অভাবিত জোগান পেয়ে অভিভূত হয়েছি। কাল সন্ধ্যার পর ধরতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছি; কলকাতার দূরভাষের পথ আটকেছিল। আজ তাই চিঠি লিখছি। আপনাদের বিরাট প্রকাশন সংস্থার আমিও এক সাধারণ লেখক। তাহলেও আপনার ব্যক্তিগত অনুরাগ বারে বারে স্পর্শ করেছে। আজও, এই উপলক্ষ্যে। আপনি আমার অভিভূত মনের প্রীতি ও শুভকামনা গ্রহণ করুন।
বিনীত
ভূদেব চৌধুরী’
এই স্মরণিকা প্রকাশে স্বপনদা আর অধ্যাপিকা আলপনা রায়ের ভূমিকাও ভোলা যাবে না। আলপনাদির কথা পরে আবার বলব। তবে ভূদেবদার চিঠির ছত্রে-ছত্রে যে-বিনয় ফুটে উঠেছে, তিনি মানুষ হিসেবেও এরকমই ছিলেন। আদ্যন্ত শিক্ষক। প্রচারের আলো থেকে শত হস্ত দূরে থাকতে চাওয়া মানুষ।
শান্তিনিকেতনের অধ্যাপক-প্রাবন্ধিকদের অনেকেরই বই একসময় প্রকাশিত হত জানকীনাথ বসুর বুকল্যান্ড প্রকাশনী থেকে। বুকল্যান্ড মূলত পাঠ্যবই প্রকাশ করলেও কিছু-কিছু অন্য ধরনের বইও ছাপত। জানকীবাবুর প্রকাশনার দপ্তর ছিল ঠনঠনিয়া কালীবাড়ির কাছে শঙ্কর ঘোষ লেনে। যদিও তাঁদের দোকানটি ছিল বিধান সরণির ওপর, শঙ্কর ঘোষ লেনের উল্টোদিকে– রাস্তার পশ্চিমপারে। জানকীবাবু একসময় বঙ্গীয় প্রকাশক ও পুস্তক বিক্রেতা সভার প্রথম সারির কর্মকর্তা ছিলেন। আমি এখনও এই সভার সদস্য। একসময় কমিটি মেম্বারও ছিলাম। সম্ভবত ১৯৫৮ সাল থেকে বঙ্গীয় প্রকাশক ও পুস্তক বিক্রেতা সভার মুখপত্র হিসেবে ‘গ্রন্থ-জগৎ’ পত্রিকা বেরত। আমি ১৯৬১-র চতুর্থ বর্ষ এবং চতুর্থ সংখ্যায় দেখছি– সেসময় জানকীবাবু সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সেবছর পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন সুধীরচন্দ্র সরকার।
ভূদেবদার কয়েকটি বই বুকল্যান্ড থেকে বেরিয়েছিল। সম্ভবত ‘বাংলা সাহিত্যের ইতিকথা’ও। তবে আমার সঙ্গে যোগাযোগের পর থেকে আমি পরপর তাঁর বই করে গেছি। তাঁর সারাজীবনের খ্যাতি যে চারখণ্ড বইয়ে (ভূদেবদা অবশ্য লিখতেন ‘পর্যায়’)– সেই ‘বাংলা সাহিত্যের ইতিকথা’ও দে’জ পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে আমি এর প্রথম খণ্ড ছাপি। তারপর ধীরে ধীরে সেসব বইয়ের পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত সংস্করণও প্রকাশিত হয়েছে। আমার যতদূর মনে পড়ছে চতুর্থ খণ্ডটি আমরাই প্রথম প্রকাশ করেছিলাম।
আবার এরই মধ্যে ১৯৮২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর ‘বাংলা সাহিত্যের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’। এই বইটিও এক সময় বুকল্যান্ড থেকেই প্রকাশিত হয়েছিল। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচনায় তাঁর লক্ষ্য কী ছিল সেকথা তিনি ‘বাংলা সাহিত্যের ইতিকথা’ প্রথম পর্যায়ের ভূমিকায় স্পষ্ট করে লিখেছেন–
‘‘…এ-বই, কোনো স্তর-পর্যায়েই, সম্পূর্ণ ইতিবৃত্তান্ত, কিংবা অনুপুঙ্খ তথ্যপঞ্জীর ভূমিকা দাবি করতে পারে না। …আচার্য দীনেশচন্দ্র সেনকে নাকি রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘যুগের প্রতিবিম্ব স্বরূপ’ সাহিত্যে সুনির্দিষ্ট এক একটি যুগের ‘আদর্শ, রুচি ও নীতিজ্ঞান’ ‘অভিব্যক্ত’ হয়ে থাকে। আর ‘প্রধান প্রধান লেখকেরা’ ‘কম্পাসের কাঁটার ন্যায়’ সেই যুগচরিত্রের পরিস্ফুটন ঘটিয়ে থাকেন। সুতরাং ‘কোন প্রধান লেখকের ব্যক্তিগতভাবে প্রশংসা বা নিন্দাবাদ না করিয়া তাঁহার মধ্যে যুগলক্ষণ কি পাওয়া যায়, তাহাই নির্দেশ করা বাঞ্ছনীয়।’
আসলে, যুগের পর যুগের লক্ষণ-পরম্পরার মধ্য দিয়ে বাঙালির সাহিত্যে বাঙালির জীবন কি করে ক্রমশ ‘অভিব্যক্ত’ হয়ে উঠেছে, চার পর্যায়ে সম্পূর্ণ ‘বাংলা সাহিত্যের ইতিকথা’ সেই দিশে ধরেই এগোতে চেয়েছে প্রথমাবধি।’’
ভূদেবদার ‘বাংলা সাহিত্যের ইতিকথা’ বা ‘বাংলা সাহিত্যের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’ এখনও ছাত্রছাত্রী-গবেষক ও বাংলা সংস্কৃতির উৎসাহী পাঠকের পছন্দের তালিকার ওপরের দিকে আছে। এই বইগুলির প্রকাশন-সম্পাদক হিসেবে সেসময় সুবীর ভট্টাচার্য এতটাই দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন যে, ভূদেবদাও সুবীরদার গুণগ্রাহী হয়ে পড়েছিলেন।
সাহিত্যের ইতিহাস ছাড়া ভূদেবদার অন্যান্য বইয়ের মধ্যে ১৯৮০-র অক্টোবর মাসে দে’জ পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত হয় ভ্রমণনির্ভর লেখা ‘দূরের বন্ধু’। তাঁর ভাষায়– এটি ছিল ‘পথের সঞ্চয়’। সোভিয়েত ইউনিয়ন ঘুরে এসে ‘ভারতীয় ও সোভিয়েট নাগরিকদের’ নিয়ে লেখা। বইটির প্রাথমিক খসড়াটা প্রকাশিত হয়েছিল ১৩৮৬ বঙ্গাব্দের ‘দেশ’ সাহিত্য সংখ্যায়। ভূদেবদার অনুরোধে ‘দেশ’ পত্রিকার তদানীন্তন সম্পাদক সাগরময় ঘোষ লেখাটির নামকরণ করেছিলেন।
এর চার বছর পরে প্রকাশিত হয়– ‘রবীন্দ্র উপন্যাস: ইতিহাসের প্রেক্ষিতে’। ১৯৮২ সালে ভূদেবদাকে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীনেশচন্দ্র সেন স্মারক বক্তৃতা দিতে ডাকা হয়। ‘রবীন্দ্র উপন্যাস: ইতিহাসের প্রেক্ষিতে’ বইয়ের মূল কাঠামোটি তৈরি হয় সেই চারটি বক্তৃতার ওপর নির্ভর করেই। পরে অবশ্য বই হওয়ার সময় তাঁর বিস্তর পরিমার্জনা করা হয়েছে। ২০০১ সালের দ্বিতীয়বার ছাপার সময় সেটি আরও ঘষা-মাজার পর নতুন সংস্করণ হিসেবেই প্রকাশিত হয়। এই বইটি তিনি অধ্যাপক সুকুমার সেন-কে উৎসর্গ করেছিলেন।
এর ১০ বছর পরে ১৯৯৪ সালের অগাস্টে প্রকাশিত হয় প্রকাশিত হয় ভূদেব চৌধুরীর ‘কথার ফের/ শান্তিনিকেতন ধারার রবীন্দ্র নাটক: বনফুলের গল্প’ বইটি। এটিও বক্তৃতা-নির্ভর বই। বিশ্বভারতীতে এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি দু’টি বক্তৃতা করেছিলেন– যথাক্রমে, ‘ ‘শান্তিনিকেতন’-ধারার রবীন্দ্রনাটক: পটভূমি প্রকরণ [চালচিত্রে মরিস মেটারলিঙ্ক]’ এবং ‘বনফুলের গল্প: দেশ-কাল-শিল্পী, এবং শিল্প’। বইয়ের চেহারা দেওয়ার সময় অবশ্য বক্তৃতার কাঠামোটা তিনি বদলে নিয়েছিলেন।
এর পরের বছর আমি প্রকাশ করেছিলাম তাঁর একমাত্র কিশোর গল্পের সংকলন– ‘মানুষ দেখার গল্প’। মোট পাঁচটি গল্প ছিল বইটিতে। এই বইয়ের ‘পণ্ডিত মশাই’ গল্পটিকে আমার মনে হয় ‘গল্প হলেও সত্যি’ বলাই উচিত। রাখালগঞ্জে তাঁর নিজের ছেলেবেলার স্কুলের পণ্ডিতমশাইকে নিয়ে এই গল্পটি ভূদেবদার স্মৃতিকথাতেও আছে। স্মৃতিকথার ওই অংশটি অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি থেকে তাঁর ৮০ বছরের স্মরণিকার জন্য অনুলিপি তৈরি করে দিয়েছিলেন উজ্জ্বল গঙ্গোপাধ্যায়। ‘মানুষ দেখার গল্প’-র পিছনের মলাটে ভূদেবদা সংক্ষেপে অনবদ্যভাবে লিখে দিয়েছিলেন এই বইয়ের মূল কথাগুলি–
“মানুষ কই? মানুষ খোয়া কী গেছে আজকাল? ‘দুটো হাত, পা-দুখানা, আর মস্ত একটা মুণ্ডু থাকলেই মানুষ হয়…? তাহলে বনমানুষও তো মানুষ।’ মানুষ তবে কারা?
মানুষ এখন হতে চায় না কেউ। সবাই চায় কেউকেটা হতে। সেই ধান্দায় ছোট্ট বয়স হতে ছুটে, ছুটে, ছুটে, হেদিয়ে, হারিয়ে ফিরতে হয় গোলোকধাঁধার চক্রে। খেতে-শুতে-ঘুমোতে অবধি দম আটকে আসতে চায়। একটাই প্রশ্ন– কী হব? কেমন করে? সঠিক জবাব মেলে না কিছুতে।
মানুষকে তো মানুষই হতে হবে সবার আগে। না হলে মানুষের বাড় বন্ধ হয়ে যায়; শুকনো খোয়াই জমিতে গাছ যেমন গুমরে মরে। স্বস্তি, শান্তি, আনন্দ যায় মন হতে ঘুচে। যেমন প্রায়ই যেতে চায় হালের ছোটোদের মধ্যেও।
মানুষ খোয়া-যাওয়া দেশে, মানুষ দেখার গল্প ডালা ভরে সাজানো রইল কিশোর মনের জন্য, যে মন সবকিছুতে খোঁজে সব পেয়েছির দেশ।”
ভূদেব চৌধুরীর আরেকটি অনবদ্য বই ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত হয়েছিল ‘জিজ্ঞাসা’ থেকে– ‘লিপির শিল্পীর অবনীন্দ্রনাথ’। জিজ্ঞাসার শ্রীশ কুণ্ড ছিলেন ভালো বইয়ের জহুরি। তাঁর প্রয়াণের পর বইটি ১৯৯৬ সালে দে’জ পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত হয়। দে’জ সংস্করণের প্রচ্ছদ করেন অজয় গুপ্ত। ‘লিপির শিল্পীর অবনীন্দ্রনাথ’-এর বিষয় হল অবনীন্দ্রনাথের সামগ্রিক শিল্পীসত্তা।
ভূদেবদার যে কোনও বইয়ের ভূমিকাতেই বোলপুর/শান্তিনিকেতনের কোনও কোনও বইয়ের দোকানের উল্লেখ পাওয়া যায়। আসলে ওই সময় জেলায়-জেলায় বেশ কিছু বইয়ের দোকানের মালিকের সঙ্গে আমার খুবই হৃদ্যতা ছিল। তাঁরা আমার জন্য লেখকের কাছে প্রুফ দেওয়া-নেওয়ার কাজও করতেন। শান্তিনিকেতন থেকে সুবর্ণরেখা-র ইন্দ্রদাও (ইন্দ্রনাথ মজুমদার) কখনও স্নেহপরবশ হয়ে আমাকে প্রুফ এনে দিয়েছেন। তবে ‘বোলপুর বুক হাউস’, ‘পুঁথিঘর’, ‘বর্ণপরিচয়’– এইসব বইয়ের দোকানের কাছে আমার অনেক ঋণ। তাঁরা শান্তিনিকেতনের লেখকদের বাড়ি গিয়ে পাণ্ডুলিপি নেওয়া থেকে শুরু করে কলেজ স্ট্রিটে আমাদের কাছ থেকে প্রুফ নিয়ে গিয়ে লেখককে পৌঁছে দেওয়া, আবার ফেরত আনা– সব কাজেই নিঃস্বার্থভাবে এগিয়ে আসতেন। ‘পুঁথিঘরে’র চন্দ্রকান্ত দাস এবং ‘বোলপুর বুক হাউসে’র অহীন্দ্র নায়েক আমাকে নানাভাবে সাহায্য করেছেন। আমি যে-সময়ের কথা বলছি তখন কলকাতা থেকে দূরের জেলার লেখকদের কাছ থেকে লেখা আদান-প্রদানে এঁরাই আমার সহায়ক ছিলেন। ভূদেবদার একটা চিঠিতেও এঁদের কথার উল্লেখ পাচ্ছি। ১৬ অগাস্ট ১৯৮৩-তে তিনি লিখছেন–
“সনমস্কৃত নিবেদন,
আপনার চিঠি এসেছে। দূর থেকে বই ছাপানো ক্রমশ অসম্ভব হয়ে উঠবে বুঝছি।
বোলপুর পুস্তকালয়কে বলেছিলাম, কথা হল অহীন্দ্রবাবুর ছোটভাই মিন্টুবাবুর সঙ্গে। ওঁদের লোক নিয়মিত যায়; তাঁদের ‘ডেরা’ নাকি এখন আনন্দ পাব্লিশার্স-এর [য.] নীচের তলায়– আগে আপনাদের কাছে ছিল। ওখানে অন্যান্য লেখকদের প্রকাশকেরা নাকি প্রুফ পৌঁছে দেন; আনন্দর লোকেরা প্রুফ নিয়ে রাখেন। প্রুফ ফেরত যাবার সময়ে পুস্তকালয়ের লোকেরা প্রকাশকের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেন প্রুফ।…”
আজকের দিনে হয়তো আশ্চর্যই লাগবে এই সব কথা শুনে। কিন্তু তখনও সব লেখকই কাগজ-কলমে পাণ্ডুলিপি তৈরি করতেন, আমাদের এখানে কম্পিউটার আর ইন্টারনেটও তখন ভবিষ্যতের গর্ভে। এমনকী, ক্যুরিয়র সার্ভিসও সব জায়গায় ছিল না, থাকলেও নির্ভরযোগ্য ছিল না। একমাত্র উপায় ছিল ডাকে পাঠানো। তাতে সময় নষ্ট হওয়ার এবং মাঝপথে খোয়া যাওয়ার বিপদ ছিল। তাই লেখক নিজে এসে পাণ্ডুলিপি, প্রুফ দেওয়া-নেওয়া করতে না পারলে জেলার পুস্তক ব্যবসায়ীরাই আমার সহায় হতেন।
ভূদেবদার মতোই বিশ্বভারতীর বাংলা বিভাগের তাঁর সহকর্মী অধ্যাপক গোপিকানাথ রায়চৌধুরীর চিঠিতেও দেখছি প্রুফ দেওয়া-নেওয়া নিয়েই বিস্তর কথা। এমনকী, একটি চিঠিতে তিনি খোকন দাস নামক জনৈক বোলপুর-কলকাতা ডেলি-প্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে প্রুফ পাঠানোর ব্যবস্থা করতে চেয়েছেন।
দে’জ পাবলিশিং থেকে গোপিকানাথ রায়চৌধুরীর প্রথম বই– ‘বিভূতিভূষণ: মন ও শিল্প’ প্রকাশিত হয় ১৯৭৮ সালের নভেম্বর মাসে। লেখক বইটি পরিমার্জনা করে খানিকটা নতুন অংশ যোগ করে আমাদের পুনর্মুদ্রণের জন্য দিয়েছিলেন। বিভূতিভূষণের জীবনদৃষ্টি, প্রকৃতিচেতনা: অধ্যাত্মচেতনা, মানব চেতনা, উপন্যাসের মধ্যে ‘পথের পাঁচালী’, ‘অপরাজিত’, ‘আরণ্যক’, ছোটোগল্প, দিনলিপি– সব মিলিয়ে ‘বিভূতিভূষণ: মন ও শিল্প’ সংক্ষেপে বিভূতিভূষণের মনোজগতে প্রবেশ করার মতো একখানি বই।
১৯৮৪ সালে আমি ছাপলাম গোপিকানাথদার ‘রবীন্দ্র উপন্যাসের নির্মাণশিল্প’। লেখকের বিশ্বাস ছিল বাংলা উপন্যাসে আধুনিকতা এসেছিল রবীন্দ্রনাথের হাত ধরে। তাঁর উপন্যাসে ব্যক্তি দেশকাল সমাজ নরনারীর সম্পর্ক– সবটা মিলিয়েই ‘রবীন্দ্র উপন্যাসের নির্মাণশিল্প’ গড়ে উঠেছে।
এই বইটি প্রকাশের পর থেকেই গোপিকানাথদার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ অনেক বেড়ে যায়। হরিপদ ঘোষ এবং সুবীরদা তাঁর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। গোপিকানাথদা যে শুধু নিজের কাজের জন্যই আমাকে চিঠিতে লিখতেন এমনটা নয়। ১৯৮৫-র ২০ মে তাঁর লেখা একটি পোস্টকার্ড পাচ্ছি যেখানে তিনি আমাদের প্রয়োজনে লাইব্রেরিতে লেখা খুঁজতেও গিয়েছেন দেখছি। চিঠিটিতে তিনি লিখেছেন–
“মান্যবরেষু,
এই (মে) মাসের প্রথম সপ্তাহে আপনার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। সেই সময় আপনার সহযোগী শ্রী সুবীর ভট্টাচার্য মহাশয় আমাকে এখানকার রবীন্দ্রভবনে যে পুরনো পত্রিকার কয়েকটি সংখ্যার খোঁজ করার কথা বলেছিলেন, সে বিষয়ে খোঁজ নিলাম। রবীন্দ্রভনের পক্ষ থেকে জানালেন যে ওই সব পত্রিকার মধ্যে বিচিত্রা, কল্লোল, পরিচয় ও বিশ্বভারতীর সব সংখ্যাই আছে। ‘উত্তরা’র কেবল ১৩৩২ ও ১৩৩৩-এর সংখ্যাগুলি আছে। বাকিগুলি নেই। আর ‘পূর্বাশা’র [য.] কোন সংখ্যা নেই। যেসব সংখ্যা আছে, সেগুলির Xerox কপি পাওয়া যেতে পারে। এজন্য অবশ্য উপাচার্য মহাশয়ের অনুমতি দরকার। তিনি এখন এখানে নেই। জুন মাসের গোড়ায় তাঁর অনুমতির বিষয়ে জানা যাবে। তখন আপনাদের ‘জেরক্স’ করার ব্যয়ভারের উল্লেখ সহ আনুষ্ঠানিক পত্র লিখতে হবে। যা হ’ক জুন মাসের গোড়ায় এ বিষয়ে যা করণীয় জানাবো। আমার দুই বিশ্বযুদ্ধ… বইটির ‘প্রুফ’ আশাকরি শীঘ্রই পাবো।
আপনি আমার আন্তরিক প্রীতি-নমস্কার নেবেন। সুবীরবাবুকে প্রীতি নমস্কার দেবেন।…”
সুবীরদা যেসব পত্রিকার খোঁজ করেছিলেন সেগুলোর নাম দেখে মনে পড়ল– তখন আমরা ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের রচনাবলীর কাজ করছিলাম। গোপিকানাথদা পরে ১৩ অগাস্ট একটি চিঠিতে লিখেছিলেন–
“…এখানকার রবীন্দ্রভবন থেকে ধূর্জটিপ্রসাদ-সংক্রান্ত বিভিন্ন লেখা ‘জেরক্স’ করে নেওয়ার জন্য বিশ্বভারতীর উপাচার্যকে লেখা যে আনুষ্ঠানিক পত্র আমার কাছে পাঠিয়েছিলেন– আমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে তা যথাস্থানে পেশ করেছি। ওঁরা বলেছেন, শীঘ্রই এ ব্যাপারে আপনাদের সঙ্গে পত্র-যোগাযোগ করবেন। এবং যথাসম্ভব শীঘ্রই ‘জেরক্স-কপি’ আপনারা পাবেন।…”
ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের রচনাবলীর তিনটি খণ্ড ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৭-র মধ্যে প্রকাশিত হয়েছিল। প্রকাশন-সম্পাদক হিসেবে এই বইগুলিতেও সুবীর ভট্টাচার্য ছিলেন আমার প্রধান অবলম্বন।
গোপিকানাথ রায়চৌধুরীর ‘দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যকালীন বাংলা কথাসাহিত্য’ বইটির কাজও তখন চলছিল– সেটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮৬-র সেপ্টেম্বর মাসে। ১৯১৪ থেকে ১৯৩৯ সালের মাঝের সময়ে বাংলা কথাসাহিত্যের বিভিন্ন প্রবণতা নিয়ে এই বইটি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-অধ্যাপক মহলে খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। লেটারিং দিয়ে গোপিকানাথদার ‘রবীন্দ্র উপন্যাসের নির্মাণশিল্প’ ও ‘দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যকালীন বাংলা কথাসাহিত্য’ বই দু’টির মলাট করেছিলেন প্রচ্ছদশিল্পী বিজন ভট্টাচার্য।
এর কয়েক বছর পর ১৯৯৩ সালের পয়লা অগাস্ট একটি চিঠিতে দেখছি, অভিযান গোষ্ঠী আয়োজিত সে সময়ের বর্ধমান বইমেলার প্রধান কর্মকর্তা সমীরণ চৌধুরী গোপিকানাথদার সঙ্গে দেখা করেছেন। সমীরণদা আবার একসময় ‘কলেজ স্ট্রীট’ পত্রিকা সম্পাদনাও করেছেন। তবে সেসময় সম্পাদক ছিলেন প্রসূনদা (বসু)। প্রসূনদা আমাকে বলেছিলেন ‘কলেজ স্ট্রীট’-এর জন্য গোপিকানাথদা যদি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে একটি প্রবন্ধ লেখেন তাহলে ভালো হয়। সেই প্রস্তাব দিতেই সমীরণদা গিয়েছিলেন গোপিকানাথ রায়চৌধুরীর কাছে। গোপিকানাথদা আমাকে চিঠিতে সব কথা জানিয়ে লেখাটি প্রতিশ্রুত সময়ের মধ্যেই পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।
১৯৯৬ সালের ১০ ডিসেম্বর তিনি একটি চিঠিতে আমাকে জানান–
‘‘…এই পত্র মারফৎ আপনাকে একটি বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। আমার একটা বই আছে।– বইটির শিরোনাম: ‘মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়: জীবনদৃষ্টি ও শিল্পরীতি’। বইটির প্রকাশক ছিল G. A. E. Publishers। প্রকাশকের কাছ থেকে বহুকাল কোনো খবর পাইনে। চিঠি লিখেও দুর্ভাগ্যবশত উত্তর পাইনি। তবে আমি যতদূর জেনেছি, ওই বইটি আর পাওয়া যাচ্ছে না। বইটি যদি আর পাওয়া না যায়, তাহলে ওটির একটি নতুন (ঈষৎ পরিবর্তিত) সংস্করণ প্রকাশ করতে চাই। সবিনয়ে জানাই, আপনি যদি সেটি প্রকাশ করতে সম্মত হ’ন, তাহলে বাধিত হ’বো। আপনার উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম।…’’
গোপিকানাথ রায়চৌধুরীর লেখা বই তখন বাংলা ভাষা সাহিত্যের ছাত্রছাত্রী-অধ্যাপক মহলে বেশ জনপ্রিয় একথা আগেই বলেছি, তাই বইটি পুনর্মুদ্রণে আমার কোনও আপত্তিই ছিল না। কেবল দরকার ছিল প্রথম প্রকাশকের সম্মতি। G. A. E. Publishers-এর আনন্দ ভট্টাচার্যকে গোপিকানাথদা রেজিস্ট্রি ডাকে যে-চিঠি লেখেন, সেটির অনুলিপি এবং রেজিস্ট্রি ডাকের ‘এ ডি স্লিপ’-এর জেরক্স কপি তিনি আমাকে পাঠিয়েছিলেন। এই নিয়ে আমার সঙ্গে তাঁর বেশ কয়েকটা চিঠিও যে চালাচালি হয়েছিল তা বুঝতে পারছি। কিন্তু গোপিকানাথদার চিঠিতে উল্লেখ করে দেওয়া সময়সীমা অতিক্রম করে যাওয়ার অনেক পরেও G. A. E. Publishers চিঠির কোনও উত্তর না দেওয়ায় আমরা ১৯৯৮ সালের জানুয়ারি মাসে বইটি প্রকাশ করি। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে মোট সাতটি প্রবন্ধ নিয়ে ‘মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়: জীবনদৃষ্টি ও শিল্পরীতি’ দে’জ পাবলিশিং থেকে গোপিকানাথ রায়চৌধুরীর শেষ বই। নতুন সংস্করণের জন্য চমৎকার একটি প্রচ্ছদ করে দিয়েছিলেন অজয় গুপ্ত।
ভূদেবদা, গোপিকানাথদা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মনে পড়ে যাচ্ছে আরেকজন আপাদমস্তক মাস্টারমশাই সত্যেন্দ্রনাথ রায়ের কথা। সত্যেনদার জীবন রূপকথার গল্পের মতো বিচিত্র। ফরিদপুর, কুমিল্লা, ঢাকা, কলকাতা, মেদিনীপুরে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বীরসিংহ গ্রাম, রামপুরহাট হয়ে তিনি শান্তিনিকেতনে থিতু হন। বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল একসময়, পরে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যোগাযোগের সূত্রে ৪৬ ধর্মতলা স্ট্রিটে ফ্যাসিবিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘেও তাঁর যাতায়াত ছিল। সেইসূত্রে বাংলা সংস্কৃতির নক্ষত্রেরা তাঁর চেনাবৃত্তের মানুষ ছিলেন। যদিও তিনি নিজে পরিণত বয়সে লিখেছেন– ‘আমি চিন্তায় যাই-ই হই না কেন, কর্মে আমি কমিউনিস্ট নই, কর্মে অতি সাধারণ অরাজনৈতিক ভদ্রলোক।’
বিশ্বভারতীতে মাত্র ১৭ বছর কাজ করার পরই তাঁর ৬০ বছর পূর্ণ হয়। সেসময় শান্তিনিকেতনে অবসরের পর পাঁচ বছর কার্যকালের মেয়াদ বাড়ানোটা খুবই সাধারণ একটা রেওয়াজ ছিল। কিন্তু সত্যেনদার ক্ষেত্রে তা হয়নি। এটা নিয়ে তাঁর মনে একটা দুঃখবোধ ছিল। তবে বিশ্বভারতীর তদানীন্তন উপাচার্য বিষয়টা অনুধাবন করে তাঁকে ১১ মাসের জন্য একটি রিসার্চ প্রোজেক্ট রবীন্দ্রভবনে জমা দিতে বলেন। সত্যেনদা অন্ধকারে আলোর রেখা দেখার মতো সেই প্রজেক্ট জমা দেন। বিষয় ছিল– রবীন্দ্রনাথের চিন্তা বা মনন। কাজ শুরু হয়। কিন্তু প্রকাশের সময় নানা প্রাতিষ্ঠানিক টালবাহানায় বই প্রকাশ স্থগিত হয়ে যায়। তখন উপাচার্য অম্লান দত্ত ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে তাঁকে নিজের পছন্দসই প্রকাশক খুঁজে নিতে অনুমতি দেন। দু’-এক জায়গায় ব্যর্থ হওয়ার পর গ্রন্থালয় তাঁর বই ছাপতে রাজি হয়। আত্মজীবনীতে সত্যেনদা লিখছেন–
‘‘…আমার সুপরিচিত নিরঞ্জন চক্রবর্তী, যিনি ‘গ্রন্থালয়’ নামে একটি প্রকাশনা সংস্থার স্বত্বাধিকারী, তাঁকে আমার কাজ দেখিয়ে এবং প্রচুর তর্কাতর্কি করে শেষ পর্যন্ত রাজি করালাম।
একে একে সাতটি মোটা মোটা বই প্রকাশিত হল শিক্ষাচিন্তা, সাহিত্যচিন্তা, সমাজচিন্তা, স্বদেশচিন্তা, ধর্মচিন্তা, দর্শনচিন্তা, ও শিল্পচিন্তা। শিল্পচিন্তার কাজ চলছে, আরো দুটি প্রকল্পিত বই বাকি আছে– ‘রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞানচিন্তা’ আর ‘রবীন্দ্রনাথের ভাষাচিন্তা’। এমন সময় হঠাৎ একদিন প্রজেক্ট বন্ধ হয়ে গেল।
১৯৯৫ সালের ডিসেম্বরে পৌষমেলার মধ্যে রবীন্দ্র-ভবনের এক চিঠি পেলাম, আমার প্রজেক্ট উঠে গিয়েছে, আমার কার্যকাল খতম। সম্পূর্ণ বিনা নোটিশে। কার্যকাল খতম? অথচ আমি কিছু জানলাম না! এ কি নিয়মবিরুদ্ধ, ভদ্রতাবিরুদ্ধ, শালীনতাবিরুদ্ধ নয়? আমার সপ্তম ভল্যুম শিল্পচিন্তা যে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। এখন বন্ধ করে দিলে তো খুব ক্ষতি হবে। কার ক্ষতি? বিশ্বভারতীরই ক্ষতি। কিন্তু বিশ্বভারতীর ক্ষতিতে কার কী এসে যায়?…’’
গবেষণা প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেলেও গ্রন্থালয় থেকে ‘রবীন্দ্রনাথের শিল্পচিন্তা’ প্রকাশিত হয়। কিন্তু এরপরই ‘বাংলা উপন্যাসে আধুনিকতা’ বইটির পুনর্মুদ্রণ নিয়ে নিরঞ্জনবাবুর সঙ্গে তাঁর মতের অমিল হয়। নিরঞ্জনবাবু বইটি বড় করতে রাজি হচ্ছিলেন না। এদিকে সত্যেনদা বইটিকে পরিমার্জনা করে প্রায় ৪০০ পাতার কাছাকাছি দাঁড় করান। প্রায় নবকলেবরে এই বইটি তিনি আমাকে ছাপতে অনুরোধ করেন। আমি ২০০০ সালের জানুয়ারিতে সে-বই প্রকাশ করি। বইটির নাম হয়– ‘বাংলা উপন্যাস ও তার আধুনিকতা’।
দে’জ পাবলিশিং থেকে সত্যেনদার যোগাযোগ কিন্তু ১৯৮১ সাল থেকে। স্বপনদা আমাকে বলেছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ রায়ের ‘শিল্প সাহিত্য দেশকাল’ বইটি প্রকাশ করতে। পূর্ণেন্দুদা (পূর্ণেন্দু পত্রী) বইটার জন্য চমৎকার লেটারিংয়ে মলাট তৈরি করে দিয়েছিলেন। সেই থেকে শুরু– তারপর তাঁর আত্মজীবনী-সহ মোট ছ’টি বই দে’জ থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
সত্যেনদা যেমন গুণী মানুষ ছিলেন তেমনই অভিমানীও ছিলেন। ২৫ জুন ১৯৮৩ সালে তাঁর লেখা একটি চিঠিতে দেখছি তিনি তাঁর ‘শিল্প সাহিত্য দেশকাল’ বইটির প্রচার নিয়ে খুবই মৃদুকণ্ঠে অনুযোগ করেছেন। এটা যে কোনও লেখক-প্রকাশকের সম্পর্কেই ঘটে। লেখক ভাবেন প্রকাশক যথেষ্ট বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন না। কিন্তু প্রকাশকের তা করে তো কোনও লাভ নেই, কেননা বইটা শেষ পর্যন্ত তো তাঁকেই বিক্রি করতে হবে। তবু এই ভুল-বোঝাবুঝি চিরকালই চলে আসছে। আমি তাঁর চিঠি পেয়ে বিনম্রভাবে জানাই বইটির প্রচারে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তখন ২৩ জুলাই তিনি আবার একটি চিঠিতে আমাকে লিখলেন–
‘‘…আপনাকে চিঠিটা লেখা অবধিই আমি অস্বস্তিতে ছিলাম। বেশি বিজ্ঞাপন আমার নজরে পড়েনি এ কথা ঠিকই; কিন্তু এখানে অনেক পত্রিকাই ঠিক মতো আসে না, সব বিজ্ঞাপন আমার নজরে পড়ার কথাও নয়। বিজ্ঞাপন কতটা বেরুচ্ছে না-বেরুচ্ছে তা আমি লক্ষ করে দেখি নি। নিজে না-দেখে অপরের মুখে শুনে হঠাৎ আপনাকে অনুযোগ-মূলক চিঠি দেওয়া যে আমার ঠিক হয় নি, তা আমি নিজেই মনে মনে অনুভব করেছিলাম। কিন্তু তখন চিঠিটা আমি ছেড়ে দিয়েছি। আপনি ‘আজকাল’-এর বিজ্ঞাপনের কথা লিখেছেন, তা-ও আমার নজরে পড়ে নি। যখন খুব কম লিখতাম, তখন অনেক পড়বার সময় পেতাম– পত্রপত্রিকা বই সবই। এখন সেই তুলনায় বেশি লিখি, কিচ্ছু পড়বার সময় পাই না। আমার ধারণা জন্মাচ্ছে, এই ভাবেই বয়স্ক লেখকরা ক্রমে অশিক্ষিত হয়ে পড়েন।…’’
তখন সত্যেনদার স্ত্রী অসুস্থ, সত্যেনদা নিজেও রোজ ইনসুলিন নেন। ফলে সহজেই বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু আমার প্রতি ভরসা সব সময়েই অটুট ছিল।
তাঁর পরের বইটি ছিল ‘সাহিত্যতত্ত্বে রবীন্দ্রনাথ’। গ্রন্থালয় থেকে বইটি আমাদের কাছে আসে ১৯৯০ সালে। বইটির নামেও ঈষৎ বদল হয়। এর ১৩ বছর পরে দে’জ পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত হয় সত্যেন্দ্রনাথ রায়ের ‘সাহিত্য সমালোচনায় বঙ্কিমচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথ’। এটিও ছিল পুনর্মুদ্রণ– প্রথমবার প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭৪ সালে– তবে প্রকাশক কে ছিলেন তা আজ আর আমার নিশ্চিত করে মনে নেই, গ্রন্থালয়ও হতে পারে। এই বইটির মূল অবলম্বন হল ১৯৭২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সত্যেনদার সুধীরকুমার দাশগুপ্ত-বক্তৃতামালায় প্রদত্ত ভাষণ। পরে যথারীতি সেই বক্তৃতাকে পূর্ণাঙ্গ বইয়ের চেহারা দেওয়া হয়েছিল। ২০০৪ সালের এপ্রিলে আমি ছাপলাম ‘রবীন্দ্রনাথের বিশ্বাসের জগৎ’– এটিও প্রথমে গ্রন্থালয় থেকে প্রকাশিত হয়েছিল।
১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর তিনি আমাকে একটি চিঠিতে তিনটি বইয়ের ব্যাপারে জানিয়েছিলেন। তার মধ্যে এই বইটি ছিল তালিকায় সবার ওপরে। বাকি দু’টি বই করে উঠতে না পারলেও ২০০৬ সালের বইমেলায় আমি তাঁর আত্মজীবনী– ‘পূর্বাচলের পানে তাকাই’ প্রকাশ করেছিলাম। বইটি তাঁর অন্যান্য বইগুলির মতো পাঠকের আনুকূল্য না পেলেও আমার ধারণা এটি বাংলা সাহিত্যের একটি উৎকৃষ্ট আত্মজীবনী। মানুষের জীবন কোথা থেকে কোথায় চলে যায়, তার অনুপুঙ্খ বিবরণ আছে এর পাতায়-পাতায়।
সত্যেনদার কথা বলতে-বলতে চোখ পড়ে গেল তাঁর আত্মজীবনীর উৎসর্গের পাতাটিতে। পুরনো দিনের কথা বলতে বসে রবীন্দ্রনাথের এই গানটির কথা ছাড়া আর কী-ই বা তাঁর মনে আসতে পারে–
‘মাঝে মাঝে কোন্ বাতাসে চেনা ফুলের গন্ধ আসে
হঠাৎ বুকে চমক লাগায় আধা-ভোলা সেই কান্নাহাসি।’
লিখন শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়
…………………… ইতি কলেজ স্ট্রিট-এর অন্যান্য পর্ব …………………
পর্ব ৩৮। পাণ্ডুলিপি জমা দিয়ে সোমেনদা বলেছিলেন, রামকিঙ্করকে নিয়ে এ জাতীয় বই আগে লেখা হয়নি
পর্ব ৩৭। ‘কীর্তির্যস্য’র নাম বদলাতে চেয়েছিলেন ভবতোষ দত্ত
পর্ব ৩৬। কবি-দার্শনিকের বাইরে আরেক রবীন্দ্রনাথকে খুঁড়ে বের করেছিলেন অমিতাভ চৌধুরী
পর্ব ৩৫। ‘শাহজাদা দারাশুকো’ আরও বিস্তারিত লেখার ইচ্ছে ছিল শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের
পর্ব ৩৪। একজন লেখক হিসেবে আমি কি তোমার মনোযোগের যোগ্য নই, অভিমান ভরা চিঠি লিখেছিলেন শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়
পর্ব ৩৩। আমাকে ভাবায়, তারাপদ রায়
পর্ব ৩২। নববর্ষের শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ: লেখকদের মন্তব্যের খাতা!
পর্ব ৩১। পরিব্রাজক সন্ন্যাসী তারাপ্রণব ব্রহ্মচারী ভাগ্যিস থিতু হয়েছিলেন সাহিত্যে!
পর্ব ৩০। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কোনও বই আমাকে চাপিয়ে দেননি, লিখেছেন: বিবেচনা করে দেখো
পর্ব ২৯। কবিতাকে শক্তিদা বলতেন ‘জলজ দর্পণ’, তাঁর বেঁচে থাকার অবলম্বন
পর্ব ২৮। পিঁপড়ে কালিতে চুবিয়ে সাদা পাতায় ছাড়া হয়েছে, এমন পাণ্ডুলিপি ছিল বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের!
পর্ব ২৭। নিজস্ব ঈশ্বরভাবনা থাকলেও শঙ্কু মহারাজের লেখার মূল বিষয় ছিল মানুষের আলো-আঁধারি জীবন
পর্ব ২৬। বাংলাদেশে পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও একুশে বইমেলায় কখনও স্টল পাইনি
পর্ব ২৫। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি মুহূর্তের রক্ত-ঘাম-হাসি-কান্নার এক জীবন্ত দলিলচিত্র ছেপেছিলাম
পর্ব ২৪। রাখাল ছেলে যেমন বাঁশি বাজায়, আমিও তেমন নিজের খুশিতে লিখি, বলেছিলেন যাযাবর
পর্ব ২৩। রয়্যালটি-মুক্ত বইয়ের ওপর প্রকাশকদের ঝোঁক চোখে পড়ছে বইমেলাতেও
পর্ব ২২: শেষমেশ রেগে গিয়ে আমাকে চিঠিই লিখে ফেলেছিলেন শঙ্খ ঘোষ!
পর্ব ২১: ৩০০০ কপি বিক্রির মতো জীবিত বা মৃত লেখক আর হয়তো নেই
পর্ব ২০: কম বয়সে আমাদের রোববারের আড্ডা ছিল ২৮ নম্বর প্রতাপাদিত্য রোড, আশুদার বাড়িতে
পর্ব ১৯: ‘লেখা বড় হচ্ছে’ অভিযোগ আসায় খুদে হাতের লেখায় পাণ্ডুলিপি দিতেন প্রবোধবন্ধু অধিকারী
পর্ব ১৮: দু’বছরের মধ্যে সংস্করণ না ফুরলে অন্য জায়গায় বই ছাপার চুক্তি ছিল শরদিন্দুর চিঠিতে
পর্ব ১৭: পূর্ণেন্দু পত্রীর বাদ পড়া প্রচ্ছদ ও দিনেশ দাসের কবিতার শ্রেষ্ঠ দিনগুলি
পর্ব ১৬: সব প্রকাশনার যাবতীয় বইয়ের হদিশ পাওয়া যেত ‘সম্মিলিত গ্রন্থপঞ্জী’তে
পর্ব ১৫: নিছকই একটা পত্রিকা নয়, ‘কলেজ স্ট্রীট’ আমাদের আবেগ
পর্ব ১৪: খুদে পাঠকদের জন্য মিনিবই তৈরির কথা প্রথম ভেবেছিলেন অভয়দা
পর্ব ১৩: কয়েকটি প্রেসের গল্প
পর্ব ১২: দীর্ঘায়ু বই ও আইয়ুব পরিবার
পর্ব ১১: প্রেমের নয়, অপ্রেমের গল্প সংকলনের সম্পাদনা করেছিলেন সুনীল জানা
পর্ব ১০: ছোট্ট অপুকে দেখেই রঙিন ছবিতে ভরা টানটান গল্পের বই করার ইচ্ছে জেগেছিল
পর্ব ৯: চানঘরে গান-এ সত্যজিৎ রায়ের চিঠি থাকায় ব্যাপারটা গড়িয়েছিল কোর্ট কেস পর্যন্ত
পর্ব ৮: প্রকাশক-লেখকের কেজো সম্পর্কে বুদ্ধদেব গুহর বিশ্বাস ছিল না
পর্ব ৭: পুজো সংখ্যায় না-বেরনো উপন্যাস বই আকারে সুপারহিট
পর্ব ৬: মানবদার বিপুল অনুবাদের কাজ দেখেই শিশির দাশ তাঁর নাম দিয়েছিলেন– ‘অনুবাদেন্দ্র’
পর্ব ৫: সাতবার প্রুফ দেখার পর বুদ্ধদেব বসু রাজি হয়েছিলেন বই ছাপানোয়!
পর্ব ৪: লেখকদের বেঁচে থাকার জন্য অনেক কিছুই লিখতে হয়, প্রফুল্ল রায়কে বলেছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র
পর্ব ৩: পয়লা বৈশাখের খাতায় শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় মজাচ্ছলে লিখেছিলেন, ‘সুধাংশুরা রাজা হোক’
পর্ব ২: বাংলা মাসের সাত তারিখকে বলা হত ‘গ্রন্থতিথি’, বিজ্ঞাপনেও বিখ্যাত ছিল ‘৭-ই’
পর্ব ১: সত্তরের উথাল-পাথাল রাজনৈতিক আবহাওয়ায় আমি প্রকাশনার স্বপ্ন দেখছিলাম