অন্তত সাত-আট বছর আগে লেখার বাসনা মাথায় চেপে বসেছিল। সে লেখা সাহিত্য-কীর্তির জন্য নয়। স্বীকারোক্তির মতো, অনেকটা ঋণ স্বীকারের মতো। জীবনে এই যে পথ চলা, তাতে কত মানুষের সঙ্গ, কত না বিশেষ ব্যক্তি আর গুণীজনের সান্নিধ্যে এলাম। এমনও দেখেছি জীবন-পথের প্রতিটি মোড়ে একজন করে হিতৈষী দাঁড়িয়ে থাকেন। তিনি যেন আমায় হাত ধরে পথ দেখিয়ে নিয়ে যান। এই মানুষগুলো ছাড়া নিজেকে শূন্য মনে হয়।
স্বগত প্রশ্ন। স্বগত উত্তর। লেখক সমীর মণ্ডলের মুখোমুখি ব্যক্তি সমীর মণ্ডল। কারণ এই পর্ব মুখ ও মণ্ডল-এর শেষ পর্ব।
শেষ পর্ব
প্রত্যেক সৃজনশীল মানুষ, সে সাহিত্যিক হোক কিংবা চিত্রশিল্পী, সংগীতকার হোক বা নাট্যকার– একটা সময় আসে যখন তাকে থেমে দাঁড়াতে হয়। বাইরের পৃথিবীর কোলাহল থেকে দূরে, নিজের ভেতরের গভীরে ডুব দিতে হয়। কারণ সৃষ্টির পথ কখনও কেবলই দক্ষতা বা অভ্যাসের ওপর নির্ভর করে না; এর কেন্দ্রে থাকে আত্ম-অন্বেষণ, নিজেকে জানা এবং নিজের ক্ষমতার সঙ্গে বোঝাপড়া। এই বোঝাপড়ার মুহূর্তগুলো অনেক সময় নির্জনতার মধ্যে জন্ম নেয়। একসময় প্রশ্ন আসে, আমি কী পারি? আমার সীমা কোথায়? সম্ভাবনার দিগন্তই বা কতদূর? এই প্রশ্নগুলো কখনও সংকটের জন্ম দেয়, কখনও আবার মুক্তির। সৃষ্টিশীল মানুষ তখন তার নিজের সত্তার সঙ্গে একপ্রকার সংলাপে লিপ্ত হন। প্রশ্ন করেন, উত্তর খোঁজেন, আবার প্রশ্ন করেন। কখনও নিজের ওপর রাগ, কখনও গভীর ভালোবাসা। ঠিক যেন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা, নিজের ছায়ার চোখে নিজেকে দেখা।
বোঝাপড়া জরুরি। কারণ এখান থেকেই জন্ম নেয় আত্মবিশ্বাস, এখান থেকেই খুলে যায় নতুন দৃষ্টিভঙ্গির জানালা। একবার নিজের শক্তি ও সীমাবদ্ধতা বুঝে ফেললে মানুষটি অন্তত আর দ্বিধায় ভোগেন না। আরও গভীর এবং পরিণত কাজ উপহার দিতে পারার ক্ষমতা তৈরি হয়।
সৃষ্টিধর্মী কাজের শুধুমাত্র একটি শাখায় আবদ্ধ থাকলেও আর এক সীমাবদ্ধতায় ভুগতে হয়। তাই কখনও নিজের কাছে নিজে বসা যেমন দরকার, তেমনই পারলে আর একটা মাধ্যম বা সৃজনশীলতার একটা অন্য শাখায় খানিকক্ষণ বিচরণ করলে নিজেকে হয়তো আলাদা করে চিনতে পারা যায়। যে কারণে এই ‘মুখ ও মণ্ডল’ সিরিজের লেখাগুলো। মাধ্যম বদলালে মনে, মাথায়, মেজাজে আসলে কী ঘটে? শিল্প থেকে সাহিত্যে এই সাময়িক ভ্রমণ, বিষয়টা চিন্তা করতে সত্যিকারের নিজের সঙ্গে নিজেই বসলাম। অর্থাৎ আমার সঙ্গে আমারই আলাপচারিতা, সাক্ষাৎকার আকারে এখানে সাজিয়ে বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করছি। মুখ ও মণ্ডল-এ এবারের মুখ– ‘সমীর মণ্ডল’।
‘মুখ ও মণ্ডল’ কলাম লিখতে গিয়ে কেমন অভিজ্ঞতা হল?
যেহেতু আমি লেখক নই, তাই এটা মূলত লেখা-চর্চা। অক্ষর, শব্দ, বাক্য, ব্যাপারটা তো সবার মনের মধ্যে আছেই। অগোছালো, অসংগঠিতভাবে আছে। সব মাধ্যমেই স্রষ্টা এবং গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগের কিছু শর্তাবলি থাকে। সেটুকু জানার, বোঝার একটা মস্ত সুযোগ হল এখানে।
কলামটা শুরু কীভাবে?
কলামটা শুরু রোববার ডিজিটাল-এর আমন্ত্রণে। জানলাম, ‘রোববার.ইন’, ‘সংবাদ প্রতিদিন’ কাগজেরই একটা অংশ। ছাপা আকারে ‘রোববার’ পড়তাম। যেহেতু আমি মুম্বইবাসী, প্রবাসী তাই নিয়মিত প্রতিটি সংখ্যা হাতে পেতাম না। পত্রিকার কয়েকটি সংখ্যা একসঙ্গে আমাকে কলকাতার বন্ধুরা পাঠাত। সেখানে আর কিছু না হোক, ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘ফার্স্ট পার্সন’ অবশ্যপাঠ্য হয়ে উঠেছিল। সেই রোববার-এর জনপ্রিয়তা বেড়ে এই ‘রোববার.ইন’ ডিজিটাল রূপ। সারা পৃথিবীর বাঙালিরা একযোগে, যখন খুশি পড়তে পারে, ছাপা কাগজের অপেক্ষায় বসে থাকতে হয় না।
রোববার ডিজিটাল-এর সম্বিত বসু একদিন আমাকে ফোন করে একটা লেখার অফার দেয়। একটু অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। একে আমি লেখক নই, তায় খবরের কাগজের অফিস থেকে যেচে আমার কাছে লেখা চাইছে। দিন সাতেক সময়, হাজার খানের শব্দে লিখতে হবে শিল্পী বিকাশ ভট্টাচার্য সম্পর্কে রচনা। বিকাশবাবু আমার শিক্ষক। তাঁর শিল্পীসত্তা, শেখানোর পদ্ধতি এবং মানুষটি কেমন– সে বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য ছিল আমার কাছে, তাই আমি একটু সাহস পেলাম। বললাম, চেষ্টা করে দেখতে পারি, একদিন ভাবার সময় দাও। লিখলাম, লেখা বের হল, তারপরে আরও কয়েকটা। সম্বিতের সঙ্গে ভাব হয়ে গেল। আমার চেয়ে বয়সে ছোট কিন্তু ভীষণ ঠান্ডা মাথার, শান্ত স্বভাবের গুণী মানুষ সম্বিত। তারপরে একদিন কলাম লেখার অফার, ‘সিরিজ’ লিখতে হবে।
লেখার বিষয় কি ওরাই দিয়েছিল? তাছাড়া লেখার ব্যাপারে কোন বাধ্যবাধকতা কিংবা ওদের নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপারটা চাপিয়ে দেওয়ার কোনও ইশারা ছিল?
না, একেবারেই না বরং ওরাই আমাকে খুব সহজভাবেই ভাবতে দিল, নিজের পছন্দমতো। শর্ত বলতে, চারটে লেখা একসঙ্গে প্রথমে দিতে হবে এবং অন্তত ২৪-টা পর্ব লিখতে হবে। দারুণ দারুণ লেখা নিয়ে পুরনো-নতুন সব লেখক যেন ঝাঁপিয়ে পড়লেন রোববার ডিজিটালের পাতায়। সমসাময়িক সব বিষয়ে লিখছেন ডাকসাইটে লেখক। রবীন্দ্রনাথের চিত্রকলা বিষয়ে ‘ছবিঠাকুর’ লিখছে সুশোভন অধিকারী, রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘কাঠখোদাই’ কলামে লিখছেন নামী লেখকের লেখার টেবিল নিয়ে। চৈতালী দাশগুপ্ত শুরু করলেন দূরদর্শনের পুরনো দিনের গল্প, অরিঞ্জয় বোসের লেখা পুরো কন্টেম্পোরারি মুডে ‘ওপেন সিক্রেট’। লিখছে সনাতন দিন্দা শিল্পকলা বিষয়ে, ‘মেসবালক’ কলামে মেস সম্পর্কে যুব-সাহিত্য বেরচ্ছে সরোজ দরবারের হাত দিয়ে, দে’জ-এর সুধাংশুশেখর দে ‘ইতি কলেজ স্ট্রিট’ সিরিজে লিখছেন কলেজ স্ট্রিটের ইতিহাস। যশোধরা রায়চৌধুরী এবং আরও বাঘা বাঘা সাহিত্যিকরা কলাম শুরু করেছেন এর আগের ব্যাচে। এমনই আমন্ত্রণে একটা চেয়ার পেয়ে আমি আপ্লুত! কলকাতায় গিয়ে রোববার ডিজিটাল-এর তরুণ, তাজা টিম-কে সামনাসামনি দেখেও এসেছি একবার।
তোমার এই লেখার বিষয়টা এলো কোথা থেকে কিংবা অন্যান্যদের বিষয়ের সঙ্গে মিলিয়ে তুমি কী করে ভাবলে এই সিরিজের কথা?
অন্তত সাত-আট বছর আগে লেখার বাসনা মাথায় চেপে বসেছিল। সে লেখা সাহিত্য-কীর্তির জন্য নয়। স্বীকারোক্তির মতো, অনেকটা ঋণ স্বীকারের মতো। জীবনে এই যে পথ চলা, তাতে কত মানুষের সঙ্গ, কত না বিশেষ ব্যক্তি আর গুণীজনের সান্নিধ্যে এলাম। এমনও দেখেছি জীবন-পথের প্রতিটি মোড়ে একজন করে হিতৈষী দাঁড়িয়ে থাকেন। তিনি যেন আমায় হাত ধরে পথ দেখিয়ে নিয়ে যান। এই মানুষগুলো ছাড়া নিজেকে শূন্য মনে হয়। নাম করে লিস্ট বানাতে গিয়ে দেখলাম ভীষণ লম্বা হয়ে যাচ্ছে। ভয় পেয়ে বন্ধ রেখেছিলাম কাজটা। তারপরে এল ভয়াবহ অতিমারীর সময়। অঢেল সময় হাতে। বিদেশে অস্ট্রেলিয়াতে এক বছরের উপর বন্দি হয়ে রইলাম। সে সময়ে বিষয়টা নিয়ে আবার একটু লেখালেখি শুরু করেছিলাম। দেশে ফিরে আসার পর কুঁড়েমির জন্য কাজটা অসম্পূর্ণ রইল। সম্বিত বসুর কথায় বিষয়টা আবার মাথায় এল। জীবনে এই যে বিশেষ ব্যক্তির সান্নিধ্য এবং সফল মানুষের নিজস্ব কর্মকাণ্ড ছাড়াও রক্তমাংসের মানুষটা কেমন, সেই নিয়ে একটা সিরিজ লেখা যেতে পারে। সম্বিতকে জানালাম। রাজি হল। ‘মুখ ও মণ্ডল’ শিরোনামটাও ওরই দেওয়া।
সাহিত্যের জগতে তোমার আগের লেখা-লিখির তেমন উদাহরণ নেই সাধারণের মধ্যে। চিত্রকলা বিষয়ে তোমার কিছুটা নামোচ্চারণ হলেও লেখার ব্যাপারে কোনও খবর নেই। ছবি আঁকার মানুষ কলম ধরেছেন সেটার উদাহরণ খুব কম হলেও, আছে। এই যে এতগুলো এপিসোড সময়মতো নামিয়ে দিলে, ভালোমন্দ যাই হোক, সে কি আকাশ থেকে পড়ল?
পরিণত বয়সে অতীতের জীবনপথের মানচিত্র বানাতে গেলে দেখা যায়, সেখানে ভবিষ্যতের কিছু পূর্বাভাস। কেন বলছি, পিছনে ফিরে দেখছি, স্কুলজীবনে হাতে লেখা দেওয়াল পত্রিকা করছি গ্রামের ক্লাবের জন্য। সাতের দশকের সমাজ সচেতনতার হাতিয়ার, গ্রুপ থিয়েটার। তাই নাটক করেছি শুধু নয়, গ্রামে গঞ্জে স্ত্রী-চরিত্র বর্জিত নাটক, একটি স্ত্রী চরিত্র, ইত্যাদি মনোমতো নাটকের বই না-পেয়ে নিজেই লিখতে শুরু করলাম নাটক। সেখানে কিছুটা কুম্ভীলক বৃত্তি। কৈশোর, যৌবনে ছড়াও লিখেছি। কর্মজীবনে সায়েন্স মিউজিয়ামে কাজ করার সময় বিজ্ঞানের অদ্ভুত সব জ্ঞান হল। আনন্দের হতে পারে মনে করে ছোটদের জন্য বিজ্ঞান বিষয়ে মজার লেখা লিখেছি ‘কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞান’ পত্রিকায় বহুদিন। আনন্দবাজার সংবাদপত্রে, ‘আনন্দমেলা’, ‘সানন্দা’য় অল্প বিস্তর লিখেছি। পূর্ণেন্দু পত্রীর সঙ্গে আলাপ হওয়ার পরে উনি যখন ‘প্রতিক্ষণ’-এ কাজ করছেন তখনও ওঁর নতুন বিভাগ ‘আটারো বছর’-এ লিখেছি উদ্দাম মানসিকতার কথা। প্রস্তুতিপর্ব সুকুমার সংখ্যায় প্রথম প্রবন্ধ। লিটল ম্যাগাজিন, সোশ্যাল নেটওয়ার্কস, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে।
লেখার আঙ্গিকে কোন দিকে মনোযোগ দিয়েছ? বলতে চাইছি, প্রতিটি পর্বে একটি করে মানুষকে নিয়ে লেখা। কয়েকটা লেখার পরে একটা প্যাটার্ন তৈরি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। একটা একঘেয়েমি। সেটাকে কীভাবে অতিক্রম করবে এ সমস্ত মাথায় কাজ করেছিল কি?
এটা একটা দারুণ সমস্যার কথা বললে। শুরুতে এটা আমি বুঝতে পারিনি। পরে মনে হয়েছে এই একঘেয়েমিটা লেখক, পাঠক– দু’জনের কাছেই বিরক্তিকর হতে পারে। আমি যখন লিখছি, বারবার একইরকমভাবে লিখে যাওয়া কতগুলো মানুষের বিবরণ। অনেক জিনিস তো কমন হবে। সেটা বিরক্তিকর হবে। শেষপর্যন্ত যেভাবে এটাকে সাজানো হয়েছে তা হল, বিভিন্ন চরিত্রগুলোর মধ্যে কাছাকাছি চরিত্রের মানুষগুলোকে পরপর লিখিনি। যেমন শিল্পকলার ক্ষেত্রে শিল্পী-মানুষের কথা পরপর লিখিনি। তার পাশে অন্য চরিত্র নিয়ে পরের পর্বে লিখেছি। এইভাবে একটা একঘেয়েমি দূর করার রাস্তা হল। অন্যদিকে মানুষগুলোর সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের ওঠাবসা কাজ করার জন্য একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এই সম্পর্কগুলো মোটামুটি দু’-তিন ধরনের। কারও কাছে আমি ভীষণ ভীত, সতর্ক, তাঁর স্নেহধন্য। সেক্ষেত্রে আমি স্বভাবতই বিনয়ী। কারও কাছে আমি বন্ধু, তাই দু’জনের মধ্যে কথোপকথন, বর্ণনা ইত্যাদি সমান মাপের আর খোলামেলা। কোনও কোনও সময় বন্ধুস্থানীয় কোনও মানুষের কথা বলতে গিয়ে কখনও কখনও আমি নিজে মূল চরিত্রকে ছাপিয়ে গিয়েছি খানিকটা। সে আমার দুর্বলতা। বিভিন্ন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, সময় এবং তৎকালীন পরিবেশ ইত্যাদি নিয়ে লিখতে গিয়ে আপনা থেকেই দেখলাম ভাষা বদলে যেতে থাকল। শব্দ সাজানো, বাক্য গঠন ইত্যাদি বদলে নিজে থেকেই আঙ্গিকে নতুনত্ব এল। সে এক মস্ত খেলা, তা পুরোপুরি উপভোগ করলাম এই সিরিজে।
তোমার ছবি আঁকার নিয়ম-কানুন থেকে এখানে লেখার কম্পোজিশনে নিশ্চয়ই কিছুটা সাহায্য হয়েছে? অথবা তুমি কি এই লেখায় অন্য কোনও সাহিত্যিকের ধরন অনুসরণ করেছ?
আমার এই লেখার ধরনটা, না-গল্প, না-প্রবন্ধ, না-রম্যরচনা। এটা একান্তই ব্যক্তিগত গদ্য। তাই অন্য লেখকের ধরন অনুসরণ করার খুব একটা প্রয়োজন হয়নি। তুমি ঠিকই বলেছ, বরং ছবির কম্পোজিশনে বিভিন্ন এলিমেন্টস কীভাবে সাজাতে হয়– সেই বুদ্ধি থেকেই এখানে আমি অনেকটা কম্পোজ করেছি। সেটাতে আমি সহজ। পাঠকের কথাটা মাথায় রেখেছিলাম, মানে কোন জাতীয় পাঠক এই লেখা পড়তে পারবে বা পছন্দ করবে। সেক্ষেত্রে দেখলাম, খুব সাধারণভাবে তাদেরকে রাখাই ভালো। তাই লেখাতে অকারণ কোনও বড় শক্ত শব্দ ব্যবহার করিনি, কোনও বিষয়বস্তুর বা কোনও মাধ্যমের টার্মিনোলজি সযত্নে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি, গল্প বলার ঢঙে রেখেছি। কোথাও প্রবন্ধ লেখার মেজাজ এলেও কেবল নিরস তথ্য সরবরাহের ইচ্ছে ছিল না। কোনও সফল মানুষের বা তারকাদের চরিত্রের অনেক কথা অনেকে আগে থেকেই জানেন, সেই সমস্ত কথা না বলার চেষ্টাই করেছি। শব্দের ফর্ম নিয়ে কোনও গোঁড়ামি রাখিনি যেমন একই লেখার মধ্যে কখনও ‘একটা’ আবার ‘একটি’, ‘দেওয়া’ ও ‘দেয়া’, ‘গেছে’ ও ‘গিয়েছে’ ইত্যাদি গদ্যের আবহ অনুযায়ী দুটোই রেখেছি, যখন যেমন চেয়েছি। ঠিক যেমন আমি ছবি আঁকার বেলাতে করি।
ছবি আঁকার ব্যাপারে যে মানসিকতা এবং কারিগরি দিক, তার সঙ্গে এই লেখার ধরনের মিল কোথায়, সেটা আরেকটু খুলে বলবে?
ছবি আঁকার অভ্যাস থেকেই বেশিরভাগটা লিখেছি। যেমন বিভিন্ন এলিমেন্ট বা চরিত্রগুলোকে আলাদা আলাদা করে স্টাডি করা হয় ছবির বেলায়। প্রতিটি চরিত্র, মোটিফ এবং ব্যাকগ্রাউন্ড ইত্যাদি স্পেস আর ফর্মগুলোকে যেমন আলাদা আলাদা ভাবে ভেবে নেওয়া হয়। কোনও একটা চরিত্রকে কীভাবে আকার দেব, তার আকৃতি কেমন হবে– সেটা আলাদা করে স্টাডি করা হয় নানাভাবে। এখানেও প্যারাগ্রাফগুলোকে এক একটি চরিত্র, সময়, পরিবেশ বর্ণনা ইত্যাদি হিসাবে ধরে তার আকার আকৃতি কেমন হবে অর্থাৎ কত বড় প্যারা হবে বা কত ছোট প্যারা হবে, সেই প্যারার মধ্যে কী চিত্রকল্প থাকবে– সেইভাবে ভাবা হয়েছে। এক একটা প্যারাকে ছবির অংশ হিসেবে আলাদা আলাদা করে লিখে পরে জুড়ে টোটাল ছবির আকার দিয়েছি। কখনও কোনও বিধর্মী প্যারা পরপর থাকলে বা রাখতেই হলে অল্প ভাষা বদলে দুটোর মধ্যে একটা সেতু তৈরি করার খেলাও অনেকটা ছবির মতোই।
বেশ কিছুদিন যাবৎ সাহিত্যের জগতেও তোমার বিচরণ হল। আজকের দিনে বাংলা সাহিত্য এবং আধুনিক চিত্রকলা এই দুটো বিষয়ে তুলনামূলকভাবে কিছু বলবে?
সত্যি বলতে, সাহিত্য সাধারণ মানুষের কাছে যেমন হয় আমার তেমনই ছিল, অর্থাৎ একটু হালকা। কিন্তু এই পর্যায়ে এসে সাহিত্যটাকে আমি একটু বড়-বড় চোখ করে দেখলাম। আমার মনে হয়, বাংলা সাহিত্য অনেক ভালো কাজ করছে। এখানে রোববার ডিজিটালে তো দেখলাম বিষয়-ভাবনা, বিষয়-চিন্তা অনেক সুন্দর। এবং কাজের মানুষ যা বেড়েছে, তা অভাবনীয়। নতুনভাবে কাজ করার অনেক রাস্তাও বেরিয়েছে, কাজের পরিসর প্রশস্ত হয়েছে। মনে রাখতে হবে, এটা একুশ শতক। আমাদের ভাগ্যি ভালো, আমরা ঠিক যখন কাজ করছি তখন কেউ কোনও বিষয়ে যদি নতুন পথের প্রবর্তক হয়, তাহলে এটা কিন্তু একটা দারুণ সময়। সমস্ত দরজা খোলা। শিল্প এবং সাহিত্য– দুটো ক্ষেত্রেই আগে যা কিছু জ্ঞানগম্যি আছে তার আমূল পরিবর্তন করার জন্যেও একটা উত্তেজনাপূর্ণ সময় এখন। ধারা এবং ধারণার যে স্বাধীনতা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার যে স্বাধীনতা, কাজের নতুন কনসেপ্ট তৈরি এবং কলাকৌশলের প্রয়োগের স্বাধীনতা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে একটা কথা সোজা করে বলি, চিত্রকলা বা শিল্পকলার ক্ষেত্রে যে আধুনিকতা কিংবা পরীক্ষা-নিরীক্ষা– তা কিন্তু আন্তর্জাতিক এবং সেটা শুরু হয়ে গিয়েছে অনেকদিন আগেই। বরং বাংলায় সাহিত্য গোঁড়ামিমুক্ত হয়ে বা বন্দিমুক্ত হয়ে তার পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরিসর এখন বেড়েছে।
আমরা আবার ফিরে আসি মুখ ও মণ্ডলের আলোচনায়। এত বিচিত্র বড়মাপের মানুষের কাছে গেলে কীভাবে?
বেশিরভাগই কর্মসুবাদে। তাছাড়া অভাব আর নানা কিছু করার অতি উৎসাহ। একেবারে শূন্য থেকে শুরু। অভাব বলতে শুধু খাদ্যাভাব বা অর্থাভাব নয়, সমস্ত কিছুরই অভাব। শিক্ষার অভাব, সংস্কৃতির অভাব, জ্ঞানের অভাব। সমস্ত কিছুকেই আমি অভাব বলছি। আধুনিক সমাজে আমরা অনেকটা এগিয়ে, একটা জায়গা থেকে জীবন শুরু করি। অর্থাৎ শূন্য থেকে জীবন শুরু আধুনিক সমাজে প্রায় নেই বললেই চলে। নিজে নিজেই একটি শূন্যতা বা শুরুটাকে শূন্য ভেবে এগোলে দেখা যাবে, মানুষে মানুষের সম্পর্ক অনেক বেশিই হবে।
সিরিজটা পাঠক কেমন নিয়েছে?
ভালোই তো মনে হয়। ডিজিটাল ম্যাগাজিন ছাড়াও নিয়মিত আমার ফেসবুকে মানে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং-এ এর লিংক দিয়ে পাঠক চেয়েছি। এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ব্যাপারটা ভারি অদ্ভুত ঠিক যেন রাস্তার দেওয়ালে একটা পোস্টার বা ছবি কিংবা লেখা, যা কিছু সেঁটে দিয়ে চুপচাপ উল্টোদিকে ফুটপাতে বসে দেখে যাও, কে কীভাবে দেখছে। কোনও কিছু লেখা বা ছবির হাতে-হাতে ফিডব্যাক পেতে হলে ফেসবুক একটা অদ্ভুত ভালো জায়গা। সেখানে অনেককেই চিনি না অথচ তাদের মন্তব্য থেকে একটা আন্দাজ করা যায়, কোন দিকে যাচ্ছে। এই পুরো সিরিজটাতে দেখলাম অনেক প্রথিতযশা শিল্পী, পেশাদারি সাহিত্যিক, গবেষক, শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের মতো কিছু তরুণ তরুণী পাঠক-দর্শক মন খুলে মন্তব্য লিখলেন। তা থেকে ধারণা হল ওঁদের পছন্দ হয়েছে।
কেন?
অন্যরকম। হয়তো অ-লেখকের লেখা, তাই সেটা অন্যরকম।
নিন্দুকেরা কী বলছে?
নিন্দুকের বড় অভাব দেখছি। কারণ নিন্দা করার পিছনেও কিন্তু সৃজনশীলতার আভাস থাকে। তবে নিন্দুকেরা কিছু বলছে না বলে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে হবে না। যদি বেশি প্রশংসা হয় তাহলেও ভয়ের আছে। একটা বিষয়ে মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়, যেন স্তাবকতার খপ্পরে পড়ে না যাই। তার হলে আসল উদ্দেশ্যটাই তো ভেস্তে যাবে।
শিল্পকর্মের মানুষ বেশি এসেছে দেখছি এই সিরিজে।
গণেশ পাইন, সুনীল দাস, এম এফ হুসেন, শ্যামল দত্ত রায়, সুনীল পাল, অতুল বসু, রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, পরিতোষ সেন। এঁরা শিল্পকর্মের মানুষ। আমি মূলত শিল্পকর্মের কাজের লোক তাই শিল্প-সংক্রান্ত ব্যাপারে অন্যান্য মানুষের সঙ্গে আমার কাছাকাছি আসার সুযোগ সাধারণভাবে বেশি। তবে অন্যান্য বিভাগের মানুষও তো কম নেই। মঞ্চ, অভিনয়, সিনেমা, সাহিত্য, সংগীত, নৃত্য, ম্যাজিক, বিজ্ঞান, রাজনীতি, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য, ফ্যাশন, কার্টুন, ছাপাখানা, সাংবাদিকতা ইত্যাদি বিষয়ে অনেক মানুষের উপস্থিতি এই সিরিজে।
সব মিলিয়ে এটা কী একরকম আত্মকথন হয়ে উঠল?
তুমি বললে বলে আমারও তাই মনে হচ্ছে। আমি এসেই পড়ছি। সিরিজের শিরোনামেও তেমনই আভাস। এখানে বিশেষ ব্যক্তির সান্নিধ্য, স্মৃতিচারণ, শ্রদ্ধা জ্ঞাপন– এই যখন মুখ্য ব্যাপার তখন সে মানুষটা শুধু একা থাকতে পারে না, আমি সেখানে এসে পড়ছি অবধারিত ভাবে। আমি যখন আসছি সে ব্যাপারে আমার কথা যতটুকু বলা হবে সেটা তো আত্মকথা, আত্মকথন ছাড়া আর কিছু নয়। তাছাড়া নিজের কিছু কীর্তিকলাপের কথা বলতে ইচ্ছে করে যে।
কী আসেনি? কে আসেনি?
আরও যে সব মানুষের সান্নিধ্য লাভ করেছি এবং পরবর্তীতে ঘনিষ্ঠ হয়েছি তেমন অনেক মানুষ বাকি রইল। সংগীতের জয়কৃষ্ণ সান্যাল মহাশয়, যিনি ধ্রুপদ গাইয়ে, তাঁর বাগবাজারের বাড়িতে ধ্রুপদ এবং ধামারের আসর বসত নিয়মিত। আধুনিক গানের আরতীদি, আরতী মুখোপাধ্যায় বসবাস করেন মুম্বইয়ে। সুরক্ষা, পুলিশ, মিলিটারি, গোয়ন্দা। এ এন রায়, সন্ধি মুখোপাধ্যায়, দীপাঞ্জন চক্রবর্তী। চুনী গোস্বামী, খেলার মানুষ, শিল্প বিষয়ে কথা বলেছেন আমার সঙ্গে। সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আর স্বাতীদি ভীষণ প্রিয়জন। খালেদ চৌধুরীর লোকসংগীতের বাদ্যযন্ত্র সংগ্রহ, মঞ্চসজ্জা এবং প্রচ্ছদ। রন্ধনশিল্পী সঞ্জীব কাপুর। রণেন আয়ন দত্ত, পাহাড়ী সান্যাল, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, আলাদা আলাদা মেজাজ। নমস্য, শিব্রাম চক্রবর্তী, শৈল চক্রবর্তী। সিনেমার অঞ্জন দাস, গৌতম ঘোষ, শাম বেনেগাল, গোবিন্দ নিহালনি। দক্ষিণ ভারতের সুধা মূর্তি, অরুন্ধতী নাগ। দিল্লির শিল্পী, রামেশ্বর ব্রুটা, মানু পারেখ, বিমল দাশগুপ্ত। আরও আছে।
রাজনীতি এসেছে কিন্তু বড় সাবধানী। দুরন্ত দাপুটে কেউ নেই?
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ভি পি সিং এবং মেনকা গান্ধী আছেন এখানে। আমার লিস্টে রাজনৈতিক মানুষের নাম আরও ছিল। শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী আর মুম্বাইয়ের বালাসাহেব ঠাকরে-কে নিয়ে লেখার ইচ্ছে ছিল। দিনরাত ওঠাবসা না হলেও জ্যান্ত মানুষকে দেখলেও অনেক। একটু কথা, খানিকটা সময় কাটাতে পারলেও ১৫০০ শব্দ লিখে ফেলা যায় দেখছি।
ছোট করে এখানে হয় না?
হ্যাঁ, হতেই পারে। বালাসাহেব ঠাকরের সঙ্গে আমার আলাপ হয় প্রীতীশ নন্দী শো-তে। উনি নিজে একজন শিল্পী এবং ক্যারিকেচার করতেন। মানুষের মুখ ওঁর ভীষণ প্রিয় তাই আমার সানডে অবজারভারের ওই সিনেমা অভিনেতাদের মুখগুলো খুব পছন্দ হয়েছিল। গল্প প্রসঙ্গে উনি বললেন তুমি এগুলোতে কীভাবে রং লাগাও সেটা তোমার কাজের সময়ে দেখতে চাই। আমার বাড়িতে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করলে তো হবে না, সমাজে এবং প্রতিবেশীদের মধ্যে যা ‘আফটার ইফেক্ট’ তৈরি হবে সেটা সামলানোর ক্ষমতা আমার নেই। দিনে দু’বেলা মানুষের আপদে-বিপদে ওঁর সাহায্য নিতে আমার শরণাপন্ন হবে।
ইন্দিরা গান্ধীর গল্প আলাদা। ছোট্ট একটা ঘটনা বলি। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শংকর রায়ের তত্ত্বাবধানে বিধান রায়ের স্বপ্ন প্রকল্প, লবণ হ্রদের উদ্বোধন হবে। সেখানে কংগ্রেস অধিবেশন এবং বিশাল মঞ্চ। ইন্দিরা গান্ধী থাকবেন তার পাশেই। বসবাসের ঘরটা হবে খড়ের ছাউনিতে কুঁড়েঘর। ভেতরে সিমেন্টের দেয়ালের মধ্যে সমস্ত আধুনিক আয়োজন। মাস্টারমশাই সুনীল পালের সঙ্গে সেখানে অধিবেশন মঞ্চ সাজানোর প্রচুর অলংকরণের কাজ। আঁকা-জোকা, সোলার কাজ, কাগজের কাজ ইত্যাদি করার সুবাদে আমরা সিদ্ধার্থ শংকর রায়ের খুব কাছে গেলাম। কখনও কখনও উনি পিঠ চাপড়ে বলতেন, ‘তাড়াতাড়ি কর, সময় মতন শেষ করতে হবে।’ গ্রামে বাবাকে এই গল্প বলাতে বাবাও গরম। বাবা সেই গল্প বললেন গ্রামের অন্যান্য লোককে এবং তারই মধ্যে একজন, যাকে বাংলাদেশের জমিজমা-সম্পত্তি ছেড়ে চলে আসতে হয়েছিল, সে আমাকে ধরল। কেন? না সিদ্ধার্থ শংকর রায় যখন তোমার বন্ধু তাহলে ওঁর বন্ধু ইন্দিরা গান্ধী এবং তাঁর বন্ধু মুজিবুর রহমান। তিনি নাকি এখন ফেলে আসা হিন্দুদের সমস্ত সম্পত্তি ফিরিয়ে দিচ্ছেন। তাই আমাকে অনুরোধ, প্রায় পায়ে ধরে, যে তুমি যদি একটু সিদ্ধার্থ শংকর রায়কে বলো তাহলে মুজিবুর রহমান আমাদের সম্পত্তি-জমি-জায়গা ফেরত দিতে পারেন!
পাঠকের প্রতিক্রিয়া অনুসারে সিরিজের সবচেয়ে জনপ্রিয় কোন এপিসোড?
আমির খান, ফণী জ্যাঠা।
তোমারও তাই মনে হয়?
আমি তো অবাক। আমির খান তার সিনেমার ক্যারিশমা বা জনপ্রিয়তার ব্যাপারে তুঙ্গে, তাই তার ভক্তদের সংখ্যাও বহু। সেক্ষেত্রে তার সম্পর্কে লেখা অনেক বেশি জনপ্রিয় হবে, বিশেষ করে ফেসবুকে প্রচুর লাইক পড়বে। কিন্তু ফণী জ্যাঠা একেবারেই অপরিচিত অথচ তার সম্পর্কে লেখা, একটা অজানা মানুষের অজানা গল্পের মতো। আশ্চর্য, সেখানেও দেখলাম প্রচুর পরিমাণে ওঁকে সাপোর্ট করছে, পছন্দ করছে। আসলে যুক্তি নেই কেন লোকে পছন্দ করেছে। তবে হয়তো একটা গল্প আকারে ভালো লাগছে এবং মানুষটাকে মেলাতে পারছে তাদের অনুভূতির স্তরে।
এই মুহূর্তে আরও লেখার ইচ্ছে আছে?
এক্ষুনি না। একটু বিরতি চাই। একটা প্রতিক্রিয়ার দরকার ছিল, জানার দরকার ছিল, ঠিক কোন দিকে এগোচ্ছি। সেই অর্থে এই সিরিজটা। এখানে আপাতত শেষ করছি। বড় মাপের মানুষ তো হল, এই অভিজ্ঞতা থেকে আরও মনে হল, যে মানুষগুলোকে আমরা ‘কাজের লোক’ বলে দাগিয়ে দিয়ে বসে আছি সেই লোকগুলোর সান্নিধ্যও কিন্তু কম মূল্যবান নয়। আসলে আধুনিক কালে প্রযুক্তির উন্নতিতে এবং পারিপার্শ্বিক হাওয়ায় তারা প্রত্যেকেই অনেক শিক্ষিত। সেটাকে এড়িয়ে গেলে চলবে না। সৃজনশীল ব্যক্তিরা নিজের কাজের ফাঁদে নিজেই পড়ে আছে। তাদের সময় নেই। আসল জগৎটা সম্পর্কে তারা অনেক ব্যাপারেই অশিক্ষিত এবং উদাসীন। অন্যদিকে যে মানুষটি মুদির দোকানদার, সেলুনে চুল কাটে, ছাতা বা জুতো সারায়, রাস্তার হকার, পুরোহিত, পুলিশ কিংবা ড্রাইভার, তাদের কাজের ধরন কিন্তু পঞ্চাশ বছর আগেকার মতো এখন আর নেই। তেমন বন্ধুর সংখ্যাও আমার কম নয়। ভাবছি।
… পড়ুন ‘মুখ ও মণ্ডল’-এর অন্যান্য পর্ব …
পর্ব ৩৯। গোপাল ঘোষের তুলির আঁচড়ে ছিল চাইনিজ টান আর ছবির ওজনে ইউরোপ
পর্ব ৩৮। প্রীতীশদা শিখিয়েছিলেন বন্ধুত্বের নতুন সংজ্ঞা– ‘ডোন্ট নক, জাস্ট কাম ইন’
পর্ব ৩৭। সুনীল দাসের ছবি আঁকা ছিল কাগজে পেনসিল না ঠেকিয়ে একটু ওপরে, যেন হাওয়াতে ড্রইং হচ্ছে
পর্ব ৩৬। উপেন্দ্রকিশোর, সুকুমারের বাংলার হরফ সংস্কারের কাজই সত্যজিৎকে টাইপোগ্রাফি চর্চার দিকে ঠেলে দিয়েছিল
পর্ব ৩৫। যদি সত্যিই কোনও কিছুকে ভালোবাসো, তবে সাহসী হও– বলেছিলেন ড. মুকেশ বাত্রা
পর্ব ৩৪। শক্তিদার ব্র্যান্ড কী? উত্তর দিয়েছিলেন, ‘বাংলায় কোনও ব্র্যান্ড হয় না’
পর্ব ৩৩। পত্রিকা পড়তে ছোটদের যেন কোনও অসুবিধে না হয়, খেয়াল রাখতেন নীরেনদা
পর্ব ৩২ । কে সি দাশের ফাঁকা দেওয়ালে আর্ট গ্যালারির প্রস্তাব দিতেই রাজি হয়ে গিয়েছিলেন বীরেনদা
পর্ব ৩১। কলকাতা থেকে ব্যাঙ্গালোরে, আমার জন্য তেজপাতা আর পাঁচফোড়ন নিয়ে এসেছিলেন অহিদা
পর্ব ৩০। হাতের লেখা ছোঁয়ার জন্য আপনার ছিল ‘ভানুদাদা’, আমাদের একজন ‘রাণুদিদি’ তো থাকতেই পারত
পর্ব ২৯। পুবের কেউ এসে পশ্চিমের কাউকে আবিষ্কার করবে– এটা ঢাক পিটিয়ে বলা দরকার
পর্ব ২৮। অন্ধকার নয়, আলো আঁকতেন গণেশ পাইন
পর্ব ২৭। প্রীতীশ নন্দীর চেয়েও কলকাতা ঢের বেশি চেনা অমিতাভের!
পর্ব ২৬। রুদ্রদা, আপনার সমগ্র জীবনযাত্রাটাই একটা নাটক, না কি নাটকই জীবন?
পর্ব ২৫। ক্ষুদ্রকে বিশাল করে তোলাই যে আসলে শিল্প, শিখিয়েছিলেন তাপস সেন
পর্ব ২৪: নিজের মুখের ছবি ভালোবাসেন বলে জলরঙে প্রতিলিপি করিয়েছিলেন মেনকা গান্ধী
পর্ব ২৩: ড. সরোজ ঘোষ আমাকে শাস্তি দিতে চাইলেও আমাকে ছাড়তে চাইতেন না কখনও
পর্ব ২২: মধ্যবিত্ত সমাজে ঈশ্বরকে মানুষ রূপে দেখেছেন রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়
পর্ব ২১: ‘তারে জমিন পর’-এর সময় আমির খান শিল্পীর আচার-আচরণ বুঝতেই আমাকে ওঁর বাড়িতে রেখেছিলেন
পর্ব ২০: আমার জলরঙের গুরু শ্যামল দত্ত রায়ের থেকে শিখেছি ছবির আবহ নির্মাণ
পর্ব ১৯: দু’হাতে দুটো ঘড়ি পরতেন জয়াদি, না, কোনও স্টাইলের জন্য নয়
পর্ব ১৮: সিদ্ধার্থ যত না বিজ্ঞানী তার চেয়ে অনেক বেশি কল্পনা-জগতের কবি
পর্ব ১৭: ডানহাত দিয়ে প্রতিমার বাঁ-চোখ, বাঁ-হাত দিয়ে ডানচোখ আঁকতেন ফণীজ্যাঠা
পর্ব ১৬: আমার কাছে আঁকা শেখার প্রথম দিন নার্ভাস হয়ে গেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ভি. পি. সিং
পর্ব ১৫: শঙ্করলাল ভট্টাচার্য শিল্পীদের মনের গভীরে প্রবেশপথ বাতলেছিলেন, তৈরি করেছিলেন ‘বারোয়ারি ডায়রি’
পর্ব ১৪: নাটককে পৃথ্বী থিয়েটারের বাইরে নিয়ে এসে খোলা মাঠে আয়োজন করেছিল সঞ্জনা কাপুর
পর্ব ১৩: চেষ্টা করবি গুরুকে টপকে যাওয়ার, বলেছিলেন আমার মাইম-গুরু যোগেশ দত্ত
পর্ব ১২: আমার শিল্প ও বিজ্ঞানের তর্কাতর্কি সামলাতেন সমরদাই
পর্ব ১১: ছবি না আঁকলে আমি ম্যাজিশিয়ান হতাম, মন পড়ে বলে দিয়েছিলেন পি. সি. সরকার জুনিয়র
পর্ব ১০: তাঁর গান নিয়ে ছবি আঁকা যায় কি না, দেখার ইচ্ছা ছিল ভূপেনদার
পর্ব ৯: পত্র-পত্রিকার মাস্টহেড নিয়ে ম্যাজিক দেখিয়েছিলেন বিপুলদা
পর্ব ৮: সৌমিত্রদার হাতে কাজ নেই, তাই পরিকল্পনাহীন পাড়া বেড়ানো হল আমাদের
পর্ব ৭: ঘোড়াদৌড়ের মাঠে ফ্যাশন প্যারেড চালু করেছিলেন মরিন ওয়াড়িয়া, হেঁটেছিলেন ঐশ্বর্য রাইও
পর্ব ৬: একাগ্রতাকে কীভাবে কাজে লাগাতে হয় শিল্পের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, ধরিয়ে দিয়েছিলেন গুরু গোবিন্দন কুট্টি
পর্ব ৫: কলকাতা সহজে জয় করা যায় না, হুসেন অনেকটা পেরেছিলেন
পর্ব ৪: যে পারে সে এমনি পারে শুকনো ডালে ফুল ফোটাতে, বলতেন চণ্ডী লাহিড়ী
পর্ব ৩: সহজ আর সত্যই শিল্পীর আশ্রয়, বলতেন পরিতোষ সেন
পর্ব ২: সব ছবি একদিন বের করে উঠোনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলাম, বলেছিলেন অতুল বসু
পর্ব ১: শুধু ছবি আঁকা নয়, একই রিকশায় বসে পেশাদারি দর-দস্তুরও আমাকে শিখিয়েছিলেন সুনীল পাল
বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর খুব সঠিকভাবেই ভারতের বিদেশনীতির ব্যাখ্যা করে আগাম বলে রেখেছিলেন, ‘হোয়াইট হাউস ডেমোক্র্যাট প্রার্থী না রিপাবলিকান প্রার্থীর দখলে গেল তা নিয়ে নয়াদিল্লি মোটেও চিন্তিত নয়। কারণ, ভারত ও আমেরিকার সম্পর্কের এতে কোনও পরিবর্তন ঘটবে না। গত পাঁচটি প্রেসিডেন্টের আমলেই ভারত ও আমেরিকার সম্পর্কের উন্নতি ঘটেছে।’
নতুন লেখককে এড়িয়ে গিয়ে পুরনো লেখকদেরই বই ক্রমাগত করে যাওয়ার মধ্যে এক ধরনের চিন্তার স্থবিরতা আছে বলে আমার মনে হয়। একটু গভীরে গেলে মনে হয়, রয়্যালটি যুক্ত বই-ই প্রকাশকের পক্ষে মঙ্গলদায়ক, সুবিধে অনেকগুলো। একই বইয়ের দশ-পনেরো রকম সংস্করণ বাজারে থাকবে না। বইটা আপনি নির্ভয়ে প্রচার করতে পারবেন।
জীবনে প্রথম প্রবন্ধ লিখেছিলাম। সাহিত্যে সুকুমার রায়ের ইলাস্ট্রেশন নিয়ে। বিশেষ করে জোর দিয়েছিলাম হাইব্রিড জন্তু-জানোয়ার বানানোর দিকটায়। সেই লেখায় রায়সাহেব আমার হাতে লেখা পাণ্ডুলিপির মার্জিনে কিছু কিছু সংশোধনী নির্দেশ দিয়েছিলেন, শিক্ষকের মতো হাতের লেখায়। বারবার ছুঁয়ে দেখেছি মার্জিনে সে হাতের লেখা।