Robbar

রবিশংকর বলের মতো উর্দু সাহিত্যের এত নিবিষ্ট পাঠক খুব কমই দেখেছি

Published by: Robbar Digital
  • Posted:September 15, 2025 7:52 pm
  • Updated:September 15, 2025 7:52 pm  

‘দোজখ্‌নামা’ ছাপাও হয়ে গেল আমাদের বিসিডি অফসেটে। তখনও পর্যন্ত না আমি, না অপু⎯ কেউই কিন্তু রবিশংকর বলকে চোখে দেখিনি। ২০১০-এর নভেম্বরে বই প্রকাশিত হল। আর তার কিছুদিন পরেই ‘সংবাদ প্রতিদিন’ এবং দে’জ পাবলিশিংয়ের যৌথ আয়োজনে অক্সফোর্ড বুক স্টোরে ‘দোজখ্‌নামা’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হল। সেখানেই লেখকের সঙ্গে প্রকাশকের প্রথম সাক্ষাৎ হল। সেদিনের অনুষ্ঠানে বইটি উদ্বোধন করেছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। অনুজ লেখকের বই উদ্বোধনে সুনীলদার সঙ্গে ছিলেন সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ এবং দিব্যেন্দু পালিত। রবিশংকর তাঁর অন্যতম প্রিয় লেখক সিরাজদাকেই ‘দোজখ্‌নামা’ বইটি উৎসর্গ করেছিলেন।

সুধাংশুশেখর দে

৪৯.

আফসারদা আর অনিলদার কথা বলতে-বলতে মনে পড়ে গেল আরেকজন অকালপ্রয়াত লেখক রবিশংকর বল-এর কথা। খুব অল্পদিনের ব্যবধানে দে’জ পাবলিশিং থেকে তাঁর কয়েকটি অনবদ্য বই প্রকাশিত হয়েছিল। রবিশংকর বলের নাম আমি জানতাম, পত্রপত্রিকায় লেখাও দেখেছিলাম। এটাও জানতাম তিনি ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর রবিবারের পাতা ‘ছুটি’র দায়িত্বপ্রাপ্ত⎯ কিন্তু সাক্ষাৎ পরিচয় ছিল না। ২০০৯ সালে বুদ্ধদেব গুহ অপুকে বলেন রবিশংকর সবার থেকে আলাদা রকমের গল্প-উপন্যাস লেখেন, তার যদি একটা গল্প সংকলন দে’জ থেকে প্রকাশ করা যায় তাহলে ভালো হবে। অপু বিষয়টা আমাকে জানায়, কিন্তু সেইসঙ্গে এ-ও বলে যে রবিশংকর বল সম্প্রতি ‘সংবাদ প্রতিদিনে’র রবিবারের বিশেষ ক্রোড়পত্রিকা ‘রোববার’-এ একটি ধারাবাহিক উপন্যাস লিখতে শুরু করেছেন⎯ সেটা শেষ হলে ওই বইটাই দে’জ থেকে প্রথম ছাপা হবে। পরে অন্য বইও করা যাবে। ঋতুপর্ণ ঘোষের সম্পাদনায় ২০০৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর থেকে ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর সঙ্গে ‘ফি রোববার ফ্রি রোববার’ বলে যে ক্রোড়পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছিল তার কভার স্টোরির অভিনবত্ব আর কলাম থেকে শুরু করে বিভিন্ন নিবন্ধ বাঙালি পাঠককে মুগ্ধ করছিল। আমিও সেসময় প্রত্যেক রবিবার সকালে ‘রোববার’ পত্রিকা হাতে পেলে প্রথমেই ঋতুপর্ণ ঘোষের ধারাবাহিক কলাম ‘ফার্স্ট পার্সন’ লেখাটা পড়ে নিতাম, আর পড়তাম নবনীতা দেবসেনের ‘ভালো-বাসার বারান্দা’। পরে অবশ্য নবনীতাদির ‘ভালো-বাসার বারান্দা’ যেমন পাঁচ খণ্ডে দে’জ থেকে প্রকাশিত হয়েছে, তেমনই ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘ফার্স্ট পার্সন’ও নীলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় দু’ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। 

‘রোববার’ পত্রিকায় রবিশংকর বল তাঁর ধারাবাহিক উপন্যাস লিখেছিলেন ২০০৯ সাল জুড়ে। আমি তখনও ‘দোজখ্‌নামা’র কোনও কিস্তি পড়িনি, কিন্তু অপু খুবই আগ্রহী ছিল উপন্যাসটা নিয়ে। আমি যে-সময়ের কথা বলছি তখন হয়তো দুটো বা তিনটে কিস্তি সবে প্রকাশিত হয়েছে। আমরা যে তাঁর বইয়ের ব্যাপারে আগ্রহী, বুদ্ধদেবদা সেকথা রবিশংকরকে জানানোর পর তিনি যেদিন অপুকে ফোন করে গল্প সংকলন প্রকাশের প্রস্তাব দেন, অপু সটান বলে দিয়েছিল গল্প সংকলন দে’জ থেকে বেরুবে, কিন্তু আগে বেরুবে ‘দোজখ্‌নামা’। তিনি সেকথা শুনে একটু অবাকই হন। কথা হয় লেখা শেষ হলে ‘দোজখ্‌নামা’ হবে দে’জ পাবলিশিং থেকে রবিশংকর বলের প্রথম বই।

ধারাবাহিক উপন্যাস শেষ হওয়ার পর যোগাযোগ হলে অপু তাঁকে জানায় ‘সংবাদ প্রতিদিন’ দপ্তরে আপনার সহকর্মী অনুপম ঘোষ আমাদের নিকট সহযোগী, আপনি তাঁর হাতে কপিটা দিয়ে দিন। অনুপমের সঙ্গে দে’জ পাবলিশিংয়ের সম্পর্ক প্রায় সাড়ে তিন দশকের। একদিন নারায়ণ সান্যাল আমাকে তার কথা বলেছিলেন।  তখন আমাদের প্রকাশনায় প্রুফ দেখা, কপি এডিটিং-এর জন্য যোগ্য কাউকে আমরা খুঁজছিলাম। নারায়ণদা সেকথা জানতেন। তাই তিনি যখন অনুপমের কথা বললেন আমি তাঁকে বলেছিলাম একবার যেন তিনি আমার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। অনুপম তখন সদ্য তরুণ। জানলাম থাকে আমাদের বাড়ির কাছেই, বউবাজারের চাঁপাতলা ফার্স্ট বাই লেনে। আমাদের প্রকাশনায় তখন বই কম্পোজ, প্রুফ দেখার যাবতীয় খোঁজখবর রাখতেন বঙ্কিম শী। আমি অনুপমের সঙ্গে তাঁর পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলি তাকে কোনও একটা বইয়ের কাজ দিতে। যতদূর মনে পড়ে হিরণ্ময় কার্লেকারের ‘ভবিষ্যতের অতীত’ বইটি দিয়ে সে আমাদের কাজেকর্মে জড়িয়ে যায়। এতদিনে অনুপম আমাদের পরিবারেরই একজন হয়ে গেছে। এখনও প্রতিদিন সে একবার সময় করে দে’জ পাবলিশিংয়ের দপ্তরে আসে। বইয়ের প্রুফ দেখা দিয়ে শুরু করলেও ধীরে-ধীরে সে তার বাড়িতে একটি ডিটিপি কম্পোজ ইউনিটও খোলে। আমাদের নিজেদের কম্পোজ ইউনিটের বাইরে একমাত্র অনুপমের পারফেক্ট লেজার গ্রাফিক্স এবং বেনিয়াটোলা লেনে সুমন রায়ের রেজ ডট কমেই এখন দে’জ পাবলিশিংয়ের কম্পোজের কাজ হয়। সুমনও আমার খুবই কাছের মানুষ। বাঁকুড়ার ছেলে, কলকাতায় এসে নিজের উদ্যোগে একটা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়েছে।

যাই হোক, অনুপমের হাত দিয়ে ‘দোজখ্‌নামা’র কপি চলে এল। আমি অনুপমকেই দায়িত্ব দিলাম বইটি কম্পোজ করে সাজিয়ে-গুছিয়ে দেবার জন্য। মাঝে বুদ্ধদেব গুহ জানতে চেয়েছিলেন রবিশংকরের সঙ্গে কথাবার্তা এগিয়েছে কি না। আমি শুধু বলেছিলাম কাজ শুরু হয়ে গেছে। ‘দোজখ্‌নামা’ ছাপাও হয়ে গেল আমাদের বিসিডি অফসেটে। তখনও পর্যন্ত না আমি, না অপু⎯ কেউই কিন্তু রবিশংকর বলকে চোখে দেখিনি। ২০১০-এর নভেম্বরে বই প্রকাশিত হল। আর তার কিছুদিন পরেই ‘সংবাদ প্রতিদিন’ এবং দে’জ পাবলিশিংয়ের যৌথ আয়োজনে অক্সফোর্ড বুক স্টোরে ‘দোজখ্‌নামা’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হল। সেখানেই লেখকের সঙ্গে প্রকাশকের প্রথম সাক্ষাৎ হল। সেদিনের অনুষ্ঠানে বইটি উদ্বোধন করেছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। অনুজ লেখকের বই উদ্বোধনে সুনীলদার সঙ্গে ছিলেন সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ এবং দিব্যেন্দু পালিত। রবিশংকর তাঁর অন্যতম প্রিয় লেখক সিরাজদাকেই ‘দোজখ্‌নামা’ বইটি উৎসর্গ করেছিলেন।

বাংলা সাহিত্যে ‘দোজখ্‌নামা‘র মতো উপন্যাস কমই আছে। এর বিষয়বস্তু থেকে শুরু করে গল্প বলার ভঙ্গি সবই নতুন ধরনের। সিপাহি বিদ্রোহ থেকে দেশভাগ⎯ প্রায় এক শতকের ইতিহাস বোনা আছে এই উপন্যাসে। ভারতের স্বাধীনতা এসেছিল দেশভাগের মধ্যে দিয়ে⎯ পূর্ব এবং পশ্চিম প্রান্তে বাংলা আর পাঞ্জাবকে দ্বিখণ্ডিত করে গঠিত স্বাধীন ভারত শুরু থেকেই উদ্বাসনের সমস্যায় আক্রান্ত। বাংলা আর পাঞ্জাবই দেশভাগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। ‘দোজখ্‌নামা’য় ভারত ও পাকিস্তানে নিজের-নিজের কবরে শুয়ে তাঁদের বৃত্তান্ত বলে গেছেন মির্জা গালিব আর সদত হসন মন্টো। তাঁদের কথায় রূপ পেয়েছে নানান কিস্‌সা, কল্পকথা আর আমাদের না-জানা বহু মানুষের কথা। উপন্যাসের শুরুটাও চমকপ্রদ। সেখানে দেখা যায় লেখক লখনউ গিয়ে দেখা পান ফরিদ মিঞার, যাঁর কাছে আছে মন্টোর অপ্রকাশিত দাস্তান। ফরিদের ভাষায় ‘মান্টোসাবের স্বপ্নের দাস্তান’। ফরিদ সেই পাণ্ডুলিপি লেখককে দিয়ে দেন যদি ছাপার ব্যবস্থা করা যায়। সেই পাণ্ডুলিপি পড়ার সূত্রেই উপন্যাসে প্রবেশ। ‘দোজখ্‌নামা’য় রবিশংকর বলেছেন, মন্টো সেই দাস্তানের ভূমিকায় লিখেছিলেন⎯ ‘মির্জা এবার আমার সঙ্গে কথা বলবেন, আমরা কথা বলে যাব অনর্গল, মির্জা যা সারা জীবন কাউকে বলতে পারেননি, আমি যে কথা কাউকে বলতে পারিনি, সব⎯ সব কথাই এবার আমরা বলব, কবরের ভিতরে শুয়ে শুয়ে। মির্জা শুয়ে আছেন, সেই দিল্লিতে, নিজামউদ্দিন আউলিয়ার দরগার কাছে সুলতানজির কবরে, আর আমি লাহোরে মিঞাসাহেতার কবরে। একসময় তো একটাই দেশ ছিল, ওপরে যতই কাঁটাতারের বেড়া থাকুক, মাটির গভীরে তো একটাই দেশ, একটাই পৃথিবী। মৃতের সঙ্গে মৃতের কথাবার্তা কেউ আটকাতে পেরেছে?’       

রবিশংকর বলের প্রজন্মের লেখকদের মধ্যে উর্দু সাহিত্যের এত নিবিষ্ট পাঠক খুব কমই দেখেছি। ‘উর্দু সাহিত্য: কী আশ্চর্য রকম একাকী আর প্রতিবাদী’ শিরোনামে একটি গদ্যলেখায় তিনি বলেছিলেন⎯

“উর্দু সাহিত্যের প্রতি আমার টান-ভালবাসা তৈরি হয় নাইয়ের মাসুদের গল্প পড়ার পর। এর আগে প্রেমচন্দ, সদত হসন মন্টো, কৃষণ চন্দর, রাজিন্দর সিং বেদি, ইসমত চুঘতাই, কুরাতুলাইন হায়দারের গল্প পড়েছি। এঁরা সকলেই বাস্তববাদী ঘরানার লেখক, যাঁদের লেখা পড়ে দেশ-কাল-মানুষের রক্তাক্ত পরিস্থিতি ও পটভূমি অনুভব করেছি। নাইয়ের মাসুদ আমাকে ভয় ও কামনার গোলকধাঁধায় এনে ফেললেন। এই একজন লেখক, যাঁকে পড়তে পড়তে, অবশ্যই ইংরেজিতে আমি নতুন করে উর্দু সাহিত্যের প্রেমে পড়লাম, নতুন করে ফিরলাম প্রেমচন্দ, সদত হসন মন্টো, রাজিন্দর সিং বেদি, ইসমত চুঘতাই, কুরাতুলাইন হায়দারদের জগতে। আমি বুঝতে পারলাম, এই লেখকরাও ইউরোপীয় অর্থে ‘বাস্তববাদী’ লেখক নন। উর্দুতে ‘দাস্তান’-এর একটি সজীব ধারা ছিল। ‘দাস্তান’ অর্থাৎ কাহিনি, যাঁরা মুখে মুখে বলতেন, তাঁদের বলা হত ‘দাস্তানগো’। মসজিদে, বাজারে-হাটে, পথে-ঘাটে দাস্তানগোরা এক দাস্তান থেকে অন্য দাস্তানে অনায়াসেই ঢুকে পড়তেন তথাকথিত বাস্তবতার কোনও তোয়াক্কা না করেই। দাস্তানগোর এই ধারাটি, আমার মনে হয়, আজও উর্দু গল্প-উপন্যাসে বহমান। তার কারণ, রেনেসঁ-র যুক্তি ও বুদ্ধির সন্দর্ভ যেভাবে বাংলাদেশকে শিকড়চ্যুত করেছিল, তা ভারতবর্ষের অন্য কোথাও সেভাবে ঘটেনি।”

রবিশংকর বল

উর্দু ভাষার দুই অসামান্য কবি ও লেখক মির্জা গালিব আর সাদত হাসন মান্টোকে চরিত্র করেও লেখক নিজের চিন্তার স্বকীয়টা প্রমাণ করেছেন। 

‘দোজখ্‌নামা’ পত্রিকায় প্রকাশের সময় থেকেই পাঠকরা সেটি মুগ্ধতার সঙ্গে পড়েছেন। বই হওয়ার পর সেই ভালোলাগা আরও বেড়ে যায়। একটি উপন্যাসকে নিয়ে অনেকদিন পরে এতটা উচ্ছ্বসিত হয় বাংলার পাঠক। আমি দেখছিলাম ২০২৩ পর্যন্ত বইটি ছ’ বার ছাপা হয়েছে। সুনীলদা ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’য় এই বইটিকে ২০১০ সালে বাংলা ভাষায় লেখা সেরা বই বলেছিলেন। সিরাজদাও মুগ্ধ হয়েছিলেন। পরে অবশ্য আমার স্নেহভাজন অরুণাভ সিনহার হাতে বইটির ইংরেজি অনুবাদও র‍্যান্ডম হাউস ইন্ডিয়া থেকে প্রকাশিত হয়⎯ ‘দোজখ্‌নামা/ কনভারসেশন ইন হেল’ নাম দিয়ে। 

‘দোজখ্‌নামা’ উদ্বোধনে সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ, দিব্যেন্দু পালিত, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এবং রবিশংকর বল।

দে’জ থেকে রবিশংকর বলের দ্বিতীয় বই ‘আয়নাজীবন’ প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালের নভেম্বরে। সেই বইয়ের ‘নিবেদন’ অংশে লেখক জানিয়েছেন⎯ “‘দোজখ্‌নামা’ লেখার সময় থেকেই সুফি কবি ও সাধক মওলানা জালালুদ্দিন রুমির জীবনে প্রবেশ করি। ‘দোজখ্‌নামা’ উপন্যাসের চরিত্ররা ছিল নরকের বাসিন্দা। দীর্ঘ এক দহনকাল পেরিয়ে গেছে তারা। আর এই ‘আয়নাজীবন’ উপন্যাসে আমরা ফিরে এলাম শুশ্রূষাময় জলের কাছে।…” এই রকম লাইন একজন কবিই লিখতে পারেন বলে আমার মনে হয়েছিল। তখন রবিশংকর বলের লেখালিখি নিয়ে তত্ত্বতালাশ করে জানতে পারি তিনি সাহিত্যজগতে পা রেখেছিলেন কবিতার হাত ধরেই। ১৯৮১ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম বইটি ছিল একটি কাব্যগ্রন্থ⎯ ‘হেমন্তের এলিজি ও অন্যান্য’। কবিতা নিয়ে সব সময়েই তাঁর আলাদা রকমের সচেতনতা ছিল। কবিতা বিষয়ক প্রচুর গদ্যও লিখেছেন তিনি। ‘আয়নাজীবন’ দু’ পর্বে প্রকাশিত হয়েছিল ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর ২০১২ ও ২০১৩-র  পুজোসংখ্যায়। প্রথম পর্বটির নাম ছিল ‘সে কাব্য অনেক’। উপন্যাসটি ‘আয়নাজীবন’ নামেই তিনি প্রকাশ করেন। এই উপন্যাসের পরিচিতিতে লেখা হয়েছিল⎯ ‘জালালুদ্দিন বল্‌খি থেকে মওলানা জালালুদ্দিন রুমি। সাতশো বছর ধরে তাঁর মসনবি, গজল ধীরে ধীরে শাখা-প্রশাখা ছড়িয়েছে সারা দুনিয়ায়। একজন ইসলামি ধর্মবেত্তা ও পণ্ডিত থেকে পৃথিবীর অন্যতম সুফি কবি হয়ে ওঠার রহস্য কোথায় লুকিয়ে আছে? কীভাবে একজন শান্ত, বিনয়ী মানুষ হয়ে ওঠেন সৃজনের অগ্নিশিখা? কোন রূপান্তর ঘটে তাঁর জীবনে? কোন বিচ্ছেদবেদনা তাঁকে প্রেমের উন্মাদনার দিকে নিয়ে যায়?…’ উপন্যাসটি ইবন বতুতার কলমে লেখা হয়েছে। উপন্যাসের শুরুটাও চমকপ্রদ এবং কবিতার মতো ভেতরের দিকে মুখ ফেরানো⎯ ‘আপনারা আমার এই কিতাব আগে পড়েননি। আমার তিরিশ বছরের ভ্রমণ বৃত্তান্ত কেউ কেউ পড়ে থাকতে পারেন। এখন সবাই বলে ভ্রমণ, আসলে আমি তীর্থযাত্রায় বেরিয়ে পড়েছিলাম। তিরিশ বছর ধরে দেশে-দেশে ঘুরতে-ঘুরতে আমার মনে হয়েছে, এই দুনিয়ায় তীর্থের শেষ নেই; কথাটা এমন ভাবেও বলা যায়, পৃথিবীটাই এক তীর্থ। শেখ ইবন বতুতা বারে বারে প্রণতি জানায় মাটি-জল-বায়ু-অগ্নি-অন্তরীক্ষের প্রতি।’ বাংলা উপন্যাসের প্রথাসিদ্ধ কাঠামো ছেড়ে রবিশংকর একেবারে অন্য ধরনের উপন্যাসের কথা ভেবেছিলেন ‘দোজখ্‌নামা’ আর ‘আয়নাজীবনে’। ‘আয়নাজীবন’ উপন্যাসের উৎসর্গে লেখা হয়েছিল⎯

মাইকেল মধুসূদন দত্ত
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
জীবনানন্দ দাশ
এই বাংলা তিন আলোর হাতে
অর্পিত হল আনাতোলিয়ার আলোর জীবন

আনাতোলিয়ার কথা উপন্যাসে বলাও আছে। লেখক ‘আয়নাজীবন’-এ কথকের মুখ দিয়ে বলিয়েছেন⎯ ‘আনাতোলিয়া। এক নক্ষত্রের দোষের মতো নামটা আমায় টেনেছিল। নামটার মধ্যে যেন একটা গান লুকিয়ে আছে।’ আবার খানিক পরেই লিখেছেন⎯   “আলেকজান্দ্রিয়ার ইমামসাবের কাছে মওলানার জাদুজীবনের অনেক গল্প শুনেছিলাম। তিনি বলেছিলেন, ‘কোনিয়া যাওয়ার পথের প্রতিটি পাথরে, প্রতিটি গাছে মওলানার কবিতা লেখা আছে, শুধু তোমাকে বুঝে নিতে হবে। আর শোনো সরাইখানাগুলো খুব মন দিয়ে দেখো। আনাতোলিয়ার আত্মা ওখানেই লুকিয়ে আছে।’ মওলানা বলেছিলেন, ‘এ-দুনিয়া এক সরাইখানা, গভীর শীতে আমরা সেখানে অপেক্ষা করি কবে বসন্তের প্রথম উষ্ণ দিনটি আসবে, বরফ গলতে শুরু করবে, পথ দেখা যাবে, তারপর আবার চলতে শুরু করবে আমাদের ক্যারাভান।’ ইমামসাব অদ্ভুত সব কথা বলতেন। একদিন বলেছিলেন, ‘আনাতোলিয়া শুধু একটা জায়গা নয়, আত্মার আরেক নাম আনাতোলিয়া।’ এই সব পড়ে আমার কেন জানি না সিরাজদার ‘অলীক মানুষ’ উপন্যাসের কথাই মনে হয়েছিল।”

বঙ্কিম পুরস্কারের মঞ্চে সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ, মহাশ্বেতা দেবী এবং রবিশংকর বল

রবিশংকরের যে-বইটি দিয়ে দে’জ থেকে তাঁর বই প্রকাশ শুরু হওয়ার কথা হয়েছিল সেই গল্পের সংকলনটি প্রকাশিত হয় ২০১৪ সালে বইমেলার আগে⎯ ‘আয়নাজীবন’ আর তাঁর ‘সেরা ৫০টি গল্প’ প্রকাশের মধ্যে সময়ের ব্যবধান মাত্রই মাস দুয়েক। বইয়ের পরিচিতিতে লেখা হল⎯ “১৯৯৪-তে প্রকাশিত হয় রবিশংকর বল-এর প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘দারুনিরঞ্জন’। তারপর ‘জীবন অন্যত্র’, ‘আর্তোর শেষ অভিনয়’, ‘রবিশংকর বলের গল্প’ ও অতিসাম্প্রতিক ‘দশটি গল্প’। এইসব সংকলনে প্রকাশিত এবং আরও অনেক অগ্রন্থিত গল্প নিয়ে তাঁর ‘সেরা ৫০টি গল্প’। ‘দারুনিরঞ্জন’-এর ভূমিকায় তিনি লিখেছিলেন, ‘অস্তিত্ব এক প্রশ্ন, নানা সময় বানিয়ে তোলা নানা কথায় যার উত্তর তৈরি করার চেষ্টা করি আমরা। কাহিনিরা তাই প্রকৃতপ্রস্তাবে এক একটি ক্ষয়শীল চেষ্টা। কাহিনিরা কি তাহলে নানা মুহূর্তের মৃত্যুগুলিকেই বহন করে?’ রবিশংকর বল-এর ‘সেরা ৫০টি গল্প’ আদতে ‘ক্ষয়শীল চেষ্টা’-র এক দীর্ঘ আখ্যান।

২০১৫ থেকে ২০১৭-র মধ্যে আমাদের প্রকাশনা থেকে লেখকের আরও চারটে উপন্যাস প্রকাশিত হয়⎯ ‘জিরো আওয়ার’, ‘ছায়াপুতুলের খেলা’, ‘জন্মযান’ আর ‘গিলোটিনের নিচে জীবন’। এর মধ্যে ‘ছায়াপুতুলের খেলা’ আমরা পুনর্মুদ্রণ করেছিলাম এটা মনে আছে। আর ‘গিলোটিনের নিচে জীবন’ ২০১৬-য় লেখা দু’টি নভেলার একত্র সংস্করণ, প্রকাশিত হয় ২০১৭-র বইমেলার সময়। ‘গিলোটিনের নিচে জীবন’ বইটির পরিচিতিতে লেখা হয়েছিল⎯ ‘দুটি নভেলা। আছে অপহরণকারী, গোয়েন্দা, লেখক, তদন্তকারী কৃষ্ণগহ্বর-গ্রস্ত নারী, ভদকা ও চুরুট খাওয়া মার্জার। আর শহর। দুনিয়ার অনেক কালো শহর, হারানো শহরের কিস্‌সা। জমে গেছে মেগালোপোলিশ তৈরির খেলা। টেকটনিক শিফটে প্রতিটি মানুষ তার কল্পিত ভূখণ্ডে বন্দি। কিছু দূরেই দাঁড়িয়ে হাসছে প্লাস্টিক মানির ভূত…’। এই বইয়ের উৎসর্গও রবিশংকর বলের লেখার মতো অন্য ধরনের। তিনি শুধু লিখেছেন⎯ ‘লুপ্ত শহরদের’। পরে অবশ্য আমরা লেখকের ‘উপন্যাসসমগ্র’-এর দুটি খণ্ডও প্রকাশ করেছি। দু’ খণ্ডে মোট ১২টি ছোট উপন্যাস ছাপা হয়েছে। রবিশংকর বলের যে কোনও উপন্যাস পড়লেই পাঠক বুঝে নিতে পারবেন লেখকের স্বাতন্ত্র্য এবং অন্তর্জগতের ক্রমউন্মোচন। ‘চতুরঙ্গ’ পত্রিকায় লেখা গদ্য ‘গয়া ওয়ক্ত, কথা বলো’-তে রবিশংকরের উপন্যাস-ভাবনার খানিকটা  নির্যাস পাওয়া যায়, যেখানে তিনি লিখেছেন⎯

‘উপন্যাস আসলে নিজেই নিজেকে লেখে। এই ধারণা আমার ভিতরে ধীরে ধীরে বদ্ধমূল হচ্ছে। আমি হয়তো একটা লেখা শুরু করি, কিন্তু লিখতে লিখতে বোঝা যায়, আমি লেখাটির অনুসরণকারী হয়ে উঠছি মাত্র। বীজটা বপন করার পর আমার কাজ হয়ে দাঁড়ায় শুধু অঙ্কুরোদ্গম, চারগাছের জেগে ওঠা থেকে পত্রে-পুষ্পে-ফলে একটি বৃক্ষের জীবন-উদ্‌যাপন দেখে যাওয়া। এভাবেই একটি উপন্যাসের জন্ম হয়। কিন্তু তার জন্ম, বেড়ে ওঠা, পরিণতি⎯ এসবের রসায়ন আমি কতটুকু জানি? আমি তো তাকে বাইরে থেকে অবলোকন করেছি। হ্যাঁ, বাইরে থেকে। যেভাবে প্রাণ কীভাবে উৎসারিত হয় জানি না, সেভাবেই উপন্যাসের জন্মবৃত্তান্তও আমার কাছে রহস্যময়। এই রহস্যের সামনে আমার বোধ-বুদ্ধি-কল্পনার সীমাবদ্ধতা টের পাই।

উপন্যাস যে লেখে, সে তাহলে কে? আমি বলি, অনুসরণকারী। সে তার চারপাশের জীবনগুলিকে অনুসরণ করে, বেশ কিছু দূর থেকে, চরিত্ররা যেন তাকে দেখতে না পায়। তাহলে তো তাকে চোরাগোপ্তা অনুসরণকারীও বলা যায়। কিন্তু চারপাশের এই যে জীবন⎯ চরিত্রগুলি⎯ তারা কি শুধুই বর্তমানের, অনুসরণকারীর সমসময়ের? … বিস্তৃত অতীত জানা-অজানা নিযুত-কোটি মানুষের ধারার ধার না ধারলে উগ্র-প্রগতিশীল আমাদেরও বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে ওঠে। সর্বাস্তিবাদী এই জীবনে আমি কি তাহলে মির্জা গালিব, সন্ত কবির, সদত হসন মন্টো, মওলানা রুমির সঙ্গেও বাঁচি না?…’

এর আগেই, ২০১২ সালে সদত হসন মন্টোর জন্ম শতবর্ষে দে’জ থেকে প্রকাশিত হয়েছে মন্টোর রচনাসংগ্রহ। বইটির ভূমিকা ও সম্পাদনা রবিশংকর বলের। মন্টোর ২৫টি গল্প, একটি নাটক আর চারটি গদ্যের অনুবাদের এই সংকলনে রবিশংকর নিজে যেমন অনুবাদ করেছেন, তেমনই অনেক বিখ্যাত লেখক-কবিও অনুবাদ করেছেন। মন্টো রচনাসংগ্রহে পরিচিতিতে লেখা হয়েছিল⎯ “নিজের কবরে উৎকীর্ণ করার জন্য একটি সমাধিলিপি লিখেছিলেন সদত হসন মন্টো: ‘এখানে শুয়ে আছে সদত হসন মন্টো। তার সঙ্গে সঙ্গে গল্প লেখার শিল্প ও রহস্য কবরস্থ হয়েছে … টন টন মাটির নীচে শুয়ে সে ভাবছে, কে বড় গল্প-লেখক, খোদা, না সে।’ গল্প-লেখক হিসাবে মন্টো একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবেছেন আল্লাহকে। তাই ‘সভ্য’ সমাজের ভণ্ডামি ও ফাঁকা নৈতিকতাকে ফাঁসিয়ে দিতে একটুও তোয়াক্কা করেননি। গল্পের পর গল্পে জীবনের যে-অভিজ্ঞতা মন্টো লিপিবদ্ধ করেছেন, তা তাঁর পাঠককে আক্রমণ করেছে সমূহ নিষ্ঠুরতা ও কাহিনির অসহায়তা নিয়ে। পাঠক তার চারপাশের বাস্তবতাকে অন্যভাবে আবিষ্কার করেছে। দেশভাগ বা সমাজের নিচুতলার মানুষদের নিয়ে যাঁরা গল্প-উপন্যাস লিখেছেন, মন্টো তাঁদের সকলের চেয়ে স্বতন্ত্র। বেশ্যাদের জীবনের নিষ্ঠুরতা ও চাপ-কান্না, সম্ভবত, মন্টোর আগে আর কোনও ভারতীয় লেখকের রচনায় রক্তমাংসে ফুটে ওঠেনি। আবেগহীন, অথচ যন্ত্রণাবিদ্ধ দৃষ্টিতে মন্টো তাঁর সময়ের ঘটনাবলী ও মানুষগুলিকে দেখেছেন। মন্টো বাস্তববাদী লেখক, কিন্তু শুধু ঘটনার বর্ণনাতেই তাঁর গল্প আটকে থাকে না। চরিত্রগুলি মনস্তাত্ত্বিক ও আস্তিত্বিক যে জটিলতা নিয়ে মন্টোর গল্পে হাজির হয়, তা ভারতীয় সাহিত্যে খুবই কমই দেখা গেছে।”

২০১৭-র জানুয়ারিতে ‘গিলোটিনের নিচে জীবন’ প্রকাশিত হল, আর সেবছরই অসুস্থ হয়ে পড়ে ১২ ডিসেম্বর আমাদের ছেড়ে অনন্তের পথে এগিয়ে গেলেন রবিশংকর বল। তাঁর প্রয়াণের পরে আমরা ২০১৮-র পয়লা বৈশাখে প্রকাশ করি ‘কিস্‌সা বলেন শেহ্‌রজাদে’। রবিশংকরের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী সীমা বলের উদ্যোগেই মূলত তাঁর বইপত্রগুলি প্রকাশিত হচ্ছে। তিনি গভীর অভিনিবেশে রবিশংকর বলের লেখালিখি একজায়গায় করে চলেছেন। ‘কিস্‌সা বলেন শেহ্‌রজাদে’ বইটির জন্য রাজশাহি থেকে হাসান আজিজুল হক একটি ছোট্ট মুখবন্ধ লিখে পাঠিয়েছিলেন ‘চক্রবৃত্তে মীনচক্ষু’ নামে। সেই মুখবন্ধে হাসানভাই লিখেছিলেন⎯ 

“শ্রীরবিশংকর বল-এর রচনার সঙ্গে আমি দীর্ঘকাল পরিচিত একথা বলা সঙ্গত হবে না। মাত্র কিছুদিন আগে তিনি তাঁর ‘আয়নাজীবন’ বইটি আমাকে উপহার দিয়েছিলেন। পড়তে গিয়ে বেশ একটু নাড়া খেলাম। বাংলা কথাসাহিত্যে থোড়-বড়ি-খাড়া অনেকদিন ধরেই চলছে। অপেক্ষাকৃত তরুণ প্রতিষ্ঠিত লেখক এখন আঙুলে গোনা। কথাটা আমি অবশ্য আমার পড়াশোনার সংকীর্ণ বৃত্ত থেকেই বলছি।

রবিশংকর বল-এর ‘আয়নাজীবন’ পড়ার পর ‘দোজখ্‌নামা’ বইটি যখন পেলাম (এই বইটিও রবিশংকর আমাকে দিয়েছিলেন), আমি নিঃসংশয় হলাম, বাংলা সাহিত্য নতুন একটা মোড়ের মাথায় এসে দাঁড়িয়েছে। সেখান থেকে অনেক নতুন সড়ক দেখা যাচ্ছে। রবিশংকরেরও একটা নিজস্ব সড়ক মিলে গেল। সেই সড়কের দু’পাশে একটির পর একটি জনপদ, জীবনের নীরব গভীর পরিপূর্ণ স্রোতধারায় বয়ে চলেছে। সেখানে ব্যক্তি, মানুষ স্থির-বুদ্বুদ দেখা দিচ্ছে, ঝলমল করছে জলের ধারায় জলাধার। তক্ষুণি মিলিয়ে যাচ্ছে। চলিষ্ণুতা ও স্থিরতা একসঙ্গে বাঁধা পড়েছে। প্রাচীন ও নতুনের সমাবেশে মহাকল্লোল দিগন্ত পর্যন্ত বিস্তৃত⎯ যে বিস্তারের কোনও অন্ত নেই।”

‘কিস্‌সা বলেন শেহ্‌রজাদে’ দিয়ে শুরু⎯ সীমা বলের সর্বাত্মক চেষ্টাতেই ‘উপন্যাসসমগ্র’-র প্রথম খণ্ডটি আমরা প্রকাশ করি ২০২৩ সালে, আর পরের বছর দ্বিতীয় খণ্ড। তবে ২০২২-এ প্রকাশিত রবিশংকরের ‘গদ্যসংগ্রহ’ একটি অসাধারণ বই। সারাজীবনে লেখা অসংখ্য গদ্যের বেশ খানিকটা চারটি পর্বে ধরা আছে এই সংকলনে। 

রবিশংকর বলের ‘গদ্যসংগ্রহ’-র ভূমিকা লিখেছিলেন আমাদের রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। বইয়ের ভূমিকায় ব্রাত্য বসু লিখেছেন⎯ “আশ্চর্যের বিষয় এই যে জীবনানন্দ এবং রবিশংকর দুজনেই প্রয়াত হচ্ছেন প্রায় কাছাকাছি বয়সে। জীবনানন্দের ক্ষেত্রে অনেকেই মনে করেছেন এ মৃত্যু ‘আত্মহনন’-এর তুল্য। হয়তো রবিশংকরেরও। জানি মনস্তত্ত্ববিদেরা বলতে পারেন জীবনের কেন্দ্রে সাফল্য ও জয়ের যে ধর্ষকাম আছে তা দীর্ঘ আয়ুর মতো সুস্থির স্থূলতা দিতে পারে। পক্ষান্তরে কিনারের মধ্যে যে আত্মক্ষরণ ও আত্মরতির মর্ষকাম আছে তা এক সূক্ষ্ম আত্মহননের বীজ বুনে দিতে পারে স্বল্পায়ুবিশিষ্ট জীবনে।”

ব্রাত্য বসু বাংলার সংস্কৃতিজগতে সুপরিচিত নাম। তিনি নাটককার, নাট্য নির্দেশক, চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং অসামান্য অভিনেতাও। বাংলা থিয়েটারে তাঁর ‘উইঙ্কল টুইঙ্কল’, ‘হেমলাট দ্য প্রিন্স অফ গরানহাটা’, ‘কৃষ্ণগহ্বর’, ‘ব্রাত্যজনের রুদ্ধসংগীত’⎯ নতুন পথের দিশারি। দে’জ পাবলিশিং থেকে আমি সুলেখক ব্রাত্য বসুর ‘গদ্যসংগ্রহ’ প্রকাশ করেছি ২০১৯ সালে বইমেলার সময়। ‘ব্যক্তিগত’, ‘শিল্পান্তর’, ‘রাজনীতি’, ‘থিয়েটার’ এবং ‘হরেকরকম’⎯ এই পাঁচটি পর্যায়ে তাঁর অনেকগুলি গদ্য গ্রথিত হয়েছে রয়্যাল সাইজের বইটিতে। ‘গদ্যসংগ্রহ’-এর ব্যাক-কভারের লেখাটিকে পাঠকের কাছে ব্রাত্য বসুর লেখালিখির প্রবেশক বলা যায়⎯ “আমরা যে সময়ে বড় হয়েছি, তখন আমরা মাথার ওপর যুদ্ধ দেখিনি, শরীরে স্পর্শ করা দেশভাগ দেখিনি, কোনো আগুনে মন্বন্তর ও ‘ফ্যান দাও’ ধ্বনি বিদীর্ণ করেনি আমাদের নাগরিক কুহর, সরাসরি চোখের সামনে কোনো দাঙ্গা দেখিনি, দেখিনি ফুটপাথের ধারে পড়ে থাকা কোনো পৈতে-পরিহিত বা ফেজটুপির শব, দেখিনি বগিভর্তি করে আসা উদ্বাস্তু ঢল কেমন করে আকীর্ণ করে তুলছে স্টেশনচত্বর। দেখিনি তেভাগা, দেখিনি তেলেঙ্গানা, দেখিনি নকশালবাড়ি। গত শতাব্দীর নয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে আমাদের কাজকর্ম, কথা লেখালিখির শুরু।’ 

২০২২-এর জানুয়ারিতে দে’জ থেকে ব্রাত্য বসুর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে ‘আমি যে তোমাকে পড়ি, আমি যে তোমার কথা বুঝি’। বইটি বাংলা নাট্যবিষয়ক সাতটি গোলটেবিল আলোচনার সংকলন। এর মধ্যে তৃতীয় গোলটেবিলটি ‘ব্রাত্য বসুর সঙ্গে নাট্যভাবনা বিষয়ে অনুজদের কাথাবার্তা’। ২০১০ থেকে ২০২০-২১ পর্যন্ত এই গোলটেবিল আলোচনাগুলি আয়োজিত হয়েছিল, যার অনেকগুলিই ব্রাত্য বসু সম্পাদিত ‘ব্রাত্যজন নাট্যপত্র’-এ প্রকাশিত। নাট্যকেন্দ্রিক এই আলোচনায় উঠে এসেছে সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতির প্রসঙ্গ; তাছাড়া আলোচিত হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি, লিঙ্গবৈষম্য এবং সেই সঙ্গে বাংলা নাটকের বাঁক বদল।

ব্রাত্য বসু-র ‘গদ্যসংগ্রহ’র পাতা ওলটাতে গিয়ে প্রথম লেখাটিই দেখি ‘বাবার কথা’। লেখাটা পড়ে মনে পড়ে গেল তাঁর বাবা বিষ্ণু বসু-র কথা। বিষ্ণুদার সঙ্গে আমার বহুদিনের পরিচয়। সুপণ্ডিত অধ্যাপক বিষ্ণু বসুও নাট্যচর্চায় নিয়োজিত ছিলেন। বিষ্ণুদার সঙ্গে আমার আলাপ প্রফুল্লদার (প্রফুল্ল রায়) মাধ্যমে। তখন আমরা দে’জ পাবলিশিং থেকে প্রফুল্লদার ‘রচনাসমগ্র’ প্রকাশের উদ্যোগ করছি। আমি প্রফুল্লদার কাছে জানতে চেয়েছিলাম কে সম্পাদনা করবেন তাঁর ‘রচনাসংগ্রহ’? তখন প্রফুল্লদাই বিষ্ণুদার নাম বলেছিলেন। ২০০২ সাল থেকে এই সংগ্রহ প্রকাশিত হতে থাকে বিষ্ণুদার সম্পাদনায়। কিন্তু তিনি প্রথম পাঁচটি খণ্ডই সম্পাদনা করতে পেরেছিলেন। পঞ্চম খণ্ডটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০০৮ সালে। ষষ্ঠ খণ্ডে প্রফুল্লদা নিজেই ‘প্রসঙ্গত’ শিরোনামের ভূমিকায় লিখেছিলেন⎯ 

“ডক্টর বিষ্ণু বসু কিছুদিন হল প্রয়াত হয়েছেন। তিনি জীবিত থাকলে আমাকে এই লেখার দায় নিতে হত না। বিষ্ণুর সঙ্গে আমার পরিচয় তরুণ বয়সে। তখন আমরা থাকতাম বেহালায়। সুভদ্র, প্রাণবন্ত, রসিক সেদিনের সেই যুবকটির মুখে সর্বক্ষণ স্নিগ্ধ, সকৌতুক একটি হাসি লেগে থাকত। প্রথম যৌবনের একটা ম্যাজিক থাকে। আলাপের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের প্রগাঢ় বন্ধুত্ব হয়ে গেল। প্রতিদিনই দু’জনের দেখা হত। খুব সম্ভব তিনি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, কিংবা সদ্য এম এ পাস করেছেন। আমি লেখালেখি শুরু করেছি। সাহিত্য নিয়েই আলোচনা হত বেশি। কখনও কখনও এই ব্যাপারে সামান্য তর্কবিতর্কও। হয়তো কোনও গল্প উপন্যাস বা নাটক বা অন্য কোনও বিষয়ে তাঁর মতের সঙ্গে আমার মতের অমিল হত। আমি বিশ্লেষণ করে আমার অভিমত প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করতাম। তিনি পাল্টা যুক্তি দাঁড় করাতেন। এইরকম আর কি। দ্বিমত হলে কোনওদিন তাঁকে উত্তেজিত হতে দেখিনি।

কণ্ঠস্বর উঁচুতে তুলে কথা বলতে শুনিনি। শান্ত, ধীরস্থির মানুষটি নিজের মূল্যায়নে অবিচল থাকতেন। বেশিদিন বিষ্ণুরা বেহালায় থাকেননি। উত্তর কলকাতা বা অন্য কোথাও চলে গিয়েছিলেন। আমিও কলকাতা ছেড়ে দেশের নানাপ্রান্তে ঘুরেছি। বহুকাল তাঁর সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ হত না। তবে দু’জনেই পরস্পরের খবর রাখতাম। তিনি অধ্যাপনা করছেন এবং নাট্যচর্চায় মগ্ন। মাঝে মাঝে পত্রপত্রিকায় ছড়াও লিখতেন। নাটক নিয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধও। এবং উপন্যাস নিয়ে সমালোচনাও। গভীর আগ্রহে সেসব পড়তাম।

প্রায় চার দশক পর কলেজ স্ট্রিটে বিষ্ণুর সঙ্গে হঠাৎ দেখা হয়ে গেল। আমরা দু’জনেই তখন প্রৌঢ়ত্বের সীমানা পার হতে চলেছি। চুলে পাক ধরেছে, চোখে চশমা, ত্বক শিথিল হতে শুরু করেছে। অন্য দিক থেকে বিষ্ণু বসু সেই চল্লিশ বেয়াল্লিশ বছর আগের সেই বিষ্ণু বসুই। তেমনই স্নিগ্ধ, সহাস্য, সুরসিক। আমরা কফি হাউসে গিয়ে ঘণ্টা দেড়েক পুরানো দিনের নানা মধুর স্মৃতি ঘাঁটাঘাঁটি করে কাটিয়ে দিলাম। এর মধ্যে তাঁর রসিকতা আরও পরিশীলিত হয়েছে। কথাবার্তায় বৈদগ্ধ্যের দীপ্তি। জানলেন, কালিন্দীতে বাড়ি করেছেন। আমিও জানালাম, টালিগঞ্জে থাকি। সেদিনের পর পুরানো বন্ধুত্বটা আবার নতুন করে ঝালিয়ে নেওয়া গেল। আমি ওঁর কালিন্দীর বাড়িতে বেশ কয়েকবার গেছি, উনিও আমাদের টালিগঞ্জের ফ্ল্যাটে এসেছেন। তাছাড়া ফোনে যোগাযোগ করে কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউস এবং প্রকাশক পাড়ায় প্রায়ই দেখা হতে লাগল।

বছর কয়েক আগে দে’জ পাবলিশিং-এর কর্ণধার, পরম স্নেহভাজন সুধাংশুশেখর দে একদিন জানালেন, আমার রচনাসমগ্র খণ্ডে খণ্ডে প্রকাশ করবেন। এই রচনাবলি সম্পাদনার দায়িত্ব কে নেবেন? অনেকের কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিষ্ণু বসুকেই এই কাজটি দেবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। কেননা গল্প উপন্যাস প্রবন্ধ এবং অন্যান্য বিষয় মিলিয়ে যা লিখেছি তা সংকলিত করতে কমপক্ষে তিরিশটি খণ্ড হবে। এর জন্য বিরাট পরিশ্রম এবং সময় প্রয়োজন। আমার অগোছালো স্বভাবের জন্য তো বটেই, বিভিন্ন সময়ে আমাকে ভারতের নানা প্রান্তে কাটাতে হয়েছে, তাই সব লেখা শুছিয়ে রাখা হয়নি। সেসব জোগাড় করে গ্রন্থভুক্ত করা খুবই দুরূহ কাজ। বিষ্ণু সানন্দে এবং সাগ্রহে সম্পাদনা করতে রাজি হলেন। আমার সাহিত্যজীবনের সূত্রপাত থেকে তিনি আমার প্রায় সমস্ত লেখা পড়ে আসছেন।…”

এই ‘রচনাসংগ্রহ’-র প্রথম পাঁচটি খণ্ডে বিষ্ণুদার ভূমিকাগুলো পড়লে মানুষটার বৈদগ্ধ্যের পরিচয় পাওয়া যায়। বইগুলো প্রকাশের সময় আমি তাঁদের কালিন্দীর বাড়িতে কয়েকবার গিয়েছি। প্রথম খণ্ড প্রকাশের আগে বিষ্ণুদা সেই বইয়ের জন্য তৈরি করা মলাটটা অনুমোদন করেননি, সেকথা মনে আছে। পরে আমি প্রণবেশ মাইতিকে দিয়ে মলাট করালে তিনি খুশি হন। 

প্রফুল্লদার ‘রচনাসংগ্রহ’-এর প্রথম খণ্ডের কাজ চলাকালীন বিষ্ণুদা আমাকে জানান তিনি বাংলা সাহিত্যের নারীকেন্দ্রিক গল্পের একটি সংকলন তৈরি করেছেন। আমি সঙ্গে-সঙ্গেই সে-বইটি প্রকাশে আগ্রহ দেখাই। ২০০৩-এর বইমেলায় প্রকাশিত হয়⎯ ‘চিরন্তন নারী/ বাংলা সাহিত্যের নারীকেন্দ্রিক গল্পের সেরা সংকলন’⎯ দুই বাংলার লেখকদের মোট ৬১টি গল্পের সংকলন। বইটির ভূমিকায় বিষ্ণুদা লিখেছিলেন⎯ ‘সংকলিত গল্পগুলো যে দশক অনুযায়ী অথবা আন্দোলন অনুসারী হিসেবে সাজানো হয়েছে তা নয় তবে সতর্ক পাঠক নিশ্চয়ই লক্ষ্য করবেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালি মানসের বিচিত্রতা কীভাবে বিবর্তিত হয়েছে তাকে এখানে অনুসরণ করার চেষ্টা যথাসাধ্য হয়েছে। ব্যক্তি ও সমাজের মনস্তত্ত্ব উনিশ শতকের উপান্তে যা ছিল, বিশ শতকের অন্তিম লগ্নে অবশ্যই তা ছিল না। বিশেষ করে স্বাধীনতা ও দেশভাগে বাঙালি জীবনে যে মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হয়েছে তার নান্দনিক প্রকাশ ঘটেছে বাংলা সাহিত্যে। পঞ্চাশের দশকে উঠে এলেন যে একঝাঁক তরুণ লেখক, ঐতিহ্যের সঙ্গে সংলগ্ন থেকেও তাঁরা সাহিত্যে আনলেন এক নতুনতর বিন্যাস। তাঁদের অনেকেই দেশভাগের পর পুব বাংলা থেকে এ বাংলায় চলে এসেছিলেন কৈশোরে। পুব বাংলা তথা বাংলাদেশের সাহিত্যেও নতুন সৃষ্টিশীলতার বৈভব অলক্ষ থাকেনি।’ আমার বিশ্বাস, বিষ্ণুদার মতো মানুষ সম্পাদনা করেছিলেন বলেই ‘চিরন্তন নারী’ এতটা অসামান্য হয়েছিল।

লিখন: শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়

…………………… ইতি কলেজ স্ট্রিট-এর অন্যান্য পর্ব …………………

পর্ব ৪৮। দেবেশ রায়ের যেমন ‘বৃত্তান্ত’, আফসার আমেদের তেমন ‘কিস্‌সা’

পর্ব ৪৭। বই বাঁধানো সম্পূর্ণ হয়নি, তাই ‘মহাভুল’ শুধরে নিয়েছিলেন দেবেশ রায়

পর্ব ৪৬। গান্ধীনগরে রাত্রির কবিই প্রথম বিদ্রুপাত্মক তেতো হাসি এনেছিলেন বাংলা কবিতায়

পর্ব ৪৫। নাটকের মহলা পছন্দ হলে তবেই তিস্তাপারের বৃত্তান্তর অনুমতি দেবেন, বলেছিলেন দেবেশ রায় 

পর্ব ৪৪। নিজের বইপত্র বিক্রির বিবরণ দেখে হতাশ হয়েছিলেন দেবেশ রায়

পর্ব ৪৩। থ্রিলার, রহস্য-রোমাঞ্চ কিংবা ক্রাইম স্টোরি অনেক দিন ধরেই বইপাড়ায় ‘সুপারহিট’

পর্ব ৪২। অলংকরণ বা প্রচ্ছদশিল্পীদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা নেই, সখেদে চিঠি লিখেছিলেন নারায়ণ সান্যাল

পর্ব ৪১। রাস্কেল, পাষণ্ড পণ্ডিত, প্রবঞ্চক, বিশ্বাসঘাতক– নারায়ণ সান্যালের বইয়ের নাম নিয়ে প্রবল আপত্তি ছিল আমার!

পর্ব ৪০। সিগারেট ঠোঁটে রথীন্দ্রনাথের ছবি প্রচ্ছদে যাওয়া নিয়ে উঠেছিল প্রবল আপত্তি!

পর্ব ৩৯। শান্তিনিকেতন থেকে কলেজ স্ট্রিট, প্রুফ আদান-প্রদানে সহায়ক ছিলেন বই ব্যবসায়ীরাই

পর্ব ৩৮। পাণ্ডুলিপি জমা দিয়ে সোমেনদা বলেছিলেন, রামকিঙ্করকে নিয়ে এ জাতীয় বই আগে লেখা হয়নি

পর্ব ৩৭। ‘কীর্তির্যস্য’র নাম বদলাতে চেয়েছিলেন ভবতোষ দত্ত

পর্ব ৩৬। কবি-দার্শনিকের বাইরে আরেক রবীন্দ্রনাথকে খুঁড়ে বের করেছিলেন অমিতাভ চৌধুরী

পর্ব ৩৫। ‘শাহজাদা দারাশুকো’ আরও বিস্তারিত লেখার ইচ্ছে ছিল শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের

পর্ব ৩৪। একজন লেখক হিসেবে আমি কি তোমার মনোযোগের যোগ্য নই, অভিমান ভরা চিঠি লিখেছিলেন শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়

পর্ব ৩৩। আমাকে ভাবায়, তারাপদ রায়

পর্ব ৩২। নববর্ষের শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ: লেখকদের মন্তব্যের খাতা!

পর্ব ৩১। পরিব্রাজক সন্ন্যাসী তারাপ্রণব ব্রহ্মচারী ভাগ্যিস থিতু হয়েছিলেন সাহিত্যে!

পর্ব ৩০। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কোনও বই আমাকে চাপিয়ে দেননি, লিখেছেন: বিবেচনা করে দেখো

পর্ব ২৯। কবিতাকে শক্তিদা বলতেন ‘জলজ দর্পণ’, তাঁর বেঁচে থাকার অবলম্বন

পর্ব ২৮। পিঁপড়ে কালিতে চুবিয়ে সাদা পাতায় ছাড়া হয়েছে, এমন পাণ্ডুলিপি ছিল বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের!

পর্ব ২৭। নিজস্ব ঈশ্বরভাবনা থাকলেও শঙ্কু মহারাজের লেখার মূল বিষয় ছিল মানুষের আলো-আঁধারি জীবন

পর্ব ২৬। বাংলাদেশে পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও একুশে বইমেলায় কখনও স্টল পাইনি

পর্ব ২৫। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি মুহূর্তের রক্ত-ঘাম-হাসি-কান্নার এক জীবন্ত দলিলচিত্র ছেপেছিলাম

পর্ব ২৪। রাখাল ছেলে যেমন বাঁশি বাজায়, আমিও তেমন নিজের খুশিতে লিখি, বলেছিলেন যাযাবর

পর্ব ২৩। রয়্যালটি-মুক্ত বইয়ের ওপর প্রকাশকদের ঝোঁক চোখে পড়ছে বইমেলাতেও

পর্ব ২২: শেষমেশ রেগে গিয়ে আমাকে চিঠিই লিখে ফেলেছিলেন শঙ্খ ঘোষ!

পর্ব ২১: ৩০০০ কপি বিক্রির মতো জীবিত বা মৃত লেখক আর হয়তো নেই

পর্ব ২০: কম বয়সে আমাদের রোববারের আড্ডা ছিল ২৮ নম্বর প্রতাপাদিত্য রোড, আশুদার বাড়িতে

পর্ব ১৯: ‘লেখা বড় হচ্ছে’ অভিযোগ আসায় খুদে হাতের লেখায় পাণ্ডুলিপি দিতেন প্রবোধবন্ধু অধিকারী

পর্ব ১৮: দু’বছরের মধ্যে সংস্করণ না ফুরলে অন্য জায়গায় বই ছাপার চুক্তি ছিল শরদিন্দুর চিঠিতে

পর্ব ১৭: পূর্ণেন্দু পত্রীর বাদ পড়া প্রচ্ছদ ও দিনেশ দাসের কবিতার শ্রেষ্ঠ দিনগুলি

পর্ব ১৬: সব প্রকাশনার যাবতীয় বইয়ের হদিশ পাওয়া যেত ‘সম্মিলিত গ্রন্থপঞ্জী’তে

পর্ব ১৫: নিছকই একটা পত্রিকা নয়, ‘কলেজ স্ট্রীট’ আমাদের আবেগ

পর্ব ১৪: খুদে পাঠকদের জন্য মিনিবই তৈরির কথা প্রথম ভেবেছিলেন অভয়দা

পর্ব ১৩: কয়েকটি প্রেসের গল্প

পর্ব ১২: দীর্ঘায়ু বই ও আইয়ুব পরিবার

পর্ব ১১: প্রেমের নয়, অপ্রেমের গল্প সংকলনের সম্পাদনা করেছিলেন সুনীল জানা

পর্ব ১০: ছোট্ট অপুকে দেখেই রঙিন ছবিতে ভরা টানটান গল্পের বই করার ইচ্ছে জেগেছিল

পর্ব ৯: চানঘরে গান-এ সত্যজিৎ রায়ের চিঠি থাকায় ব্যাপারটা গড়িয়েছিল কোর্ট কেস পর্যন্ত

পর্ব ৮: প্রকাশক-লেখকের কেজো সম্পর্কে বুদ্ধদেব গুহর বিশ্বাস ছিল না

পর্ব ৭: পুজো সংখ্যায় না-বেরনো উপন্যাস বই আকারে সুপারহিট

পর্ব ৬: মানবদার বিপুল অনুবাদের কাজ দেখেই শিশির দাশ তাঁর নাম দিয়েছিলেন– ‘অনুবাদেন্দ্র’

পর্ব ৫: সাতবার প্রুফ দেখার পর বুদ্ধদেব বসু রাজি হয়েছিলেন বই ছাপানোয়!

পর্ব ৪: লেখকদের বেঁচে থাকার জন্য অনেক কিছুই লিখতে হয়, প্রফুল্ল রায়কে বলেছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র

পর্ব ৩: পয়লা বৈশাখের খাতায় শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় মজাচ্ছলে লিখেছিলেন, ‘সুধাংশুরা রাজা হোক’

পর্ব ২: বাংলা মাসের সাত তারিখকে বলা হত ‘গ্রন্থতিথি’, বিজ্ঞাপনেও বিখ্যাত ছিল ‘৭-ই’

পর্ব ১: সত্তরের উথাল-পাথাল রাজনৈতিক আবহাওয়ায় আমি প্রকাশনার স্বপ্ন দেখছিলাম