Robbar

দেবেশ রায়ের যেমন ‘বৃত্তান্ত’, আফসার আমেদের তেমন ‘কিস্‌সা’

Published by: Robbar Digital
  • Posted:September 7, 2025 4:13 pm
  • Updated:September 7, 2025 6:31 pm  

দে’জ থেকে প্রকাশিত আফসারদার বইয়ের তালিকা দেখতে গিয়ে চোখে পড়ল সেই ১৯৮৯ সাল থেকে প্রতি বছর তাঁর একটা করে, কোনও-কোনও বছর একাধিক বই আমি প্রকাশ করে গেছি। তবে ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত ‘বিবির মিথ্যা তালাক ও তালাকের বিবি এবং হলুদ পাখির কিস্‌সা’ থেকে তাঁর লেখা একটা অন্য মাত্রায় যেতে শুরু করে। তাঁর লেখা এই কিস্‌সা প্রকাশের সঙ্গে-সঙ্গেই পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এরপর তাঁর লেখা আরও পাঁচটি ‘কিস্‌সা’ দে’জ থেকে প্রকাশিত হয়েছে– ‘কালো বোরখার বিবি ও কুসুমের গন্ধ এবং চল্লিশজন লোক’, ‘মেটিয়াবুরুজে কিস্‌সা’, ‘এক আশ্চর্য বশীকরণ কিস্‌সা’, ‘হিরে ও ভিখারিনী সুন্দরী রমণী কিস্‌সা’ এবং ‘ঘোড়সওয়ার কিস্‌সা’। এগুলোর মধ্যে ‘মেটিয়াবুরুজে কিস্‌সা’ খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল।

সুধাংশুশেখর দে

৪৮.

দেবেশদার সূত্রে বেশ কয়েকজন সুলেখকের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তাদের মধ্যে আফসার আমেদের সঙ্গে পরিচয় অচিরেই ঘনিষ্ঠতায় বদলে গিয়েছিল। আফসার আমেদ বয়সে আমার চেয়ে পাঁচ-সাত বছরের ছোট ছিলেন, কিন্তু আমি নিজের স্বভাববশে চিরকাল তাঁকে আফসারদা বলেই ডেকেছি।

আফসার আমেদ

আফসারদার বই প্রথম ছেপেছিলাম ১৯৮৯ সালে। তিনি তখন বছর তিরিশের নবীন লেখক। তার আগের বছরই দে’জ থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘তিস্তাপারের বৃত্তান্ত’। সেই বই প্রকাশের সময়েই আফসারদার সঙ্গে আমার আলাপ। দেবেশদা আমাকে বলেছিলেন, আফসার আমেদ নতুন লেখকদের মধ্যে ভীষণ সম্ভাবনাময়।

চিঠির ফাইল ঘেঁটে আফসারদার লেখা একটিই চিঠি খুঁজে পেলাম। সেটি দেখে বোঝা যাচ্ছে, ১৯৯০ সালে ৫ জানুয়ারি দে’জ পাবলিশিং-এর দপ্তরে আমার খোঁজে এসে না পেয়ে আমাদের প্যাডেই লিখে গেছেন–

‘সুধাংশুদা,

দেবেশদার পুরস্কারের খবর যে-সব কাগজে বেরিয়েছিল, সে-সবের
XEROX Copy চাই। সাহিত্য অকাদামীর [অকাদেমি] চায়। সোমবার
অবশ্যই চাই। আমি নিয়ে যাব।’

এতটাই দেবেশদার নিকটজন ছিলেন তিনি। দেবেশদা তাঁর ওপর নির্ভর করতেন খুব। ১৯৯১ সালের ১৮ জানুয়ারি, একটি চিঠিতে দেবেশদা আমাকে লিখেছিলেন–

‘প্রীতিভাজনেষু

সুধাংশুবাবু। আমার বইগুলো নিয়ে একটু বিভ্রাট বেধেছে না কি? আফসার দায়িত্ব নিয়েছিলেন– আমার যে-বইগুলো পুনর্মুদ্রণ হচ্ছে সেগুলোর সব প্রুফ উনি দেখে দেবেন। কিন্তু কার্যত তা হছে না। আফসার প্রুফ পাচ্ছেন না। প্রুফ একজন না দেখলে ভুলের সম্ভাবনা বেশি থাকে। প্রথম সংস্করণের বইগুলো আমার নিজের চোখে ভালভাবে দেখা। সুতরাং আফসার দেখে দিলেই চলবে।…’

এই সময়েই ‘প্রতিক্ষণ’ থেকে দেবেশদার সম্পাদনায় ‘জীবনানন্দ সমগ্র’ প্রকাশিত হচ্ছে। ‘জীবনানন্দ সমগ্র’র প্রথম খণ্ডটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৭ জানুয়ারি ১৯৮৫ আর দ্বাদশ খণ্ডটি প্রকাশিত হয় ১৩ বছর পরে– ১৯৯৮ সালের বইমেলার সময়। পরে একটি সংযোজন খণ্ডও প্রকাশিত হয়েছিল। দেবেশদার জীবনানন্দ সম্পাদনা-কাজে প্রধান সহায় ছিলেন আফসারদা। আমি যতদূর জানি, এই বিরাট কাজে আফসারদার ওপর দায়িত্ব ছিল জীবনানন্দের পাণ্ডুলিপি দেখে ন্যাশনাল লাইব্রেরি থেকে তা কপি করে আনা। ‘দ্বাদশ ও শেষ খণ্ড’-এ দেবেশদা আফসারদার কাছে ঋণ স্বীকারও করেছেন।

দে’জ থেকে প্রকাশিত আফসারদার বইয়ের তালিকা দেখতে গিয়ে চোখে পড়ল সেই ১৯৮৯ সাল থেকে প্রতি বছর তাঁর একটা করে, কোনও-কোনও বছর একাধিক বই আমি প্রকাশ করে গেছি। তবে ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত ‘বিবির মিথ্যা তালাক ও তালাকের বিবি এবং হলুদ পাখির কিস্‌সা’ থেকে তাঁর লেখা একটা অন্য মাত্রায় যেতে শুরু করে। তাঁর লেখা এই কিস্‌সা প্রকাশের সঙ্গে-সঙ্গেই পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এরপর তাঁর লেখা আরও পাঁচটি ‘কিস্‌সা’ দে’জ থেকে প্রকাশিত হয়েছে– ‘কালো বোরখার বিবি ও কুসুমের গন্ধ এবং চল্লিশজন লোক’, ‘মেটিয়াবুরুজে কিস্‌সা’, ‘এক আশ্চর্য বশীকরণ কিস্‌সা’, ‘হিরে ও ভিখারিনী সুন্দরী রমণী কিস্‌সা’ এবং ‘ঘোড়সওয়ার কিস্‌সা’। এগুলোর মধ্যে ‘মেটিয়াবুরুজে কিস্‌সা’ খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল।

বাংলা উপন্যাসে দেবেশদার ‘বৃত্তান্ত’র মতোই আমার মনে হয় আফসারদার ‘কিস্‌সা’ একটি অভিনব সংযোজন। আরবিতে ‘কিস্বহ’ মানে গল্প-কাহিনি। উর্দু উচ্চারণে সেটি হয়েছে ‘কিস্‌সা’। বাংলা প্রয়োগে সেটাই দাঁড়িয়েছে ‘কেচ্ছা’য়। আফসারদা মূল অর্থেই শব্দটা প্রয়োগ করেছিলেন। তাঁর এই ধরনের লেখাগুলির নাম বেশ বড়। আমি তাঁকে একবার সেকথা বলায়, তিনি বলেছিলেন, এই নামকরণ খুব ইচ্ছাকৃতভাবে তিনি করেননি। বরং স্বাভাবিকভাবেই বইগুলোর এমন নাম তাঁর মাথায় এসেছিল। লেখাগুলোতে একধরনের লোককাহিনির ধরন থাকায় তা বেশ মানিয়েও গেছে।

‘কোরক’ পত্রিকায় ‘কিস্‌সা: অন্তরালের কথা’ প্রবন্ধে আফসারদা লিখেছিলেন–

‘…উপন্যাস সাধারণত আধুনিক শিল্প– এখানে রচনাকারের নিজস্বতার দিকটিই প্রধান। কিস্‌সা প্রচলনের ভিতর আমি মুসলিম-বিশ্বের এক অন্বয় খুঁজেছি, যেখানে সমাজ-রাষ্ট্র নিরপেক্ষভাবে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা অভিন্ন– কোনো দেশে এই কিস্‌সা সীমায়িত রাখিনি, এই আন্তর্জাতিক বোধটা একভাবে এসেছে, এসেছে মুসলমান সমাজের অখণ্ড সত্তা সন্ধানের প্রেক্ষিতও। একটা শব্দ একজন লেখককে অনেক কিছু দেয়। কিস্‌সা শব্দটি আমার লেখার মাত্রাটিই বদলে দিয়েছে। চরিত্রভাবনা, গল্পগঠন, কল্পনা সেই সূত্র ধরেই যেন আমার কাছে এসেছে। যেন প্রবহমান জীবনধারার আদি-অন্তকে মিশিয়ে নেওয়ার জন্য আমার এই ‘কিস্‌সা’ শব্দ ব্যবহারের অমোঘতা আমার কাছে অনিবার্য হয়ে পড়েছিল।

আর আমি তো মুসলমান সমাজ নিয়ে লিখি, সমাজ-শরীর থেকেই তাই এই শব্দকে আমি চয়ন করেছি। কিস্‌সা শব্দের পুনরুদ্ধারও দরকার ছিল, কেননা শব্দটা নিন্দার্থক হয়ে উঠেছিল। আমার গল্পের ভরকেন্দ্রে যে গাম্ভীর্য, সমাজ-মানবিকতার প্রশ্ন ছুঁয়ে যায়, সেখান কিস্সা শব্দের পুনরুজ্জীবন ঘটে, সম্ভ্রম শব্দ হিসেবে মান্যতা পায়।

নিশ্চয়ই কিস্‌সা সিরিজের আমার লেখাগুলিতে আখ্যানের নতুন ধরন আমি খোঁজার চেষ্টা করেছি। আর এসেছে মুসলমান সমাজজীবন, যেখানে ধর্মীয়-পরিচয়ও বাদ দেওয়া হয়নি। হয়তো মেয়েদের অসহায়তার দিকগুলি বেশি এসেছে। কেউ কেউ বলেন, আমি এখানে ঘোরতর নারীবাদী। ধর্ম সমাজ তো পুরুষতান্ত্রিক, সেখানে অর্ধেক আকাশের কথা যদি বা বেশি করেই এল। তারাও তো আমার জননী-জায়া-কন্যা।…’

২০১৬-য় আফসারদার ছ’-টি ‘কিস্‌সা’ নিয়ে আমি দু-খণ্ডে তাঁর ‘কিস্‌সা সমগ্র’ প্রকাশ করেছি। এই সমগ্রের প্রথম খণ্ডের জন্য দেবেশদা একটি ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন। ‘পুনরুদ্ধার : শব্দের, অর্থের, কাহিনীর’ শিরোনামে সেই লেখায় দেবেশদা দেখিয়েছিলেন, কীভাবে বাংলা সৃজনশীল সাহিত্যের বড় অংশটা বর্ণ-হিন্দুর কলমে কার্যত হিন্দু সমাজেরই গল্প। মুসলমান সমাজ ও জনজীবনের কথা সেখানে প্রায় অনুপস্থিত। অথচ বাংলা ভাষা হিন্দু-মুসলমানের মাতৃভাষা। বাংলার সংস্কৃতিও দুই সম্প্রদায়ের মেলবন্ধনে তৈরি। বাংলা ভাষায় এমন অসংখ্য শব্দ আছে, যা মুসলমান মানুষ ব্যবহার করেন, কিন্তু বাংলার বেশিরভাগ অভিধানে তা খুঁজে পাওয়া যায় না। সাধারণ মানুষেরও তা অজানা। অথচ দুই প্রতিবেশী বহুদিন ধরে পাশাপাশি বাস করছি। দেবেশদা দেখিয়েছেন, এই পটভূমিতে আফসারদা কতটা জরুরি একজন লেখক। তিনি সত্যিই এক ধরনের পুনরুদ্ধার ঘটিয়েছেন।

‘কিস্‌সা সমগ্র’র পরিচিতিতে দেবেশদার ভূমিকা থেকে একটা অংশ উদ্ধৃত করে লেখা হয়েছিল–
‘এই কিস্‌সায় যৌনতাই কাহিনির প্রধান অবলম্বন। মুসলমান মেয়েদের সামাজিক-পারিবারিক অবরুদ্ধতা তাদের কতটাই অজানা ও অচেনা রেখে দেয়, এমনকী তাদের স্বামীদের কাছেও, আর বোরখার অবরুদ্ধতা কেমন খুলে দেয় যৌনতার রহস্যময় দরজা, সেই গল্প আফসার লিখেছেন, কোনো আড় না রেখে, অবাস্তব-অসম্ভব সব পরিস্থিতি তৈরি করে তুলে অথচ সেই সব পরিস্থিতিকে সম্ভাব্যতার সীমার মধ্যে রাখার এই কিস্‌সার অজস্র ঘটনার নাটকীয় তীব্রতা কখনো শিথিল হয় না। বাংলা সাহিত্যে নারীর যৌনতার এমন কাহিনি কখনো লেখা হয়নি। সে-কাহিনি একই সঙ্গে পুরুষতান্ত্রিকতার বেওকুফিও। একটিও তাত্ত্বিক বা ঐতিহাসিক শব্দ খরচ না করে, কোনো পরিস্থিতি বিশ্লেষণ না করে, সব পরিস্থিতিকে অনিবার্য করে তুলে, আপাত অবাস্তব সব ঘটনাকে বাস্তব বাধ্যতার আওতায় এনে আফসার আমেদ সাহসী ও সদর্থ অট্টহাসিতে একেবারে খোলাখুলি স্পষ্টতায় দেখিয়ে দেন– নারী-লোভী পুরুষতন্ত্র কামান্ধতায় নারীকে একচেটিয়া দখলে রাখতে মেয়েদের ওপর শাস্ত্রীয় ও সামাজিক ঘেরে চাপায় একের পর এক, এক ঘের ঘিরে আর এক ঘের, আর-এক ঘের, আবার, একই সঙ্গে বহু নারীর সঙ্গ তার নিজের পক্ষে অনিবার্য করে তোলে। তার ফলে শেষ পর্যন্ত নারীত্বের এক অভ্যন্তরীণ বিস্ফোরণ ঘটে।’

২০০৩ সালে আফসারদার দু’টি ছোট উপন্যাস আমি একত্রে প্রকাশ করেছিলাম– ‘ধানজ্যোৎস্না ও ব্যথা খুঁজে আনা’। প্রথম লেখাটি নিয়ে বরেণ্য চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেন তাঁর শেষ সিনেমাটি বানিয়েছিলেন– ‘আমার ভুবন’।

‘ধানজ্যোৎস্না’র পরিচিতিতে লেখা হয়েছিল– “গ্রাম-গ্রামান্তরে ছড়িয়ে থাকা আমাদের ভারতীয় মুসলমান সমাজের ভিতরে-ভিতরে পরিবর্তন ঘটে যাচ্ছে। উপসাগরীয় অঞ্চলে নতুন-নতুন কাজের সুবাদে ভারতীয় মুসলমানরা সেখানে যাচ্ছেন ও সেই উপার্জিত বিদেশি অর্থ আমাদের গ্রামে-গ্রামে এসে পৌঁছে যাচ্ছে। অন্যদিকে আমাদের মুসলমান সমাজ শরিয়তের ও সমাজের নানা সংস্কারে বাঁধা পড়ে আছে। সেই বন্ধন সবচেয়ে কঠিন হয়ে বাজে মুসলমান সমাজের মেয়েদের জীবনে। বিবাহবিচ্ছিন্না সেই মেয়েরা এক সংসার থেকে আর-এক সংসারে যান স্মৃতি আর নতুন সম্পর্ক নির্মাণের দ্বন্দ্বে ও প্রতিশ্রুতিতে। গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে আফসার আমেদ বাংলা উপন্যাসে মুসলমান সমাজের অস্তিত্বকেই তাঁর বিষয় করে তুলেছেন। ‘ঘরগেরস্তি’ দিয়ে তাঁর সেই অন্বেষণ শুরু, ‘সানু আলির নিজের জমি’, ‘আত্মপরিচয়’, ‘বসবাস’, ‘স্বপ্নসম্ভাষ’, ‘অন্তঃপুর’-এর মধ্য দিয়ে সেই অন্বেষণেই এসে ‘ধানজ্যোৎস্না’য় নতুন মাত্রা খুঁজে পেল।” বইটির মলাট করেছিলেন প্রবীরকুমার সামন্ত, আর ভেতরের অলংকরণগুলি যুধাজিৎ সেনগুপ্তের আঁকা।

বিশ্ব রায়ের সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘মৃণাল সেনের ছবি : ছবি ঘিরে নানা কথা/ আমার ভুবন’

আফসারদার উপন্যাস অবলম্বনে মৃণাল সেনের ‘আমার ভুবন’ সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার পর দে’জ পাবলিশিং থেকে ২০০৪-এর জানুয়ারিতে বিশ্ব রায়ের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়– ‘মৃণাল সেনের ছবি: ছবি ঘিরে নানা কথা/ আমার ভুবন’। বইটি করার সময় অপু প্রকাশকের তরফে যাবতীয় দায়িত্ব সামলেছিল। মৃণালদার সঙ্গে আমার অবশ্য আগে থেকেই পরিচয় ছিল। তিনি আমাকে এবং পরে অপুকেও বিশেষ স্নেহ করতেন। এই বইটিতে ‘আমার ভুবন’-এর চিত্রনাটকের সঙ্গে অনেকগুলি প্রাসঙ্গিক আলোচনাও ছিল। ছিল মৃণালদা এবং আফসারদার লেখাও।

ছবিটি যাঁরা দেখেছেন তাঁরা জানেন শুরুতে যুদ্ধের গোলাগুলির আওয়াজের মধ্যে পর্দায় ভেসে ওঠে কয়েকটি কথা– ‘পৃথিবী ভাঙছে/ পুড়ছে/ ছিন্নভিন্ন হচ্ছে/ তবুও মানুষ/ বেঁচেবর্তে থাকে/ মমত্বে/ ভালবাসায়/ সহমর্মিতায়’– এই কথাগুলোই ‘আমার ভুবন’ নিয়ে বইয়ের মলাটে ছাপা হয়েছিল। মৃণালদা ‘এতকাল পরে এ-ছবি কেন, কীসের ভাবনায়’ শিরোনামে লিখেছিলেন–

“আমি একটু ফেলে আসা সময়টায় ফিরে যাচ্ছি। দু’মাসের লম্বা একটা ছোটোখাটো যুদ্ধ হয়েছিল, কার্গিল যুদ্ধ, কাশ্মীর সীমান্তে। বলাবাহুল্য, যুদ্ধটা সেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে, যারা উভয়ই পারমাণবিক অস্ত্রে শক্তিমান, ভারত আর পাকিস্তান।

তখন খুব অল্প সময়ের জন্যে দিল্লিতে ছিলাম। এক সন্ধ্যায় হোটেলের একটা ঘরে একা একা বসে টিভি দেখছিলাম। এন ডি টিভি-র পক্ষ থেকে রাজদীপ সারদেশাই রাস্তায় নেমে মানুষজনের সমীক্ষা চালাচ্ছিলেন। যুদ্ধ সম্পর্কে কার কী মতামত। ইসলামাবাদের রাস্তায়, ফুটপাথের ভিড়ে এক সবজিওয়ালা, হয়তো নিরক্ষর, ঘাড় ঘুরিয়ে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে উত্তর করেছিল ‘নুকসান’। সোজাসুজি বাংলায় কথাটা দাঁড়ায়: ‘লোকসান’।

‘আমার ভুবন’ ছবির দৃশ্যে দুই কলাকুশলী কৌশিক সেন ও নন্দিতা দাশ

…আমার কাছে তার যে অনেক মানে। জীবনহানি, অর্থনাশ, মূল্যবোধের ক্ষয়, মানুষের মর্যাদার বিলুপ্তি, বা এরকম আরও অনেক কিছু। সেই সব্জিওয়ালা আমার কাছে রীতিমতো সমাজবীক্ষক হয়ে উঠল। সে যে পৃথিবীর প্রসঙ্গ তুলল তা ধ্বংসের। অবিরত তা ভাঙছে, পুড়ছে, ছিন্নভিন্ন হচ্ছে। আবার ওই দৈনন্দিন মারণযজ্ঞ থেকেই ফিরে আসি চিরকালীন এক মানবভুবনে। যেখানে জীবনযাপনের মধ্যেই রয়েছে এক আশ্চর্য জাদুর মন্ত্র। যেখানে মানুষ বেঁচেবর্তে থাকে মমত্বে, ভালবাসায়, সহমর্মিতায়। এই মানবমন্ত্র উচ্চারণের সময় মনে পড়ে যায় দস্তয়েভস্কি-র কথা। সাইবেরিয়ায় হাড়ভাঙা খাটুনির সময় তিনি লিখেছিলেন তাঁর ভাইকে ‘human beings remain human everywhere.”

পরিচালক মৃণাল সেন

২০১১-য় দে’জ থেকে প্রকাশিত হয় আফসারদার একেবারে অন্য ধরনের উপন্যাস ‘সেই নিখোঁজ মানুষটা’। আমার নিজের খুবই পছন্দের এই উপন্যাসটির ভাষা এবং বিষয়বস্তু প্রায় কবিতার মতো। রূপনারায়ণ নদে শহরের মানুষেরা এসেছিল পিকনিক করতে। আবিদ ছিল নৌকার মাঝির শাগরেদ। ঘটনাচক্রে একটা পাঁচ বছরের ছেলে নৌকা থেকে জলে পড়ে গিয়ে জোয়ারে ভেসে যায়। আবিদ তাকে উদ্ধার করে। শৈশবে মা-বাবাকে হারানো আবিদ আলি অল্পবয়সেই সাহসিকতার জন্য সরকারি পুরস্কার পায়। তারপর সে বড় হতে থাকে। যৌবনে পৌঁছে প্রেমে পড়ে জুলেখার। কিন্তু বিয়ের দু’-দিন আগে আবিদ নিখোঁজ হয়। বিলাসপুরে সংসার পাতার পর কয়েক বছর পরে আবার সেই নিখোঁজ মানুষটি ফিরে আসে তার গ্রামে। আশপাশের আট-দশটা গ্রামের চেনা মানুষদের সঙ্গে তার দেখা হয়। জুলেখা ততদিনে অন্য একজনকে বিয়ে করেছে, তার ছেলেও হয়েছে। সে চেয়েছে তার সঙ্গেও দেখা করে যাক আবিদ। কিন্তু এই নিখোঁজ মানুষটা ভারি আশ্চর্য। আবিদ এই এলাকায় এসেছে যেন রূপকথার কোনও মানুষের মতো। অনেকের সঙ্গেই তার দেখা হয়, মনে পড়ে জুলেখাকেও। উপন্যাসের শেষ কয়েক পাতায় পৌঁছে পাঠক যখন ভাবতে শুরু করেন এবার দেখা হবে জুলেখার সঙ্গে– তারপরই দেখা যায় একরাতে আবিদ ফের নিখোঁজ হয়ে গেছে। আবার অনন্ত অপেক্ষার সামনে একা দাঁড়িয়ে থাকে জুলেখা। তবে ছোট বাচ্চাটার কান্নায় সে ফের আবিদকে ভুলে বাস্তব জীবনের দিকে ফেরে।

আফসারদা এই উপন্যাসের জন্য দ্বিতীয়বার সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পান। প্রথমবার কলিম হাজিকের সঙ্গে যৌথভাবে পেয়েছিলেন আবদুস সামাদের উর্দু উপন্যাস ‘দো গজ জমিন’-এর বাংলা অনুবাদ ‘সাড়ে তিন হাত ভূমি’-র জন্য।

আফসারদার বইপত্রের কথা বলতে গিয়ে হঠাৎ মনে পড়ে গেল তাঁর বিয়ের দিনের কথা। সেটা নয়ের দশকের শুরুর দিকেই হবে। কলকাতা থেকে আমরা অনেকে সেদিন গিয়েছিলাম আফসারদার গ্রামের বাড়ি হাওড়ার বাগনান এলাকায় কড়িয়া গ্রামে। আফসারদাকে কলকাতার লেখক-সম্পাদকদের মধ্যে অনেকেই খুব ভালোবাসতেন। তাঁর বিয়েতে প্রায় চাঁদের হাট বসে গিয়েছিল। বেশ কয়েকদিন ধরে আমাদের পরিকল্পনা চলেছিল কীভাবে যাওয়া হবে তাঁর বিয়েতে। দেবেশদা আফসারদা-নাসিমা বউদির বিয়েতে যাওয়ার ব্যাপারে খুবই উৎসাহী ছিলেন। আমি আর টুকু সেদিন গিয়েছিলাম বাগনানে। কলকাতা থেকে গাড়ি করে আমরা দেবেশদা-কাকলি বউদি, সস্ত্রীক অমিতদার (কবি অমিতাভ দাশগুপ্ত) সঙ্গে সেদিন গিয়েছিলাম। রাস্তায় হাসি-মজায় দিব্যি সময় কেটে গিয়েছিল। সেদিন ‘বারোমাস’ পত্রিকার সম্পাদক অশোক সেন, বিশিষ্ট লেখক অমর মিত্র ও ত্রিদিব সেনগুপ্তও সপরিবারে গিয়েছিলেন। আমি গ্রামের ছেলে, কাজের বাইরে একবেলার জন্য হলেও কড়িয়া গ্রামে গিয়ে খুব আনন্দ পেয়েছিলাম। হাওড়া জেলার ওই দিকটায় তার আগে আমার যাওয়াও হয়নি কখনও।

আফসারদা যখন লেখক হিসেবে বেশ প্রতিষ্ঠিত তখনই নানারকম অসুস্থতায় আক্রান্ত হতে থাকেন। গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তিও হতে হয়। ২০১৮-র ৪ অগাস্ট তিনি না ফেরার দেশে চলে গেলেন। বাংলা সাহিত্য তার শক্তিমান এক লেখককে হারাল, আমি হারালাম আমার এক নিকট বন্ধুকে। অসংখ্য গল্প আর উপন্যাস-কিস্‌সায় তিনি আমাদের সামনে প্রায় অজানা এক জগতের কথা তুলে ধরেছিলেন। তাঁর কাছে আমাদের ঋণ অপরিশোধ্য।

 

আফসারদার কথা বলতে-বলতে আরেকজন অকাল প্রয়াত লেখকের কথা মনে পড়ে গেল– অনিল ঘড়াই।

অনিলদা আবার আমার জেলার মানুষ। তাঁর বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা থানার রুক্মিণীপুর গ্রামে। তবে আমার সঙ্গে যখন থেকে আলাপ ততদিনে তিনি সাউথ-ইস্টার্ন রেলের বড় আধিকারিক, থাকেন বিহারের চক্রধরপুরে। পরে অবশ্য খড়গপুরে সাউথ ইস্টার্ন রেল হাসপাতালের কাছে অফিসার্স বাংলোয় চলে আসেন। খড়গপুরে তাঁর বাড়িতে আমি একাধিকবার গিয়েছি।

অনিল ঘড়াই

আমাকে অনিল ঘড়াইয়ের কথা প্রথম বলেছিলেন কিন্নরদা– কিন্নর রায়। কিন্নরদা সেসময় অনিল ঘড়াইয়ের লেখা পড়ে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। অনিলদার ‘পরীযান’ বইটি ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্নরদা সেই বই পড়ে পূর্ণেন্দু পত্রীকে পড়ান। পূর্ণেন্দুদারও ‘পরীযান’-এর গল্পগুলি খুব পছন্দ হয়। সেসময় বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিনে অনিল ঘড়াইয়ের নাম দেখা যেত। ধীরে-ধীরে বাংলা ভাষার সব ধরনের পত্রিকার লেখক তালিকায় তাঁর নাম দেখা যায়। গ্রামবাংলা বা শহরতলির সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ, যাদের আমরা সবসময় ততটা খেয়ালও করি না– সেই নিম্নবিত্ত, কখনও অন্ত্যজ মানুষের জীবন– যা আমরা অনেক সময় দেখেও না-দেখার ভান করি, সেইরকম সব চরিত্রের সঙ্গেই পরিচয় ঘটিয়েছেন অনিল ঘড়াই।

আমি অনেক পরে, ২০০৩ সালে ‘পরীযান’-এর একটি নতুন সংস্করণ প্রকাশ করেছিলাম– ‘পরীযান ও অন্যান্য গল্প’ নামে। নতুন সংস্করণের বইটিতে মোট ২৯টি গল্প ছাপা হয়। বইটির ভূমিকা পড়তে গিয়ে মনে পড়ল ১৯৮৫-র বইটির পরে ২০০০ সালে ‘পরীযান’-এর নতুন একটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল সিংভূম সাহিত্য পত্রিকার নামে। আমাদের সংস্করণের ‘লেখকের কথা’য় অনিলদা লিখেছেন–

“১৯৮৫ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আর্থিক অনুদানে আমার ‘পরীযান’ গল্পগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। বইটি অল্প সংখ্যক ছাপা হয়েছিল, এখন তার কোন কপি নেই। ‘পরীযান’-এ মোট গল্পের সংখ্যা ছিল আটটি। গল্পগুলি অনেকের ভাল লাগে। স্বনামধন্য কথাসাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ ব্যক্তিগতভাবে সেই সময় দীর্ঘ চিঠি লিখে আমাকে উৎসাহিত করেন। বলতে দ্বিধা নেই তাঁর সেই চিঠি আমাকে অনেক বেশি দায়িত্ব সচেতন করে তোলে। আমি মূলতঃ লিটল ম্যাগাজিনের লেখক, এখনও লিটল ম্যাগাজিনই আমার প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম। ছোট পত্রিকার সাহসী সম্পাদক বন্ধুরা আমাকে নানাভাবে সাহায্য করেছেন। সমীরণ মজুমদার, উৎপল ভট্টাচার্য, দেবাশিস প্রধান, গৌতম রায়, সূর্য নন্দী, লক্ষণ কর্মকার এবং এরকম আরো অনেকের প্রশ্রয় এবং উৎসাহ না পেলে আমার লেখালেখির হয়তো ইতি হয়ে যেত। প্রসঙ্গত জানাই ‘পরীযান’ গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয় ধূর্জটি চন্দ সম্পাদিত ত্রৈমাসিক ‘এবং’ পত্রিকায় আজ থেকে কুড়ি বছর আগে। যখন অনেকেই আমার গল্প ছাপাতে অনীহা প্রকাশ করতেন তখন ধূর্জটি চন্দ তাঁর দরাজ বুকে আমাকে স্থান দিয়েছেন, একের পর এক গল্প ছেপেছেন এবং আমাকে ঋণী করেছেন।”

অনিলদার সঙ্গে কিন্নরদার মাধ্যমে আমার আলাপ-পরিচয় নয়ের দশকের গোড়ায়। আমি প্রথম তাঁর যে বইটা করেছিলাম সেটি হল ‘মুকুলের গন্ধ’। সুধীর মৈত্রর মলাটে এই উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৯৩-এর বইমেলার সময়। বইটির চতুর্থ প্রচ্ছদে সুবোধ দাশগুপ্তর আঁকা লেখকের একটি স্কেচের সঙ্গে লেখা হয়– “তরুণ শক্তিশালী কথা-সাহিত্যিক অনিল ঘড়াই এর সাম্প্রতিক-তম উপন্যাস। এই ‘মুকুলের গন্ধ’ উপন্যাস বাস্তবের প্রতিসরণ ভেদ করে ছুঁতে চেয়েছে নির্মল স্বপ্নিল একটি সমাজব্যবস্থাকে। লেখক এখানে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘আকাশের যে ধর্ম, নারীর ধর্মও কি তাই ?’ বলাবাহুল্য কোন একটি একক পরিবারকে কেন্দ্র করে এই উপন্যাসের পটভূমি বিবৃত হয়নি, বরং সমাজের অন্ত্যজ একটি গোটা শ্রেণী কীভাবে পঙ্গুত্বকে অতিক্রম করে শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়াতে চাইছে তারই সফল উপাখ্যান। এই উপন্যাস যে সমাজের প্রতিনিধিত্ব করছে, আর যে সামাজিক অবস্থা এই উপন্যাসের কুশীলবদের স্বপ্ন সেই টানাপোড়েন বাংলার ভৌগোলিক সীমা অতিক্রম করে যায় ছড়িয়ে সারা ভারতবর্ষের গাঁয়ে-গঞ্জে, তথা বিশ্বের মাটি জল, মানুষে আকাশে– আর, অবশ্যই ভবিষ্যতের স্বপ্নের পৃথিবীতে।”

তার পরের বছরই ছাপা হল ‘বক্ররেখা’। পাক্ষিক ‘বসুমতী’ পত্রিকায় ‘বক্ররেখা’ ধারাবাহিকভাবে ছাপা হয়েছিল। বিহারের পটভূমিতে নিম্নবিত্ত, ছিন্নমূল মানুষের জমিতে শিকড় গেড়ে থিতু হওয়ার সংগ্রাম যেমন এই উপন্যাসে আছে, তেমনই আছে এক অন্ধকার জগতও। বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম চাওয়াগুলোর অতিরিক্ত কিছুও মানুষ চায়। সেই চাওয়া আর না-পাওয়ার দ্বন্দ্ব চমৎকার ফুটিয়ে তুলেছিলেন অনিলদা।

‘বক্ররেখা’ ছাপার সময় থেকেই দেখছি অনিলদার সঙ্গে আমার চিঠিপত্র আদানপ্রদান শুরু হয়েছে। অনিলদার লেখা সবচেয়ে পুরোনো যে চিঠিটা পেলাম সেটা ১৯৯৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর লেখা। বিহারের চক্রধরপুর থেকে তিনি লিখছেন–

‘শ্রদ্ধেয়

সুধাংশুদা, পত্রে আমার নমস্কার নেবেন। আশাকরি ভাল আছেন।
সমীরণদার হাতে “বক্ররেখা” উপন্যাসটির টাইটেল পেজ, ভূমিকা পাঠালাম।
বইমেলায় কলকাতায় যাব। তখন দেখা করব।
ভাল আছি, ভাল থাকুন।…’

চিঠির সমীরণদা নিশ্চয় ‘অমৃতলোক’ পত্রিকার সম্পাদক সমীরণ মজুমদার। এই চিঠিটার নিচের দিকে দেখছি কিন্নরদা লিখেছেন– ‘পারুলকে টাইটেল ও প্রাককথন পাঠান হল’। আসলে সেসময় আমি কিন্নরদাকে অনুরোধ করেছিলাম যাতে অনিলদার বইগুলো ছাপার সময় একটু দেখে দেন। একদিকে তাঁর প্রিয় অনুজ লেখকের বই অন্যদিকে বন্ধু প্রকাশকের অনুরোধ– কিন্নরদা সানন্দে সে-দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এখানে ‘পারুল’ হল গোয়াবাগানে অজিতদার (সম্ভবত অজিত মান্না) প্রেস। সেখানেই ‘বক্ররেখা’র কাজ হয়েছিল। এর পরের বছর অনিলদার কোনও বই দে’জ থেকে প্রকাশিত হয়নি। তার কারণটা বুঝতে পারলাম ২৭ জুলাই ১৯৯৫ সালের একটি চিঠিতে। সেই চিঠিতে তিনি লিখছেন–

‘…গত বছর শারীরিক কারণে উপন্যাস দিতে পারেনি [পারিনি], এর জন্য আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমি ব্লাড সুগারের পেসেন্ট [য.]। প্রায় ভুগি কিন্নরদা সব জানেন।
এই লজ্জায় আপনার সঙ্গে দেখা করিনি। কোন মুখ নিয়ে দেখা করব? আমার মত নতুন লেখককে আপনি যে সুযোগ দিয়েছেন– তা স্বপ্নাতীত।
এবার উপন্যাস রেডি করে অক্টোবরের মধ্যে দেখা করব। এখন পুজোর লেখা নিয়ে ব্যস্ত আছি।…’

চিঠির ভাষার মতোই বিনয়ী ছিলেন অনিলদা। প্রখর বাস্তববাদী এই লেখক মাটির কাছাকাছি থাকা মানুষের কথাও বলতেন নিবিড় মমতায়। এই চিঠির পরে তিনি আমাকে ‘কলের পুতুল’ উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি দিলে সেটি ১৯৯৬-এর বইমেলায় প্রকাশিত হয়। আর তার পরের বছর প্রকাশিত হয়– ‘দৌড়বোগাড়ার উপাখ্যান’। আমার মতে, অনিলদার এই উপন্যাসটা বেশ অভিনব। বইটির চতুর্থ প্রচ্ছদে লেখা হয়েছিল–

‘ “দৌড়বোগাড়ার উপাখ্যান” পশ্চিম সিংভূমের আদিবাসী জনজীবনের কৃষ্টি সংস্কৃতির অন্তরঙ্গ দলিল। অরণ্য-পাহাড়, স্বর্ণগর্ভা নদী-নালা, বুভুক্ষু মানুষ আর বুনো হাতির ত্রাস এই উপন্যাসের প্রধান প্রতিপাদ্য। প্রকৃতি নির্ভর কৃষিব্যবস্থায় ধরিত্রী ঋতুবতী হলেও ভূমিপুত্রদের আর্থ-সামাজিক অবস্থান একই বিন্দুতে সীমাবদ্ধ থাকে। দারু-হাড়িয়া আর শাল-গামার শিশমের দেশে অভাব সর্বত্রগামী। হীরালালবুড়া, রাউতু তমসয় আর সাধো বারলারা জীবন ধারণের বিকল্প পথ খুঁজে নিত্যদিন ছুটে আসে দৌড়বোগাড়ার ধারে। বর্ষায় পাহাড় চুয়ান জলে মিশে থাকে স্বর্ণরেণু, লৌহ-আকরিক তাকে বুকে করে বয়ে এনে সঁপে দেয় সিংভূমের নদী-নালায়। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অঙ্কুশ আর কাঠের পাটাতনে মানুষ খুঁজতে থাকে সোনার কুচি, স্বর্ণরেণু কিংবা জীবনের আদি মাধুর্য। তবু সোনার মায়াবী হরিণ ধরা দিয়েও যেন ধরা দিতে চায় না। স্বর্ণতৃষ্ণা প্রেমতৃষ্ণার মতোই চিরকালীন হয়ে ওঠে মানুষের নিগুঢ় অন্বেষণে। দৌড়বোনালায় কিংবা রংকুট পাথর চাট্টানে সোনা খোঁজার আজন্ম তৃষ্ণা নিয়ে’ অনিলদার ব্যতিক্রী উপন্যাস ‘দৌড়বোগাড়ার উপাখ্যান’।’

এরপর ধীরে-ধীরে প্রকাশিত হয়– ‘বিপরীত যুদ্ধের মহড়া’, ‘নীল দুঃখের ছবি’, ‘পাতা ওড়ার দিন’, ‘সামনে সাগর’ ইত্যাদি বই। ২০০৪ সালে বইমেলার সময় দে’জ পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত হল অনিল ঘড়াইয়ের ‘শ্রেষ্ঠ গল্প’। একটি চিঠিতে দেখছি অনিলদা লিখেছেন– ‘আমার শ্রেষ্ঠ গল্পের পাণ্ডুলিপি দেওয়া আছে আপনার দপ্তরে।… এযাবৎ আমার প্রায় 15টি ছোটগল্পের বই থেকে গল্পগুলি নির্বাচন করে। আপনাকে দিয়ে এসেছি…।’

তিনি নিজের ‘শ্রেষ্ঠ গল্পটি’ ‘শিল্পী সুব্রত চৌধুরী’কে উৎসর্গ করেছিলেন।

দে’জ থেকে ২০০৯ সালে পয়লা বৈশাখের সময় ছাপা হয় অনিলদার বড় উপন্যাস ‘অনন্ত দ্রাঘিমা’। উপন্যাসটির চতুর্থ প্রচ্ছদে লেখা হয়েছিল– ‘বহুমুখী আন্দোলনের দমকা বাতাস প্রভাবিত করছে গ্রাম-গঞ্জের পরিমণ্ডল। মাথা তুলে দাঁড়াতে চাইছে অন্ত্যজ শ্রমজীবী মেহনতী মানুষ যাদের অধিকাংশই খেতমজুর আর দীন দরিদ্র। হলদিপোঁতা ধাওড়ার রাজোয়ার গোষ্ঠীও তার ব্যতিক্রম নয়। দ্রাঘিমারেখার মতো জগৎখালি বাঁধ দ্বিখণ্ডিত করেছে জেলার ভূগোল। বাঁধের দু’ধারে অনেক কিছুই ভিন্ন, শুধু হাহাকার আর ক্ষুধার ভাষা এক। পালা বদলের দিনে চলমান ছায়াছবির মতো দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের এক ফোঁটা চোখের জলের মূল্যকেও গুরুত্ব সহকারে বুঝে নিতে চেয়েছেন কথাসাহিত্যিক অনিল ঘড়াই তাঁর এই সুবৃহৎ ধ্রুপদী উপন্যাসে।’

আমার ধারণা অনিলদার ‘দৌড়বোগাড়ার উপাখ্যান’-এর মতোই ‘অনন্ত দ্রাঘিমা’ অত্যন্ত জরুরি একটি উপন্যাস। পাঠকের কাছে এই উপন্যাস খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। বইটির জন্য লেখক পরের বছর বঙ্কিম পুরস্কারও পেয়েছিলেন। ‘অনন্ত দ্রাঘিমা’ বইটি নিয়ে অনিলদার মতোই আমারও অনেক প্রত্যাশা ছিল। এই বইটির পাণ্ডুলিপি দেওয়ার আগে তিনি ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৮ তারিখে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন–

‘… 28 শে অক্টোবর ২০০৮ (২৮. ১০. ২০০৮) আমি এবছরের উপন্যাস আপনার দপ্তরে জমা দিতে যাব। লেখাটি শেষ হয়েছে, সামান্য Correction পর্ব চলছে। ২০০৩ সালের পর থেকে আমি কোনো উপন্যাস জমা দিতে পারিনি শারীরিক কারণে। এ বছর তাই উপন্যাস জমা দিতে চাই। জানিনা সর্বশক্তিমানের কি ইচ্ছা, তবে আমার চেষ্টার কোনো ত্রুটি থাকবে না।…’

আসলে সেসময় তাঁর শরীরের অবস্থা বেশ খারাপ কলকাতায় নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা করাতে আসতে হত। তার মধ্যেই বিপুল পরিশ্রমে করে উপন্যাসটি লিখেছিলেন। অনিলদা নিজের বইয়ের বিজ্ঞাপন ইত্যাদি খুঁটিনাটি বিষয়েও যে নজর রাখতেন, তার প্রমাণ অনেকগুলো চিঠিতে পাচ্ছি। ‘অনন্ত দ্রাঘিমা’ খুবই ভালোভাবে বিজ্ঞাপিত এবং বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় আলোচিত হয়েছিল। আমার মনের মধ্যে ছিল যদি আমাদের ‘কলেজ স্ট্রীট’ পত্রিকাতেও একটা রিভিউ ছাপা যায় তাহলে মন্দ হত না। তখন ‘কলেজ স্ট্রীট’ পত্রিকা হয়তো শুরুর দিনের মতো বিপুল পাঠকধন্য পত্রিকা নয়, তবু আমাদের নিজেদের কাগজ– ‘কলেজ স্ট্রীট’ পত্রিকার ওপর আমার একটা বাড়তি মায়া আছে। একটি চিঠিতে দেখছি ‘কলেজ স্ট্রীট’-এর জন্য ‘অনন্ত দ্রাঘিমা’ রিভিউ অনিলদাই উদ্যোগ নিয়ে লিখিয়েছেন সুনীল মাজিকে দিয়ে। আমার যতদূর মনে পড়ছে, সেই লেখাটি ‘কলেজ স্ট্রীট’-এ যথাসময়ে প্রকাশিত হয়েছিল।

অনিলদা একটা সময়ের পর বেশ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ‘অনন্ত দ্রাঘিমা’র পর তাই তাঁর একটিই মাত্র নতুন উপন্যাস আমি প্রকাশ করতে পেরেছি– ‘পিয়াসহরণ’। এটিও একটি গবেষণানির্ভর বাস্তবের ওপর দাঁড়িয়ে লেখা এক মানবগোষ্ঠীর দলিল। ‘পিয়াসহরণ’ এমন এক গ্রামের কথা বলে যে যে গ্রামে নদী নেই। এমনিতেই তৃষ্ণার্ত মানুষের মিছিল গ্রাম-শহর সর্বত্র বাড়ছে। মানুষ যেন চাতকের ভূমিকায় দক্ষ হয়ে উঠছে দিনে-দিনে। এই উপন্যাসের বেশিরভাগ পাত্র-পাত্রীর বাস দারিদ্রসীমার নিচে। তাদের কেউ ক্ষুধায় কাতর, কেউ আবার ঘাম-অশ্রুর লড়াইয়ে বিপর্যস্ত। তাদের নিয়েই অনিলদার কলমে তৈরি হয়েছিল এমন চমৎকার উপন্যাস।

২০১৪-র ১২ নভেম্বর অনিলদা যখন চিরতরে বিদায় নিলেন, তখন আমরা তাঁর ‘সেরা পঞ্চাশটি গল্প’ বইটির কাজ করছি। কিন্তু তিনি এই বইটি হাতে নিয়ে দেখে যেতে পারলেন না। এই বইয়ের শেষ গল্পটি ছিল অনিলদার আত্মপ্রকাশের সময় সবচেয়ে জনপ্রিয় গল্প ‘পরীযান’। এই উলটো পথে যাত্রাটা লেখকের নিজেরই ঠিক করা। একজন লেখকের সক্রিয় অংশগ্রহণে তৈরি হতে থাকা একটি বই যখন তাঁর অবর্তমানে প্রকাশিত হয়, তখন প্রকাশক হিসেবে খুবই বেদনাক্লিষ্ট হতে হয়। আর অনিলদা তো আমাদের প্রকাশনায় শুধুমাত্র লেখক ছিলেন না– আমার বন্ধু ছিলেন। আফসারদার মতো তাঁর চলে যাওয়াটাও আমাকে খুবই কষ্ট দিয়েছে।

অনিলদার ‘সেরা পঞ্চাশটি’ বইয়ের পরিচিতিতে লেখা হয়েছিল– ‘অনিল ঘড়াইয়ের গল্প শুধু গল্প নয়, সমাজের চলচ্ছবি। তাঁর গল্পে রয়েছে মাটির গন্ধ, রয়েছে আমাদের চারপাশের দেখা না-দেখা পরিচিত-অপরিচিত নানা চরিত্র। মানুষ প্রকৃতি ও নারী– জীবনের চলমান ছবি গল্পগুলিতে ঘুরে ফিরে এসেছে নানা অভিঘাতে। তাঁর গল্প শ্রমজীবী মানুষের কথা বলে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম যারা শোষণ আর বৈষম্যের বাঘনখে ক্ষতবিক্ষত, বলে তাদের কথা। এমনই পঞ্চাশটি গল্প নিয়ে এই সংকলন। গল্পগুলি নির্বাচন করে দিয়েছিলেন লেখক স্বয়ং। কিন্তু আক্ষেপ একটাই, বই যখন প্রকাশিত হল, তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন অনেক দূরে। চিরশান্তির লোকে।’

লিখন: শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়

…………………… ইতি কলেজ স্ট্রিট-এর অন্যান্য পর্ব …………………

পর্ব ৪৭। বই বাঁধানো সম্পূর্ণ হয়নি, তাই ‘মহাভুল’ শুধরে নিয়েছিলেন দেবেশ রায়

পর্ব ৪৬। গান্ধীনগরে রাত্রির কবিই প্রথম বিদ্রুপাত্মক তেতো হাসি এনেছিলেন বাংলা কবিতায়

পর্ব ৪৫। নাটকের মহলা পছন্দ হলে তবেই তিস্তাপারের বৃত্তান্তর অনুমতি দেবেন, বলেছিলেন দেবেশ রায় 

পর্ব ৪৪। নিজের বইপত্র বিক্রির বিবরণ দেখে হতাশ হয়েছিলেন দেবেশ রায়

পর্ব ৪৩। থ্রিলার, রহস্য-রোমাঞ্চ কিংবা ক্রাইম স্টোরি অনেক দিন ধরেই বইপাড়ায় ‘সুপারহিট’

পর্ব ৪২। অলংকরণ বা প্রচ্ছদশিল্পীদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা নেই, সখেদে চিঠি লিখেছিলেন নারায়ণ সান্যাল

পর্ব ৪১। রাস্কেল, পাষণ্ড পণ্ডিত, প্রবঞ্চক, বিশ্বাসঘাতক– নারায়ণ সান্যালের বইয়ের নাম নিয়ে প্রবল আপত্তি ছিল আমার!

পর্ব ৪০। সিগারেট ঠোঁটে রথীন্দ্রনাথের ছবি প্রচ্ছদে যাওয়া নিয়ে উঠেছিল প্রবল আপত্তি!

পর্ব ৩৯। শান্তিনিকেতন থেকে কলেজ স্ট্রিট, প্রুফ আদান-প্রদানে সহায়ক ছিলেন বই ব্যবসায়ীরাই

পর্ব ৩৮। পাণ্ডুলিপি জমা দিয়ে সোমেনদা বলেছিলেন, রামকিঙ্করকে নিয়ে এ জাতীয় বই আগে লেখা হয়নি

পর্ব ৩৭। ‘কীর্তির্যস্য’র নাম বদলাতে চেয়েছিলেন ভবতোষ দত্ত

পর্ব ৩৬। কবি-দার্শনিকের বাইরে আরেক রবীন্দ্রনাথকে খুঁড়ে বের করেছিলেন অমিতাভ চৌধুরী

পর্ব ৩৫। ‘শাহজাদা দারাশুকো’ আরও বিস্তারিত লেখার ইচ্ছে ছিল শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের

পর্ব ৩৪। একজন লেখক হিসেবে আমি কি তোমার মনোযোগের যোগ্য নই, অভিমান ভরা চিঠি লিখেছিলেন শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়

পর্ব ৩৩। আমাকে ভাবায়, তারাপদ রায়

পর্ব ৩২। নববর্ষের শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ: লেখকদের মন্তব্যের খাতা!

পর্ব ৩১। পরিব্রাজক সন্ন্যাসী তারাপ্রণব ব্রহ্মচারী ভাগ্যিস থিতু হয়েছিলেন সাহিত্যে!

পর্ব ৩০। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কোনও বই আমাকে চাপিয়ে দেননি, লিখেছেন: বিবেচনা করে দেখো

পর্ব ২৯। কবিতাকে শক্তিদা বলতেন ‘জলজ দর্পণ’, তাঁর বেঁচে থাকার অবলম্বন

পর্ব ২৮। পিঁপড়ে কালিতে চুবিয়ে সাদা পাতায় ছাড়া হয়েছে, এমন পাণ্ডুলিপি ছিল বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের!

পর্ব ২৭। নিজস্ব ঈশ্বরভাবনা থাকলেও শঙ্কু মহারাজের লেখার মূল বিষয় ছিল মানুষের আলো-আঁধারি জীবন

পর্ব ২৬। বাংলাদেশে পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও একুশে বইমেলায় কখনও স্টল পাইনি

পর্ব ২৫। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি মুহূর্তের রক্ত-ঘাম-হাসি-কান্নার এক জীবন্ত দলিলচিত্র ছেপেছিলাম

পর্ব ২৪। রাখাল ছেলে যেমন বাঁশি বাজায়, আমিও তেমন নিজের খুশিতে লিখি, বলেছিলেন যাযাবর

পর্ব ২৩। রয়্যালটি-মুক্ত বইয়ের ওপর প্রকাশকদের ঝোঁক চোখে পড়ছে বইমেলাতেও

পর্ব ২২: শেষমেশ রেগে গিয়ে আমাকে চিঠিই লিখে ফেলেছিলেন শঙ্খ ঘোষ!

পর্ব ২১: ৩০০০ কপি বিক্রির মতো জীবিত বা মৃত লেখক আর হয়তো নেই

পর্ব ২০: কম বয়সে আমাদের রোববারের আড্ডা ছিল ২৮ নম্বর প্রতাপাদিত্য রোড, আশুদার বাড়িতে

পর্ব ১৯: ‘লেখা বড় হচ্ছে’ অভিযোগ আসায় খুদে হাতের লেখায় পাণ্ডুলিপি দিতেন প্রবোধবন্ধু অধিকারী

পর্ব ১৮: দু’বছরের মধ্যে সংস্করণ না ফুরলে অন্য জায়গায় বই ছাপার চুক্তি ছিল শরদিন্দুর চিঠিতে

পর্ব ১৭: পূর্ণেন্দু পত্রীর বাদ পড়া প্রচ্ছদ ও দিনেশ দাসের কবিতার শ্রেষ্ঠ দিনগুলি

পর্ব ১৬: সব প্রকাশনার যাবতীয় বইয়ের হদিশ পাওয়া যেত ‘সম্মিলিত গ্রন্থপঞ্জী’তে

পর্ব ১৫: নিছকই একটা পত্রিকা নয়, ‘কলেজ স্ট্রীট’ আমাদের আবেগ

পর্ব ১৪: খুদে পাঠকদের জন্য মিনিবই তৈরির কথা প্রথম ভেবেছিলেন অভয়দা

পর্ব ১৩: কয়েকটি প্রেসের গল্প

পর্ব ১২: দীর্ঘায়ু বই ও আইয়ুব পরিবার

পর্ব ১১: প্রেমের নয়, অপ্রেমের গল্প সংকলনের সম্পাদনা করেছিলেন সুনীল জানা

পর্ব ১০: ছোট্ট অপুকে দেখেই রঙিন ছবিতে ভরা টানটান গল্পের বই করার ইচ্ছে জেগেছিল

পর্ব ৯: চানঘরে গান-এ সত্যজিৎ রায়ের চিঠি থাকায় ব্যাপারটা গড়িয়েছিল কোর্ট কেস পর্যন্ত

পর্ব ৮: প্রকাশক-লেখকের কেজো সম্পর্কে বুদ্ধদেব গুহর বিশ্বাস ছিল না

পর্ব ৭: পুজো সংখ্যায় না-বেরনো উপন্যাস বই আকারে সুপারহিট

পর্ব ৬: মানবদার বিপুল অনুবাদের কাজ দেখেই শিশির দাশ তাঁর নাম দিয়েছিলেন– ‘অনুবাদেন্দ্র’

পর্ব ৫: সাতবার প্রুফ দেখার পর বুদ্ধদেব বসু রাজি হয়েছিলেন বই ছাপানোয়!

পর্ব ৪: লেখকদের বেঁচে থাকার জন্য অনেক কিছুই লিখতে হয়, প্রফুল্ল রায়কে বলেছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র

পর্ব ৩: পয়লা বৈশাখের খাতায় শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় মজাচ্ছলে লিখেছিলেন, ‘সুধাংশুরা রাজা হোক’

পর্ব ২: বাংলা মাসের সাত তারিখকে বলা হত ‘গ্রন্থতিথি’, বিজ্ঞাপনেও বিখ্যাত ছিল ‘৭-ই’

পর্ব ১: সত্তরের উথাল-পাথাল রাজনৈতিক আবহাওয়ায় আমি প্রকাশনার স্বপ্ন দেখছিলাম